ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র চলছে; তা রুখতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
আওয়ামী লীগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার জন্য যত ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সেসব সামষ্টিকভাবে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সোমবার দুপুর ২টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ তার ফেইসবুকে লাইভে এসে এসব কথা বলেন।
‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শক্তির উত্থান ও পুনর্বাসন ঠেকাতে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই’ এই ক্যাপশন দেওয়া হয় ওই পোস্টের।
হাসনাত আবদুল্লহ বলেন, “প্রিয় দেশবাসী, আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন যে, ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনার যে সংবিধান রয়েছে, সেই সংবিধানের রাষ্ট্রপতি (মো. সাহাবুদ্দিন) উনি কিছুক্ষণ আগে বিবৃতি দিয়েছেন যে…ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনা যে দেশ থেকে পালিয়েছে তার কাছে কোনও পদত্যাগপত্র জমা দেয়নি।
“আমরা দেখেছি গতকাল (রবিবার) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আবার পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন ধরনের পায়তারা করেছে এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের যে পতিত আত্মারা রয়েছে, তারা বিভিন্নভাবে জড়ো হওয়ার পায়তারা করছে। আপনারা যদি প্রত্যেকটি ঘটনাকে একত্রিত করার চেষ্টা করেন, তাহলে দেখবেন আওয়ামী লীগ আবার পুনর্গঠিত হয়ে এই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠিত করার চেষ্টা করছে।”
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতন হয়—সেই কথা স্মরণ করিয়ে দেন এই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি ফেইসবুক লাইভে বলেন, “প্রিয় দেশবাসী, ৫ আগস্টের পূর্বে আমাদের সবার একটি পরিচয়ে আমরা সবাই একত্রিত হয়েছিলাম, সেটি হচ্ছে আওয়ামী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের সবার পরিচয় ছিল, আমরা ছিলাম মজলুম, আওয়ামী লীগ ছিল জালিম।
“জালিমের বিরুদ্ধে মজলুম হিসেবে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম ৫ আগস্টের পূর্বে। কিন্তু ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে আমরা নিজেরা নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে আমরা পৃথক হয়ে গিয়েছি। যার কারণে, যার ফলশ্রুতিতে এই ধরনের গ্যাপ ক্রিয়েট হয়েছে। এই গ্যাপ ক্রিয়েটের জায়গাটিতে আবার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আবার তার পুনর্বাসনের ছক কষছে।”
আওয়ামী লীগের গত ১৬ বছরের শাসনামলে দেশবাসী, বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের যারা নিগ্রহের শিকার হয়েছেন, তাদের দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে ৫ আগস্টের আগের মতো ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান হাসনাত।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাবো এবং যে যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির…যারা গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। আমরা আপনাদের কাছে আহ্বান জানাব, নিজ নিজ দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে, আমরা ৫ আগস্টের পূর্বে যেভাবে মজলুম হিসেবে জনতার কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিলাম, ফ্যাসিস্ট খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জারি করেছিলাম এবং নিজেদের
এই জালিমের বিরুদ্ধে আমরা মজলুমের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছিলাম…এই আওয়ামী লীগকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করার জন্য এবং আওয়ামী লীগকে স্থায়ীভাবে সমূলে উৎপাটনের জন্য শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে একত্র থাকতে হবে।
“আমরা যদি নিজেদের দলীয় স্বার্থে এবং রাজনৈতিক স্বার্থে আমরা যদি পৃথক হয়ে যাই, সেই সুযোগটি আওয়ামী লীগের পতিত আত্মারা নেবে। সুতরাং আপনাদের কাছে আহ্বান, আপনারা বিভিন্ন জায়গায় যদি খুব মনোযোগের সাথে দেখেন, তাহলে দেখবেন বিভিন্ন জায়গায় চক্রান্ত চলছে, বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগকে আবার পুনর্বাসন করার প্রশাসনিক এবং বিচারিক বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রগুলোকে রুখে দিতে আমাদের জাতীয় ঐক্যের কোনও বিকল্প নেই।”
“সুতরাং যারা আমরা ৫ আগস্টের পূর্বে মজলুম হিসেবে জনতার কাতারে এসেছি, সেভাবে আওয়ামী লীগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার জন্য এবং বাংলার মাটিতে তাদের যেকোনো ধরনের পুনর্বাসন ঠেকাতে আমাদের সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেকোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্ব উঠে আমাদের মজলুম পরিচয়ে মাঠে আমাদের অবস্থান জারি রাখতে হবে। নচেৎ আবার আমরা দেখব আওয়ামী লীগের পতিত আত্মা আবার বাংলাদেশের এই মাটি আবার তারা দখল করে নিয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের জায়গা থেকে আমাদের শক্ত অবস্থা নিশ্চিত করব, যাতে করে আওয়ামী লীগের কোনও পতিত আত্মা আর কোনোভাবেই বাংলাদেশের মাটিতে পুনর্বাসিত না হতে পারে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগকে স্থায়ীভাবে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করার জন্য, বিচারিকভাবে নিষিদ্ধ করার জন্য আমাদের সামষ্টিক যত ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন আমরা সেই পদক্ষেপগুলো সামষ্টিকভাবে নেব। এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং ন্যয্যতা এবং যে দায়-দরদ, ইনসাফের যে বাংলাদেশ…সেই বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠিত করেই ছাড়ব।
“আপনারা ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং আওয়ামী লীগকে স্থায়ীভাবে বিতাড়িত করার জন্যে আমাদের যে সংগ্রাম, এই সংগ্রাম সবসময় জারি থাকবে।”