কি ছিল না একটা ম্যাচে? ১৩টা হলুদ কার্ড। ১টা লাল কার্ড। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শেষ করতে না পারা। আলোক স্বল্পতায় ম্যাচ স্থগিত। ম্যাচের মধ্যে দুই দলের ফুটবলারদের হাতাহাতি। এবং শেষ পর্যন্ত সম্ভবত ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘতম ম্যাচ যেটি এক সপ্তাহে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে আরেক সপ্তাহে।
বলা হচ্ছে চলতি মৌসুমের ফেডারেশন কাপের আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংসের ফাইনালের কথা। যে ফাইনালে নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিট শেষে রেফারি ম্যাচ পরিচালনায় অপরাগতা প্রকাশ করেন।
ফেডারেশন কাপের ফাইনালের অবশিষ্ট ১৫ মিনিটের খেলা শেষে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার আবাহনীকে টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের শিরোপা জিতেছে বসুন্ধরা কিংস। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি ছিল ১-১ গোলে সমতা।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ঝড় বৃষ্টির কবলে পড়ে আলোকস্বল্পতায় ২২ এপ্রিল ফাইনাল অসমাপ্ত রেখে রেফারি সাইমন ম্যাচটি স্থগিত করেন। সেই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছে মঙ্গলবার। সেখানে ৯০ মিনিট ও অতিরিক্ত সময়ের ১৫ মিনিটের পর থেকে খেলা শুরু হয়।
ম্যাচের বাকি সময়ে কোনও দল গোল পায়নি। এরপর টাইব্রেকারেও ছিল নাটকীয়তা। আবাহনীর হয়ে চতুর্থ শট নেন মিরাজুল ইসলাম। তার নেওয়া শট কিংসের গোলরক্ষক মেহেদি হাসান শ্রাবণ ঠেকিয়ে দেন। কিন্তু রেফারি অবশ্য আগেই ফাউলের পতাকা তুলেছিলেন। রেফারির এই সিদ্ধান্ত বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক কোচ নুরুজ্জামান নয়ন মানতে পারেননি। রেফারি সায়মন সানি টাইব্রেকার পর্বে এসেও হলুদ কার্ড দেখান কিংসের গোলরক্ষক কোচকে।
এরপর মিরাজুল আবারও শট নেন। সেই শট অবশ্য শ্রাবণ ঠেকাতে পারেননি। কিংসের হয়ে পঞ্চম ও শেষ শট নিতে আসেন ব্রাজিলিয়ান ড্যাসিয়েল। তার নেওয়া শট জালে ঢুকতেই বসুন্ধরা কিংসের চ্যাম্পিয়ন উৎসব শুরু হয়।
পাশাপাশি ফেডারেশন কাপের কোয়ালিফায়ারে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে হারের প্রতিশোধও নিল। সেই ম্যাচে আবাহনী দশ জন নিয়ে খেলে ম্যাচ জিতেছিল। এই ম্যাচে কিংস দশ জন নিয়ে জিতল।
কোয়ালিফায়ার ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসের কোচ ভ্যালরিউ তিতা গোলরক্ষক জিকোকে নামিয়েছিলেন টাইব্রেকারের আগে। আজ টাইব্রেকারের আগে দুই ফুটবলার পরিবর্তন করেছিলেন। যদিও গোলরক্ষক শ্রাবণের ওপর আস্থা রাখেন। শ্রাবণ তার আস্থার প্রতিদান দেন। আবাহনীর হয়ে দ্বিতীয় শট নিতে আসা নাইজেরিয়ান এমেকার শট ঠেকিয়ে বসুন্ধরা কিংসকে এগিয়ে নেন।
আবাহনীর হয়ে ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল, মাহাদী খান ও মিরাজুল গোল করেন। আবাহনী দ্বিতীয় শট মিস করায় টাইব্রেকারে চাপে ছিল। অন্যদিকে কিংসের জোনাথন, মোরসালিন, তপু ও ইনসান টানা গোল করে আবাহনীর উপর চাপ অব্যাহত রাখেন। ড্যাসিয়েল শেষ শটে গোল করলে আবাহনীর পঞ্চম শট নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি আর। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ফাইনালের সমাপ্তি হলো।
ম্যাচ শেষে ট্রফি নিয়ে উদযাপন তো ছিলই বসুন্ধরা কিংসের। পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন লেখা জার্সি পরে উদযাপন করেছেন ফুটবলার, কোচ ও ক্লাব কর্মকর্তারা।