নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) তলব করা হয় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমানকে।
রবিবার বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গিয়ে প্রতিমন্ত্রীর দু:খ প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়া জানান তার আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। স্বতন্ত্র হিসেবে ভোট করে হবিগঞ্জ-৪ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের তলবে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী অতি শোকে পাথর হয়ে গেছেন।
প্রতিমন্ত্রীকে দেওয়া ইসির চিঠিতে বলা হয়, ৩১ মে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়াঘাট নামক স্থানে ও চালতাবুনিয়া ইউনিয়নের চালতাবুনিয়া বাজারে ত্রাণ বিতরণ করছিলেন মহিববুর রহমান।
সেই সময়ে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের চতুর্থ ধাপে আগামী ৫ জুন হতে যাওয়া রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মু. সাইদুজ্জামান মামুন, ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী রওশন মৃধা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বেগম ফেরদৌসী পারভীনের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। এমন তথ্য বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
ব্যারিষ্টার সুমন বলেন, “যে একটা ভিডিও দেখানো হয়েছে। ভিডিওটার মধ্যে তিনজনের জন্য ভোট চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কার কথা বলা হয়েছে এখানে কোনও নাম নাই। ভোট চাওয়ার বিষয়টা দুইবার বলা হয়েছে।”
ভিডিওটি ‘যথেষ্ট এডিট করা’ দাবি করে তিনি বলেন, “ভোটের সময় আছে মাত্র দুই-তিনদিন। এটা পাঠাতে হবে ফরেনসিকে।”
ইসির চিঠিতে আরও বলা হয়, উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ২২ অনুযায়ী একজন সরকারী সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আপনার প্রচারণা বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ আচরণবিধি লঙ্ঘন।
ইসির চিঠির জবাবে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের কথা জানিয়ে এই সংসদ সদস্য বলেন, “তার জানার বাইরে যদি কোনও কারণে আইন ভঙ্গ হয় তাহলে তার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকবেন বলেছেন।”
প্রতিমন্ত্রী রাষ্ট্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছে জানিয়ে বলেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি ধন্যবাদ দিয়েছে। কমিশনের কোনও কর্মকাণ্ডের জন্য নির্বাচনের ইমেজ যেন বিতর্কিত না হয়।
প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক না হলে তিনি কেন দুঃখ প্রকাশ করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, “অপরাধ এডমিট করে ক্ষমার বিষয় না। আপনি যে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছেন। আমি প্রচারণায় যাইনি। গিয়েছিলাম ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকায়। আমার মাথায় নির্বাচনের আইন ছিলো না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আইনের ব্যতয় ঘটাইনি।”
ব্যারিস্টার সুমন যখন কথা বলছিলেন তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুমন বলেন, “উনি আসলে অতি শোকে পাথর হয়ে গেছেন। ওনার মত একজন ভদ্রলোকের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ। আর কথা বইলেন না।”
এদিনের শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করায় রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. সাইদুজ্জামান মামুন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রওশন মৃধা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বেগম ফেরদৌসীর প্রার্থীতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।