সর্বসংহারী ‘ডিডিটি’ নিষিদ্ধ করার পর বাংলাদেশ রাষ্ট্র ‘কার্বোফুরান’ নামের বিষটিও নিষিদ্ধ করে। ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ ৮৮তম দেশ হিসেবে কার্বোফুরান বিষ নিষিদ্ধ করেছে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর ভয়াবহ প্রভাবের কারণে এর আগে ৮৭টি দেশ এটি নিষিদ্ধ করে। কিন্তু নিষিদ্ধ হইয়াও, কী নিদারুণভাবে এই বিষ যেন রহিয়াই গেল!
রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করবার পর, ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল সরকার। এর ভেতর যেন কার্বোফুরানের উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণত শেষ হয়। কিন্তু চার মাস বাদেও দেশে ‘নিষিদ্ধ কার্বোফুরান’ ব্যবহৃত হচ্ছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। গ্রামের হাটবাজারের ছোট্ট দোকানগুলিতে এখনও বহাল তবিয়তে আছে কার্বোফুরান। তাহলে এই প্রাণ ও প্রকৃতি সংহারী বিষকে কেন আমরা আটকাতে পারছি না? এই বিষতো গ্রামের কোনও কৃষক উৎপাদন করছে না? উৎপাদন করছে কোনও না কোনও বহুজাতিক কোম্পানি। উৎপাদন নিষিদ্ধ করলে কোনওভাবেই এর বিক্রি ও ব্যবহার সম্ভব নয়।
নিষিদ্ধ বিষ বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ে আমাদের মাঠপর্যায়ের নিয়মিত মনিটরিং খুব দুর্বল। স্থানীয় কৃষিবিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনকে এক্ষেত্রে তৎপর হতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম এলাকা ইউনিয়ন পরিষদের অর্ন্তভুক্ত। এখানে ১৩টি স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে। এসব কমিটিকে সক্রিয় করতে হবে। কারণ তারা গ্রামের জানমাল নিরাপত্তায় দায়বদ্ধ। প্রতিটি এলাকায় বাজার কমিটি আছে, এই কমিটির একটি দায়িত্ব বর্তায় বাজারে কার্বোফুরানের মতো নিষিদ্ধ কোনও বিষ বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখভাল করার। এছাড়া প্রতিটি এলাকায় উপ-সহকারী কৃষিকর্মকর্তা আছেন। তার দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষিব্লকে এই বিষ ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা এটি তাকে দেখতে হবে।
আমরা কোনওভাবেই খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব এভাবে অবহেলা করতে পারি না। তবে কার্বোফুরান নিষিদ্ধ হলেও বোঝা যাচ্ছে এ নিয়ে পাবলিক পরিসরে খুব বেশি আলাপ নেই। গ্রামে গ্রামে, বিদ্যালয়ে কিংবা নাগরিক ও ভোক্তা সমাজ এ বিষয়ে হয়ত খুব বেশি জানেন না। এক্ষেত্রে আমাদের প্রচুর প্রচার চালানো জরুরি। স্থানীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ প্রচারে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা জরুরি। স্থানীয় থেকে জাতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অবশ্যই লোকজ গণযোগাযোগ মাধ্যমগুলো এক্ষেত্রে তৎপর হতে পারে।
বাংলাদেশ নিজের অর্থে পদ্মা সেতু করেছে। বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে বিশালসব স্থাপনা। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের পানে ছুটন্ত এই দেশ একটা ‘নিষিদ্ধ বিষকে’ কেন নিষিদ্ধ করতে পারছে না? রাষ্ট্রের চাইতে কি তাহলে বহুজাতিক কোম্পানির খবরদারি ক্ষমতাবান হয়ে দাঁড়ায়? কোন কোম্পানি এখনও কার্বোফুরানের কাঁচামাল মজুত রেখেছে, এখনও উৎপাদন করছে? তাদেরকে কেন আইন ও বিচারের আওতায় আনা যাচ্ছে না? ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’ ধরনের স্লোগান দেয়া হয়ত সহজ। কারণ এটি অনেক বেশি বিমূর্ত। কিন্তু যার বা যেসব এজেন্সির ভেতর দিয়ে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ প্রতিষ্ঠিত হয় তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো অনেক বেশি কঠিন। যেমন মনস্যান্টো বা কোক-পেপসির সরাসরি বিরোধিতা করা। পদ্মা সেতু বানানো বাংলাদেশ সেই সাহস করেছে, কার্বোফুরান নিষিদ্ধ করেছে। এটি সরাসরি মনস্যান্টো কিংবা সিনজেনটার বাণিজ্য কর্তৃত্বের ওপর আঘাত। কিন্তু প্রশ্ন হলো নিষিদ্ধ করিয়াও কেন নিষিদ্ধ হচ্ছে না কার্বোফুরান?
