নিকট অতীতে ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামে এত দর্শক খুব কমই দেখা গেছে ঘরোয়া ফুটবলে। ঢাক-ঢোল, ভুভুজেলা, স্মোক ফ্লেয়ার, ম্যাক্সিকান ওয়েভ, রঙবাহারি ব্যানার, সমর্থকদের আনা পতাকা- ফেডারেশন কাপের ফাইনাল উপভোগ্য করতে কোনও কিছুর যেন কমতি ছিল না দর্শকের।
ম্যাচে এগিয়ে গিয়েও বসুন্ধরা কিংসের কাছে মোহামেডান হেরেছে ২-১ গোলে। যদিও জাহিদ হোসেনের জয়সূচক গোলটি নিয়ে আপত্তি ছিল মোহামেডানের।
যে গোলকে কেন্দ্র করে রেফারিদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে মোহামেডানের ফুটবলারদের। এমনকি ডাগ আউট থেকে কোচ আলফাজ আহমেদও ছুটে গেছেন মাঠে। প্রতিবাদ করেছেন গোল বাতিল করতে। যে কারণে খেলা বন্ধ ছিল প্রায় ১০ মিনিট।
ওই ঘটনায় গ্যালারি থেকে পানির বোতল ও চেয়ারের ভাঙা টুকরো এসে পড়ে মাঠের মধ্যে।
ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট ছিল ১-১ এ সমতা। ইম্যানুয়েল সানডে করেন মোহামেডানের প্রথম গোল। মিগেল ফেরেইরার গোলে সমতায় ফেরে বসুন্ধরা কিংস।
কয়েকদিন আগে কিংস অ্যারেনায় চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে উৎসব করেছে বসুন্ধরা কিংস। তাদের সামনে ছিল ট্রেবল জেতার সুযোগ। বুধবার ফেডারেশন কাপের ফাইনাল জিতে সেই বৃত্তটা পূরণ করেছে তারা। আর এই হারে ফেডারেশন কাপে আবাহনীর সঙ্গে সর্বোচ্চ ১২ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে সাদা কালোদের।
আক্রমণ আর প্রতি আক্রমণে ফাইনালটা উপভোগ্য ছিল। ১৫ মিনিটে মিগেল ফেরেইরার কর্ণার ফিস্ট করেন মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন। আর ২৬ মিনিটে রাকিবের থ্রু থেকে দরিয়েলতন দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল বের করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন খুব ভালোভাবে সেটা ধরে ফেলেন।
৪০ মিনিটে দারুণ সুযোগ পায় মোহামেডান। সোলেমান দিয়াবাতের ব্যাক হিল থেকে সানডের শট ফিস্ট করেন কর্নারের বিনিময়ে মেহেদি হাসান শ্রাবণ।
বিরতির পর কোচ আলফাজ আহমেদ আশরাফুল হক আসিফের বদলে মাঠে নামান শাহরিয়ার ইমনকে। এরপরই যেন আক্রমণে ধার বাড়ে মোহামেডানের।
যদিও ৪৭ মিনিটে তপু বর্মণের ক্রসে সাইড ভলি করেন দরিয়েলতন। সে যাত্রায় গোল হয়নি। আর ৬০ মিনিটে শাহরিয়ার ইমনের শট ফিস্ট করেন বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক শ্রাবণ। এরপর শুধু আক্রমণ আর প্রতি আক্রমণে জমে ওঠে খেলা।
প্রতি আক্রমণ থেকে রবসনের থ্রো, রাকিব সুযোগ নষ্ট করেন। আর মোজাফররভের শট বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক শ্রাবণ ফিস্ট করেন কর্নারের বিনিময়ে।
৬৪ মিনিটে প্রথম মোহামেডান পেয়েছে গোলের দেখা। শাহরিয়ার ইমনের বাড়িয়ে দেওয়া বলে সানডের বাঁ পায়ের আগুনে গোলা শটে ১-০ তে এগিয়ে যায় মোহামেডান।
গোল খেয়ে বসুন্ধরা কিংসের যেন হুশ ফেরে। কোচ অস্কার ব্রুজোন বদলি হিসেবে মাঠে নামান মোরসালিন, ইয়াসিন ও মাসুক মিয়া জনিকে।
এরপর খেলায় গতি আরও বেড়েছে বসুন্ধরা কিংসের। ৭৭ মিনিটে বল নিয়ে বক্সে ঢোকা দরিয়েলতনের শট দারুণ দক্ষতায় কর্ণারের বিনিমিয়ে বাঁচালেন সুজন।
৮০ মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারত বসুন্ধরা কিংস। রবসনের শট সেবার লাগে সাইড পোস্টে! পরের মিনিটে দিয়াবাতে একা বল নিয়ে বক্সে ঢুকেও পারলেন না গোল দিতে। কিন্তু ৮৬ মিনিটে মিগেল ফেরেইরা ম্যাচে ফেরান বসুন্ধরা কিংসকে। মাঝ মাঠ থেকে বক্সে ঢুকে আগুনে গোলার শটে করেন ১-১। ১০৫ মিনিটে–রবসনের শট কর্ণারের বিনিময়ে সেভ করেন সুজন।
কিন্তু ১০৬ মিনিটে জয়সূচক গোল পায় বসুন্ধরা কিংস। মিগেলের কর্ণার থেকে উড়ে আসা বল প্রথম চেষ্টায় ধরতে পারেননি সুজন। ফিরতি বলে প্লেসিংয়ে গোল করেন জাহিদ। বাকি সময়ে আর গোল হয়নি। ম্যাচ শেষ হতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে বসুন্ধরা কিংস।