অবশেষে নতুন মৌসুমের নতুন টুর্নামেন্টে বসুন্ধরা কিংস ফিরেছে ‘কিং হয়ে। মোহামেডানের শুরুর চমক থামিয়ে তারা ৩-১ গোলে সাদাকালোকে হারিয়ে চ্যালেঞ্জ কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা।
ঘরোয়া ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের একমাত্র ভয় মোহামেডান। যত তারকা আর শক্তিশালী দলই হোক কোনো অজানা কারণে সাদাকালোয় সবসময় তাদের বড় অস্বস্তি। নিজেদের বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় পাচঁবারের চ্যাম্পিয়নরা হেরেছে কেবল একটি ম্যাচই, সেটি মোহামেডানের কাছে গত মৌসুমে।
এবার মৌসুম শুরুর ম্যাচেও সেই ভয় পেয়ে বসেছিল বসুন্ধরা কিংসকে। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে টানা তিন ম্যাচ হারে তপু-মিগেলেদের আত্মবিশ্বাস তলানীতে গিয়ে ঠেকেছিল। আত্মবিশ্বাসহীন ও আগোছালো কিংসের ছন্নছাড়া পারফরম্যান্সে শুরুতেই পিছিয়ে।
৭ মিনিটে ওটাই ছিল সাদাকালোর প্রথম আক্রমণ। বাঁদিক থেকে সানডের তুলে দেওয়া বলটি সুলেমানে দিয়াবাতের হেড কিংসের জালে জড়ালে গ্যালারিতে উৎসব শুরু হয় সাদাকালো সমর্থকদের। আরেকবার যেন চমক দিতে এসেছে তারা কিংস অ্যারেনায়।
গোল খাওয়ার পর বসুন্ধরা কিংস জাগার চেষ্টা করেও পারেনি। তাদের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার জোনাথন ফার্নান্দেজ ছাড়া কাউকে খুব সপ্রতিভ মনে হয়নি অন্তত প্রথমার্ধে। তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছিলেন না আনফিট ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মিগেল। আর নতুন আসা জারেদ খাসা শুধু প্রতিপক্ষের বক্সের ওপরে ঘোরাঘুরি করছিলেন। তাই ৪৫ মিনিটে দাগ কাটার মতো কোনো পারফরম্যান্স নেই কিংসের।
কিন্তু এই দলটির পরের অর্ধে জাদুকরী রূপান্তর হয়েছে। পাসগুলো ঠিকঠাক হচ্ছে, অ্যাটাকিং থার্ডে হানা দিচ্ছে, গোলের সম্ভাবনা তৈরি করছে। দায় মোহামেডানেরও আছে, শুরুর ওই গোল ধরে রেখেই তার ম্যাচ জেতার কৌশল নিয়েছিল। রক্ষণে মনোযোগী সাদাকালোর সুবাদে কিংস পেয়েছে খেলার জায়গা, এরপর চূড়ান্ত দাপট দেখিয়ে ৩ গোল করে বদলে দিয়েছে ম্যাচের চরিত্র।
৫০ মিনিটে মিগেলের বাড়ানো বলে প্রথমে সুযোগ নষ্ট করেন খাসা। মিনিটে আটেক বাদে ওই ব্রাজিলিয়ানের বানিয়ে দেওয়া বলে ফাহিমও পারেননি লক্ষ্যভেদ করতে। এরপরই মাঠে স্মোক ফ্লেয়ার ছুঁড়ে মারলে খেলা বন্ধ থাকে ৯ মিনিটে।
আবার খেলা শুরু হলে সাদাকালোকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৭৩ মিনিটে মিগেলের কর্ণার কিকে তপুর ডান পায়ের চমৎকার ফ্লিকে ম্যাচে ফেরে বসুন্ধরা কিংস। এরপর মাঠে পুরো কর্তৃত্ব উজ্জিবীত কিংসের। একের পর এক আক্রমণ করে তারা কোণঠাসা করে ফেলে সাদাকালোকে। ৮১ মিনিটে প্রথম গোলের অ্যাসিস্ট মিগেলের পায়ে হয় আরেক গোলের সূত্রপাত।
ডানদিক থেকে তার পাঠানো ক্রসে ফাহিমের দুর্দান্ত ভলিতে তারা লিড নেয়। বাংলাদেশী উইঙ্গারের পায়ে দেখার মতো এক গোল। গায়ে এক ডিফেন্ডার লেগে থাকলেও শূন্যে ভেসে তিনি ভলিতে লক্ষ্যভেদ করেন।
শেষপর্যন্ত আনফিট মিগেলে দামাসানোই হয়ে গেছেন চ্যালেঞ্জ কাপের নায়ক। দুই গোল করানোর পর তার বিখ্যাত বাঁ পায়ের কীর্তিতে মোহামেডানের কফিনে শেষ পেরেকটি পোঁতা হয়েছে। রক্ষণের ভুলের সুযোগ নিয়ে এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড বলটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে নতুন মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের দাপুটে উপস্থিতির ঝলক দেখিয়েছেন।