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা কোনও না কোনও নির্বাচনী অঞ্চলের অর্ন্তভুক্ত। প্রতিটি এলাকার সম্মানিত জনপ্রতিনিধি আছেন। যদি কোনও এলাকায় রাষ্ট্র কর্তৃক নিষিদ্ধ কার্বোফুরান উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার হয় সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব থাকে আইনগতভাবে সেটা বন্ধ করা। কারণ এলাকার জানমাল সুরক্ষায় তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের কৃষিমন্ত্রী ও পরিবেশমন্ত্রী রাসায়নিক বিষবিরোধী। ‘নিষিদ্ধ কার্বোফুরান’ নিষিদ্ধ হতে আমাদের তাহলে ব্যর্থতা কোথায়?
২০২২ সনের ২ ডিসেম্বর ধ্বংস করার জন্য ডিডিটির শেষ চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে ফ্রান্সে যায়। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ শেষমেষ নিজেকে ডিডিটিমুক্ত করতে পেরেছে। যদিও এর ভেতর আমাদের মাটি, পানি ও শরীরে মিশেছে ডিডিটির ভয়াবহ ক্ষতি। এই ডিডিটি দেশের জনগণ আমদানি করেনি। কৃষকেরা উৎপাদন করেনি। মহান উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অতি উচ্চ পর্যায়ের ডিগ্রিপ্রাপ্ত কৃষিবিদদের ফর্দ অনুযায়ী এই বিষ কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল। যার শুরুটা হয়েছিল ষাটের দশকে। উপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসনে। সবুজ বিপ্লব এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। শরীরে, রক্তে, শস্যে, খাবারে, পানিতে ভয়াবহভাবে বিষ মিশে যাওয়ায় বাংলাদেশও বিষের বোতলের গায়ে ‘বিষ বিপদজনক’ লিখতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এখনও খাদ্য উৎপাদনে বিষ ব্যবহার সম্পূর্ণত বাতিল করবার সাহস করেনি বাংলাদেশ। কারণ এই রাসায়নিক কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্বের মাস্তান কোম্পানিরা। আমাদের খাবারে বিষ থাকবে নাকি মধু এই সিদ্ধান্ত তাদের। আমাদের কাজ কেবল হীরক রাজার ঢাকাবাদ্যি বাজানো। কিন্তু বাংলাদেশ তা বাজায়নি। দুর্দান্ত সাহস করেছে। দেশকে ডিডিটিমুক্ত করেছে এবং কার্বোফুরান নিষিদ্ধ করেছে। এর আগে শকুনের মৃত্যুর জন্য দায়ী গবাদিপ্রাণিসম্পদের জন্য বহুল ব্যবহৃত ওষুধ ডাইক্লোফেনাকও নিষিদ্ধ করেছে। মন্থর গতির হলেও এসব নিষেধাজ্ঞার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ কিছুটা হলেও বহুজাতিক কোম্পানির বিষ-উপনিবেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
ষাটের দশকে বৈশ্বিক সবুজ বিপ্লব প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিকাজে এমন সিনথেটিক সার ও রাসায়নিক বিষের ব্যবহার শুরু হয়। এককভাবে কেবলমাত্র মানুষের জন্য খাদ্যউৎপাদন বাড়াতে গিয়ে ফসলের জমিতে লাগাতার বাড়তে থাকে বিষের ব্যবহার। ব্যাপকহারে খাদ্য উৎপাদনের এই বাহাদুরি আমাদের সামনে বরাবরই ‘ক্ষুধামুক্ত পৃথিবীর’ এক মিথ্যা খতিয়ান দাঁড় করায়। ব্যাপক খাদ্য উৎপাদনের এই কাহিনীর পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয় বহুজাতিক কোম্পানির কৃষিবিষ ব্যবসা। খাদ্য উৎপাদনের সাফাই তৈরি করা বৈশ্বিক সবুজ বিপ্লব প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি হওয়া ক্ষয়ক্ষতিকে যতবারই প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হয়, ততবারই