আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসায় পর সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা বনের উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি করেছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের সামনে বুধবার সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘সুন্দরবন বিনাশী সকল ধরনের অপতৎপরতা বন্ধের’ দাবিতে মানববন্ধনে এ কথা বলেন বক্তারা।
মানববন্ধনে বাপা সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে একের পর এক সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা কিনা বনের উপকারের চেয়ে ক্ষতি করেছে বেশি বলে আমরা লক্ষ্য করছি। আর এসব উন্নয়নের কারণে সুন্দরবনের বন, জীববৈচিত্র ও নদীগুলো একে একে ধংসের পথে যাচ্ছে।
সেইসঙ্গে সুন্দরবনকে ধংস করার জন্য আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে, এজন্য সরকারকে এ চক্রান্ত থেকে বের হয়ে এসে সুন্দরবনকে রক্ষার আহ্বানও জানান তিনি।
বাপার সহসভাপতি এম শহীদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন আমাদের জাতীয় পরিচয় বহন করে। বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র জোয়ারভাটার কারণে টিকে আছে। অথচ একে নষ্ট করার পায়তারা করা হচ্ছে।
মানববন্ধনে বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ১৯৭৩ সালে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। কিন্তু উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, বর্তমান সরকার সুন্দরবন কেন্দ্রীক একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প চালু করছে, এতে করে সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে। সুন্দরবনকে ধ্বংস করে এ ধরনের কোনও প্রকার প্রকল্প আমরা সুন্দরবনে দেখতে চাই না।
আরও পড়ুন : ভারাক্রান্ত সুন্দরবনকে চেপে ধরছে পর্যটন
সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাসও একই রকম কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকার সুন্দরবনকে ধংস করার জন্য একের পর এক প্রকল্প চালু করছে। দেশকে পরিচয়বহণকারী এ সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে আত্নঘাতি সব প্রকল্প বাতিল করার দাবি জানান তিনি।
বাপার নির্বাহী সদস্য হাসান ইউসুফ খান দেশের বন ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ সংক্রান্ত যে আইন আছে তার যথাযথ প্রয়োগের দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, সরকার সুন্দরবনকে বাঁচানোর জন্য তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, বরং এ বনকে বিভিন্নভাবে ক্ষতি করার জন্য নেওয়া হয়েছে তথাকথিত উন্নয়নের নামে বিভিন্ন প্রকল্প।
সুন্দরবনকে বাঁচানোর জন্য তিনি সুন্দরবন কেন্দ্রীক সব প্রকল্প বন্ধের দাবি জানান।
সংগঠনের আরেক সদস্য নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, যে সুন্দরবন এ দেশকে আইলা, সিডরের ভয়াবহ থাবা থেকে রক্ষা করে, সেই সুন্দরবনে ধ্বংসের নানামুখী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।
তিনি নতুন পরিবেশমন্ত্রীর ১০০ দিনের কর্মসূচির বাস্তবায়নসহ সুন্দরবনকেন্দ্রিক সব প্রকল্প বন্ধ ও একইসঙ্গে সুন্দরবন দিবসকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়ারও দাবি জানান।
মানববন্ধন থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে সুন্দরবন দিবস হিসেবে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি, এই বনকে ধ্বংসকারী আন্তর্জাতিক চক্রান্ত বন্ধ, বন ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং ক্ষতিকর সব প্রকল্প বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।