সরীসৃপ প্রাণী কুমিরের চলাচল জলে, তা কে না জানে। তবে মাঝেমধ্যে এরা ডাঙায় উঠে এসে শহরের আনাচে-কানাচে চলাফেরা করে। ইচ্ছে হলো তো বাড়ির ছাদটা ঘুরে যায়। পার্কের নির্মল বায়ু সেবন করে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখার লোভ সংবরণও কখনও কখনও নেহায়েতই কঠিন হয়ে পড়ে।
এমন স্বাধীনচেতা নির্ভীক কুমিরের দেখা মেলে ভারতের গুজরাট রাজ্যের বরোদা শহরে।
সেখানে মোটামুটি সারা বছরই বিশ্বমিত্রী নদীর মায়া সাময়িক সময়ের জন্য ত্যাগ করে কুমিরগুলো শহরের ভেতরে চলে আসে। কর্তৃপক্ষ তখন তাদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আবার নদীতে পাঠিয়ে দেয়।
ডাঙায় কুমিরগুলোর এমন নিঃসংকোচ চলাচলের ফলে যেটা হয়েছে, এবারের বর্ষাকালে বরোদার বাসিন্দাদের বিশ্বমিত্রী নদীর উপচে পড়া পানির পাশাপাশি এসব লোকালয়প্রেমী কুমিরগুলোকেও জুঝতে হচ্ছে।
গত টানা পাঁচদিনের প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া বরোদা শহরের এখন এমনই পরিস্থিতি।
এনডিটিভি জানিয়েছে, বরোদার ভেতরে বয়ে চলা বিশ্বমিত্রী নদীর পানি প্রবল বর্ষণে উপচে পড়ায় আবাসিক এলাকাগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে বন্যা দেখা দিয়েছে।
বাসিন্দারা যখন বন্যার পানি থেকে নিজেদের রক্ষায় ব্যস্ত, সেই সময় তারা আবিষ্কার করলেন, বিশ্বমিত্রী নদীর কুমির এই দুঃসময়ে আবার বরোদার পথেঘাটে, পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো কোনোটি আবার ঘরের ছাদে উঠে বসে আছে। বরোদার মহারাজা সায়াজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়েও তারা ঢুঁ মারছে।
এসব কুমির ১০ থেকে ১৫ ফুট লম্বা।
বরোদার এক কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, গত ৫ দিনে ১০টির মতো কুমির উদ্ধার করেছে তারা।
বার্তা সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, “১০টির মধ্যে ২টি কুমির নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৮টি আমাদের কাছে আছে। নদীর পানি নেমে গেলে সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে।”
যে নদীর পানিতে গোটা বরোদা শহর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, সেই বিশ্বমিত্রীতে মাগার প্রজাতির ৩০০টির মতো কুমির আছে। এই প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম ক্রোকোডিলাস প্যালাসট্রিস। সুদূর ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে শুরু করে ভারতীয় উপমহাদেশের জলাভূমি, নদী, হ্রদ ও কৃত্রিম পুকুর এদের আবাসস্থল।
বর্ষা মৌসুমে বরোদার বন্যাপ্লাবিত এলাকায় বিশ্বমিত্রী নদীর কুমিরের ব্যাপক সমাগম ঘটে জানিয়ে বন কর্মকর্তা করণসিং রাজপুত পিটিআইকে বলেন, “সারা বছরই বিশ্বমিত্রী নদীতীরের পার্শ্ববর্তী আবাসিক এলাকা থেকে কুমির উদ্ধার করা হয়। বর্ষাকালে এই সরীসৃপের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়।”
তিনি জানান, দুই মাস আগে জুনে চারটি কুমির শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করে নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরের মাসেই এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২১।
এদিকে, ৫ দিন ধরে বিরামহীন বৃষ্টিতে নাজুক হয়ে পড়েছে গুজরাটের পরিস্থিতি। সেখানকার ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার জানিয়েছে, এই সময়ে বর্ষণসংশ্লিষ্ট ঘটনায় রাজ্যে কমপক্ষে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বৃহস্পতিবার গুজরাটের ১ হাজার ৭৮৫ জন পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা হয়। আর ১৩ হাজার ১৮৩ জনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।