বার্সেলোনা ১ : ৪ পিএসজি
(দুই লেগে পিএসজির অগ্রগামিতা ৬ : ৪ )
শুরুটা ছিল স্বপ্নের মত। ১২ মিনিটে পিএসজির বিপক্ষে গোল পায় বার্সেলোনা। কিন্তু একটা লাল কার্ড বদলে দেয় পুরো ম্যাচের ছবি। ২৯ মিনিটে রোনালদ আরাউহো লাল কার্ড দেখলে ১০ জনে পরিণত হয় কাতালানরা।
সুযোগটা নিয়ে পিএসজি তাদের বিধ্বস্ত করে ৪-১ গোলে হারিয়ে। দুই লেগে মিলে ৬-৪ অগ্রগামিতায় চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের টিকিট পেল পিএসজি। আরাউহোর পাশাপাশি বার্সা লাল কার্ড দেখেছে আরও দুটি। এর একটি কোচ জাভি এর্নান্দেস আরেকটি গোলকিপার কোচ দেলা ফুয়েন্তে।
ম্যাচে ফুটবলারদের ৯টি কার্ড দেখান রেফারি। বার্সার খেলোয়াড়রা দেখেন একটি লাল কার্ড ও ৪টি হলুদ কার্ড। আর পিএসজির খেলোয়াড়রা ৪টি হলুদ কার্ড।
প্রথম লেগে বোলতবন্দী থাকলেও ঠিক সময়েই জ্বলে উঠে পিএসজির হয়ে জোড়া গোল কিলিয়ান এমবাপ্পের। একবার করে লক্ষ্যভেদ করেছেন উসমান দেম্বেলে ও ভিতিনিয়া। এই হারে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সেলোনার টানা ১৩ ম্যাচের অপরাজিত থাকার যাত্রাটাও থামল।
২০১৭ সালে শেষ ষোলর প্রথম লেগে পিএসজির কাছে ৪-০ গোলে হেরেছিল বার্সা। ফিরতি লেগে তারা প্রতিশোধ নেয় ৬-১ গোলে জিতে। সেবার বার্সার কোচ ছিলেন লুইস এনরিকে। সেই এনরিকে এবার পিএসজির কোচ।
কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে বার্সার কাছে তার দল হারে ৩-২ গোলে। ফিরতি লেগে এবার এনরিকে প্রতিশোধ নিলেন ৪-১ ব্যবধানে জিতে। প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেই চলেছেন এনরিকে।
লামিনে ইয়ামালের বয়স মাত্র ১৬ বছর। আর কৈশোরেই লামিনে ইয়ামালের পা যেন হীরের ছুঁড়ি। অলিম্পিক স্টেডিয়ামে সেই পায়ের কারুকাজ দেখালেন আরও একবার। ম্যাচের তখন ১২ মিনিট। ডানপ্রান্তে নুনো মেন্দেসকে স্কিল আর গতিতে পেছনে ফেলে ফাঁকায় থাকা রাফিনিয়াকে যে কাট-ব্যাক দিয়েছেন, তাকে বলা যায় প্লেটে খাবার সাজিয়ে দেওয়া।
কাছ থেকে নেওয়া ভলি জালে জড়াতে ভুল করেননি রাফিনিয়া। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার ৬০০তম গোল এটি। পিএসজির বিপক্ষে প্রথম লেগেও ২ গোল করেছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান।
2017: Barcelona did the ‘remontada’ by beating PSG 6-1.
— 𝐌𝐢𝐬𝐭𝐞𝐫 𝐁𝐨𝐚𝐝𝐮 (@MrBoadu) April 16, 2024
2024: PSG do the ‘remontada’ by beating Barcelona 4-1.
One man was behind all this…LUIS ENRIQUE!!! pic.twitter.com/MHAyWTLt4V
২৯ মিনিটে বড় ধাক্কা খায় বার্সেলোনা। ব্রাদলি বারকোলাকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন রোনালদ আরাউহো। কারণ ডিবক্সের বাইরে ফাউলের সময় শেষ খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। বার্সার দাবি ছিল একই সমান্তরালে কুবারসির থাকার কথা। তবে ভিএআর চেকেও বদলায়নি সিদ্ধান্তটা।
আরাউহো লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার পর এলোমেলো হয়ে পড়ে বার্সা। বিরতির আগে পিএসজির বলের দখল বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪.৭ শতাংশে। গোল করার দারুণ কয়েকটি সুযোগ নষ্ট করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, উসমান দেম্বেলেরা।
উসমান দেম্বেলে বল ধরলেই দুয়ো দিচ্ছিলেন বার্সেলোনা সমর্থকরা। বার্সার সাবেক এই খেলোয়াড় চুপ করিয়ে দেন তাদের। শুরুতে পিছিয়ে পড়া পিএসজি দেম্বেলের ৪০ মিনিটের গোলে ফেরায় সমতা। ব্রাদলি বারকোলার বাম প্রান্ত থেকে বাড়ানো পাস ছয় গজ বক্সে পেয়ে জালে জড়ান ফরাসি এই ফুটবলার। এই বারকোলাকে ফাউল করেই লাল কার্ড দেখেছিলেন আরাউহো।
৫৪ মিনিটে ভিতিনিয়ার গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি। আশরাফ হাকিমির কর্নার থেকে বক্সের বাইরে অনেক খানি জায়গা পেয়ে গিয়েছিলেন ভিতিনিয়া। তার জোড়ালো শট ফেরাতে পারেননি গোলরক্ষক আন্দ্রে টের স্টেগেন।
এর দুই মিনিট পর ইলকাই গিনদোয়ানের শট ফিরে আসে পোস্টে লেগে। পাস দিয়েছিলেন রবার্ট লেভানদোস্কি। কিছুক্ষণ পর হতাশায় পানির বোতলে লাথি মেরে রেফারিকে কিছু একটা বলছিলেন বার্সা কোচ জাভি এর্নান্দেস। রেফারি লাল কার্ড দেখান তাকে। সেন্টার ব্যাকের পর কোচকে হারিয়ে তালগোল পাকিয়ে বসে বার্সা।
জোয়াও ক্যানসেলো নিজেদের বক্সে দেম্বেলেকে অহেতুক ফাউল করলে পেনাল্টি পায় পিএসজি। ৬১ মিনিটে সেই পেনাল্টি থেকে গোল করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ৬৫ মিনিটে লাল কার্ড দেখেন বার্সার গোলরক্ষক কোচ দেলা ফুয়েন্তেও।
১০ জন নিয়ে বার্সা চেষ্টা করে ঘুরে দাঁড়ানোর। ৭৩ মিনিটে লেভানদোস্কির শটে পিএসজি গোলরক্ষক দোন্নারুমা অসাধারণ সেভ না করলে গোল পেতেই পারত বার্সা। তবে ৮৯ মিনিটে এমবাপ্পের গোলে ম্যাচে ফেরার সব আশা শেষ হয়ে যায় বার্সার। সমর্থকদের কেউ কেউ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন তখন।
জাভি একটা সময় বার্সায় একইসঙ্গে খেলেছেন এনরিকের সঙ্গে। এরপর ২০১৪-১৫ মৌসুমে খেলেছেন এনরিকের কোচিংয়েও। সেই মৌসুমে শেষবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে কাতালানরা। সেবার তারা জিতেছিল ট্রেবলও। তবে ২০১৯ সালের পর চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল খেলেনি বার্সা। সেই অপেক্ষাটা আরও বাড়াল এনরিকেরই পিএসজি।