এসব জনদাবিকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু পৃথিবী ক্ষুধামুক্ত হয় না। এখনও কেবলমাত্র না খেতে পেরে লাখো লাখো অভুক্ত শিশু এই পৃথিবীতে ঘুমিয়ে পড়ে। একইসাথে খাদ্য উৎপাদনের নামে বিষাক্ত হতে থাকে জমি, জলা ও মানুষের শরীর। কিন্তু নির্দয়ভাবে মুনাফার মেদ জমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর। ষাটের দশকে পৃথিবীতে এত শত নামের রাসায়নিক বহুজাতিক কৃষিবিষ কোম্পানি ছিল না।
আজ বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশিয়ার এক দেশের যেকোনও গ্রামের ভেতরেও বিষ কোম্পানির দোকান আছে। গ্রামের হাটবাজারে আজ আর দেশি চাল, তেল, খই, ছাতু কিংবা বীজ বিক্রি হয় না। বিক্রি হয় বহুজাতিক কোম্পানির প্যাকেটবন্দি বীজ কিংবা বিষ। তবে প্রকৃতি ও মানুষের অসুস্থতা আর কাহিল হয়ে যাওয়া জমির গল্প আর কোনওভাবেই দাবিয়ে রাখা যাচ্ছে না। প্রকৃতি ও সংস্কৃতির ক্ষতগুলো উসকে উঠছে। ঘা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। দুনিয়াজুড়ে আজ এই বিপদজনক রাসায়নিক কৃষি ও জীবাশ্মজ্বালানি নির্ভর খাদ্যব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
মনস্যান্টো, সিনজেনটা, বায়ার, ডুপন্ট, কারগিল, বিএএসএফ-এর মতো বহুাজাতিক কোম্পানির বিরুদ্ধে দীর্ঘ হচ্ছে জনতার মিছিল। জাতিসংঘ কী জাতিরাষ্ট্রসমূহ কৃষিতে প্রশ্নহীনভাবে এতদিন ব্যবহৃত হওয়া সংহারী বিষগুলো একের পর এক নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ কৃষি ও খাদ্য বিষাক্ত হয়ে গেলে ক্ষমতাবাহাদুরেরাও পৃথিবীতে জীবন নিয়ে টিকতে পারবে না। নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে সবাই মরিয়া।
কার্বোফুরান কার্বামেট জাতীয় বালাইনাশক। মার্কিন কোম্পানি এফএমসি কর্পোরেশন ‘ফুরাডন’ নামে এবং জার্মান কোম্পানি বায়ার ‘কিউরেটর’ নামে এই বিষ বিক্রি করে। এটি এমনই মারাত্মক বিষ যে এক চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ বিষ পেটে গেলে মানুষ মারা যেতে পারে। মানুষ ছাড়াও যেকোনও প্রাণির জন্যই এটি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এর এক দানা বিষ খেলে পাখি মরে যেতে পারে। পূর্বে এটি দানাদার ছিল এবং যখন জমিতে ব্যবহৃত হতো তখন না বুঝে পাখিরা এই বিষ গিলে মারা যেত। ১৯৯১ সালে পাখি মৃত্যু কমাতে দানাদার ধরনটি বাতিল করা হয়। এর বহুল ব্যবহার প্রজননস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। হরমোন সমস্যা হয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন কমে যায়। কার্বোফুরান কানাডা, শ্রীলংকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিষিদ্ধ। ২০০৮ সালে আমেরিকা নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়, এমনকি কেনিয়াও। কেনিয়াতে সিংহ মারার জন্য এটি ব্যবহারের কথা জানা যায়।
