Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

কথা বললেন না, কাঠগড়ায় কাঁদলেন সুমন

কড়া পুলিশি পাহারায় ব্যারিস্টার সুমনকে নেওয়া হয় সিএমএম আদালতে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
কড়া পুলিশি পাহারায় ব্যারিস্টার সুমনকে নেওয়া হয় সিএমএম আদালতে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

শুনানিতে তর্ক-বিতর্ক আর যুক্তি উপস্থাপনই যার পেশা, সেই তাকেই কাঠগড়ায় দেখা গেল নিশ্চুপ অবস্থায়। কোনও কথা না বলে, কেবল চোখের পানি ফেললেন পুরোটা সময়। এজলাস থেকে বের করে কারাগারে নেওয়ার সময় চারপাশ থেকে ভেসে আসা নানা কথারও দেননি জবাব।

মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের একটি এজলাসে এমন দৃশ্যের অবতারণা করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যিনি ব্যারিস্টার সুমন নামেই পরিচিত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে যুবদলের এক নেতাকে হত্যাচেষ্টা মামলার তিন নম্বর আসামি তিনি। সেই মামলাতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন গতরাতে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাজির করা হয় আদালতে। বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাকে এজলাসে তোলা হয়।

যুবদল নেতা ও মিরপুরের বাঙালিয়ানা ভোজ রেস্তোরাঁর সহকারি বাবুর্চি হৃদয় মিয়াকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় সায়েদুল হকের ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। ঢাকার মহানগর হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে আসামির পক্ষে করা হয় জামিন আবেদনও।

এজলাসে তোলার সময় ব্যারিস্টার সুমনের মাথায় পরানো ছিল পুলিশের হেলমেট। সেসময় তার চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি ঝরছিল। কক্ষে উপস্থিত বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা তাকে দেখে ‘চোর, চোর’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। সেসময় নিরুত্তর ছিলেন সুমন।

হত্যাচেষ্টা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে ব্যারিস্টার সুমন

কিছুক্ষণ পর বিচারক এজলাসে ওঠেন। শুরু হয় রিমান্ড বিষয়ে শুনানি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “এই আসামিকে ফেইসবুকে দেখলাম লন্ডন থেকে কথা বলেছেন। জনগণকে বোঝাচ্ছেন তিনি দেশে নেই। অথচ তিনি বোনের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন।

“কিছু মানুষ আছে তারা প্রকৃত রাজনীতি করে না। কিন্তু মানুষের সাথে ছলচাতুরি ও প্রতারণা করে। মানুষকে ভেলকি দেখিয়ে কাজ হাসিল করে নিতে চায়। সে একজন প্রতারক। সে নিজেকে দাবি করে সেলফি এমপি। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়েও সে নিজেকে সেলফি এমপি বলে। সেলফি দেখিয়ে তো আর এমপি হওয়া যায় না।”

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এলাকায় সায়েদুল হক বিভিন্নভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলেও অভিযোগ করেন পিপি। তিনি বলেন, “বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনে কয়েকটি কালভার্ট বানিয়েছে। এমপি হওয়ার পরে সব চেয়ে দামি গাড়িটা সে আমদানি করেছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় গাড়িটা ছাড়াতে পারেনি। ফেসবুকে মানুষের সমস্যাগুলো তুলে ধরে আস্থা অর্জন করে প্রতারণা করেছে। আসলে এসব ঘটনা আগে থেকে সাজানো। আগে থেকে এসকল ঘটনার সাজিয়ে রাখত, এরপর দলবল নিয়ে ফেসবুকে দেখাত।”

নামের আগে ব্যারিস্টার থাকায় সাধারণ মানুষ তার প্রতারণা ধরতে পারেনি অভিযোগ করে ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “সে কোটা আন্দোলনের সময় সুপ্রিম কোর্টে একটা প্রেস কনফারেন্স করেছে। সেখানে সে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়েছে। ফ্যাসিবাদীদের পক্ষ নিয়ে সেখানে সে বলেছে, পৃথিবীর এমন কোন শক্তি নেই শেখ হাসিনাকে সরাতে পারে। একদিকে সে নিজেকে স্বতন্ত্র দাবি করে এবং অন্যদিকে কোর্টে বক্তব্য দিলে তখন আওয়ামী লীগের পক্ষে বক্তব্য দেয় “

ব্যারিস্টার সুমনের ফেইসবুক থেকে সবশেষ লাইভ ভিডিওর প্রসঙ্গও টানেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

তিনি বলেন, “পুলিশকে ম্যানেজ করে, গ্রেপ্তারের আগে ফেইসবুকে একটা ভিডিও ছাড়ল। তাতে সে বলছে, আদালতে দেখা হবে। এটা করে আদালতে সে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। এটার জন্যও তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় উচিত।”

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যখন এসব অভিযোগ উত্থাপন করছিলেন, তখন ব্যারিস্টার সুমন ছিলেন একেবারে নিশ্চুপ। কোনও প্রতিক্রিয়ায় দেখাননি তিনি। মাঝে মাঝে তাকে কেবল চোখ মুছতে দেখা যায়। শুনানি শুরু আগে প্রায় ৩০ মিনিট কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন সুমন, সেসময়ও কোনও কথা বলেননি।

এরপর সুমনের পক্ষের আইনজীবী মোর্শেদ আলম শাহীন শুনানিতে বলেন, “আমার সিম্পল বক্তব্য। এই আসামির রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের প্রার্থনা করছি। তিনি ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত না। আমরা আসামির জামিন চাচ্ছি। রিমান্ড বাতিল চাচ্ছি।”

দুই পক্ষের শুনানি শেষে ১০ দিনের বদলে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিতে পুলিশকে আদেশ দেন বিচারক। এরপর বিচারক এজলাস ছেড়ে গেলে তখনও ব্যারিস্টার সুমনকে কাঁদতে দেখা যায়। টিস্যু দিয়ে বারবার চোখ মুছছিলেন তিনি।

শুনানি শেষে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় ব্যারিস্টার সুমন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে ফারুকী তাতে সাড়া দেননি।

তখন সুমন বলেন, “মামলার কোনও বিষয়ে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলবো না। রিমান্ড শুনানি ও আদেশ তো হয়েই গেছে।”

এরপরেও ফারুকী কথা না বলে এজলাস থেকে বের হয়ে যান। এসময় ব্যারিস্টার সুমন অন্য আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন “সরি”।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে ফের হাজতখানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত