টি-টোয়েন্টির এই যুগেও টেস্টের আবেদন কমেনি এতটুকু। আরও একবার টেস্ট তার রুপ-রস-গন্ধ নিয়ে হাজির রাঁচিতে। ভারত-ইংল্যান্ডের চতুর্থ টেস্টটা রং বদলেছে ক্ষণে ক্ষণে।
শুরুতে লাগাম ছিল ইংল্যান্ডের। ঘূর্ণি উইকেটে রবিচন্দ্রন অশ্বিন-কুলদীপ যাদবদের স্পিনে ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ১৯২ রান। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সওয়ালের ৮৪ রানের জুটিতে মনে হচ্ছিল সহজে জিততে যাচ্ছে ভারত।
তখনই আঘাত ইংল্যান্ডের স্পিনারদের। বিনা উইকেটে ৮৪ থেকে ১২০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। ধুলো উড়া উইকেটের টার্ন আর শোয়েব বশির-টম হার্টলি-জো রুটদের সামলে শেষ হাসিটা অবশ্য ভারতেরই।
৫ উইকেটের জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-১’এ জিতল ভারত। গত ১০ বছর নিজেদের মাটিতে ১৫০ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের কীর্তি ছিল না ভারতের! সেই অতৃপ্তি দূর হল রাঁচিতে। সেটাও বিরাট কোহলি, জাসপ্রিত বুমরা, মোহাম্মদ শামি, লোকেশ রাহুলদের ছাড়া।
বাজবল যুগে ইংল্যান্ড ২২ টেস্ট খেলে জিতেছে ১৪টি, ড্র ১, হার ৭ ম্যাচে। এই হারের একটি আবার ১ রানে, আরেক ম্যাচে ২ উইকেটে। তবে এতদিন সিরিজ হারেনি নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। ভারতে এসে সিরিজ হারের তেতো স্বাদ পেতে হল প্রথমবার।
রাঁচি টেস্ট জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ধ্রুব জুরেলের। প্রথম ইনিংসে ৯০ করেছিলেন নতুন ধোনিখ্যাত এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। আজ (সোমবার) দল যখন বিপদে তখনই শুভমান গিলের সঙ্গে ধরেন হালটা।
ষষ্ঠ উইকেটে গড়ে তোলেন অবিচ্ছিন্ন ৭২ রানের জুটি। খেলেন ৭৭ বলে ৩৯ রানের ইনিংস। ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন তারার উদয়ই হল রাঁচিতে।
অপর প্রান্তে শুভমান গিলও ছিলেন অবিচল। তিনি অপরাজিত ৫২। ব্রিসবেনে চতুর্থ ইনিংসে ফিফটি করে জেতানো গিল আরও একবার চতুর্থ ইনিংসে দেখালেন নিজের দৃঢ়তা। রান তাড়ায় মাস্টারই হয়ে উঠছেন এই তরুণ।
রাঁচির ঘূর্ণি পিচে দারুণ ভিত এনে দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সওয়াল। ১৯২ রানের জয়ের লক্ষ্যে উদ্বোধনী উইকেটে দুই ওপেনার যোগ করেন ৮৪। জুটিটা ভাঙেন জো রুট। ৪৪ বলে ৩৭ রানে জেমস অ্যান্ডারসনের অসাধারণ ডাইভিং ক্যাচে পরিণত হন জয়সওয়াল।
ওয়ানডেতে ১০ হাজার রান করলেও টেস্টে এতদিন ৪ হাজারের মাইলফলকেই পা রাখা হয়নি রোহিত শর্মার। আজ (সোমবার) ৪ হাজার রান পূর্ণ হয়েছে ভারতীয় অধিনায়কের। তিনি স্টাম্পিং হন জো হার্টলির বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে। শেষ হয় ৮১ বলে ৫ বাউন্ডারি ১ ছক্কায় ৫৫ রানের ইনিংসের।
বিরাট কোহলির জায়গায় ডাক পেয়েছিলেন রজত পাতিদার। কিন্তু নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। সিরিজ জুড়ে ব্যর্থ এই মিডলঅর্ডার আউট ০ রানে। বিনা উইকেটে ৮৪ থেকে ১০০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত।
এরপর হালটা ধরেন রবীন্দ্র জাদেজা ও শুভমান গিল। ৩ উইকেটে ১১৮ রানে লাঞ্চে যায় ভারত। তখনও জয়ের জন্য দরকার ছিল ৭৪ রান। ঘূর্ণি এই উইকেটে সেটাও অনেক দূরের পথ। লাঞ্চের পরই টানা দুই বলে জাদেজা ও সরফরাজ খানকে ফিরিয়ে সেটা ভালোভাবে বোঝান শোয়েব বশির।
৩৩ বলে ৪ রান করা জাদেজা ফুলটেসে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন জনি বেয়ারস্টোর হাতে। পরের বলেই সরফরাজ খানকে ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগে অলি পোপের ক্যাচ বানিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগিয়েছিলেন বশির। ধ্রুব জুরেল হতে দেননি সেটা। এই জুরেলের দৃঢ়তাতেই শেষ পর্যন্ত হারল ইংল্যান্ড।