কার্বোফুরান কেন নিষিদ্ধ করেছে রাষ্ট্র? কিংবা করেও করতে পারছে না। ধান, গম, ভূট্টার মতো দানাদার শস্যের বালাইদমনে এটি ব্যবহৃত হতো। ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ‘মারাত্মক সংহারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্ল্যান্ট প্রটেকশন বিভাগ সূত্রমতে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দেশে ৪২ হাজার টন বালাইনাশক ব্যবহৃত হয়। এর ভেতর প্রায় ১০ হাজার টন হচ্ছে কার্বোফুরান। বহু সূত্র মতে, এটি দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বিষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, দেশে ২৫২টি কোম্পানি কার্বোফুরান আমদানি, বিক্রি ও প্রক্রিয়াজাত করে। ২০১৬ সালেও কার্বোফুরান নিষিদ্ধের আলোচনা উঠেছিল। তবে কয়েকটি বিষ কোম্পানির চাপে নাকি তা পিছিয়ে যায়! ২০২২ সালে এটি নিষিদ্ধের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই বালাইনাশক বিষয়ক জাতীয় কারিগরী কমিটির সভায় ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত কার্বোফুরান ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে (সূত্র: প্রথম আলো, ১৫/৮/২৩)। গণমাধ্যমসূত্র জানায়, দেশে বিষ কোম্পানিদের জিম্মায় ৩ হাজার ২৮৫ টন কার্বোফুরান এবং ৪৮ টন কাঁচামাল ছিল ২০২৩ সালের শেষের দিকে। এসব বিষ পরিবেশসম্মতভাবে নষ্ট করার কোনও ব্যবস্থা দেশে নেই তাই বিক্রি ও ব্যবহার করেই এই বিপদজনক বিষ শেষ করতে হবে। গণমাধ্যম জানায়, এর আগেও কয়েক দফা সরকার এটি নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিলেও কয়েকটি প্রভাবশালী বালাইনাশক কোম্পানির চাপে তা থেকে সরে আসে। এই প্রভাবশালী বিষ কোম্পানি কারা? তারা কিভাবে এক স্বাধীন রাষ্ট্রের ওপর খবরদারি করে? এই ক্ষমতার উৎস কোথায়? আর কেউ না জানুক কার্বোফুরান ব্যবহারকারী দেশের কৃষক সমাজকে এই ক্ষমতার রাজনীতি জানানো জরুরি।
শস্যফসলের জমিনে কার্বোফুরান প্রয়োগের পর এক থেকে দুই মাস এর বিষক্রিয়া ফসলে থেকে যায়। তার মানে কার্বোফুরান প্রয়োগকৃত শস্যফসলের মাধ্যমে খুব সহজেই আমাদের শরীরে এই বিষ ছড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু নিষিদ্ধ করেও কেন নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না কার্বোফুরান? কার্বোফুরানের মতো সংহারী বিষ ব্যবহার করতে কৃষকদের বাধ্য করানো হয়েছে সবুজ বিপ্লব এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। তাহলে কৃষকেরা কেন জানতে পারবে না কেন কার্বোফুরান নিষিদ্ধ হচ্ছে না? একইসাথে এটিও জানা জরুরি কে, কারা এবং কোন সময়ে এই সংহারী বিষ আমদানির অনুমোদন দিয়েছিল রাষ্ট্র। একের পর এক সংহারী বিষের অনুমোদন যেসব ব্যক্তি এবং কর্তৃপক্ষ দেয় তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় প্রকাশিত হওয়া জরুরি। সংহারী বিষের মাধ্যমে দেশের বাস্তুতন্ত্র, প্রাণ-প্রকৃতিতে যে বিষক্রিয়া এবং বিশৃংখলা তৈরি হয়েছে এর দায়ভার তাদেরকেও নিতে হবে।
প্রতিদিন আমাদের খাদ্যের উৎপাদন বাড়ছে। আর এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের অসুস্থতা। শরীর ও মনের জটিল সব অসুখে ভুগছে মানুষ। দেশের যেকোনও প্রান্তের ওষুধের দোকান আর হাসপাতালের সামনে গেলে বোঝা যায় দেশের মানুষ কেমন আছে। কেন বাড়ছে এসব অসুস্থতা। এর অন্যতম প্রধান কারণ আমাদের খাদ্য ও পরিবেশ মারাত্মক বিষচক্রে দূষিত। তাহলে এই দূষণ থামিয়ে আমাদের শরীর ও মনের মুক্তি মিলবে কিভাবে? কেবল আইন করেই নয়, রাষ্ট্রকে রাজনৈতিকভাবে কার্বোফুরান নিষিদ্ধে তৎপর হতে হবে, এখনি।
লেখক: প্রাণ ও প্রতিবেশ বিষয়ক গবেষক ও লেখক।
ই-মেইল: animistbangla@gmail.com