কে জানতো বসুন্ধরা কিংসের শনিবারের সন্ধ্যাটা হয়ে উঠবে এমন বিষাদময়! কে জানতো ঘরের মাঠের অরক্ষিত দূর্গ এভাবে ভেঙে খানখান হয়ে যাবে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নদের! অবিশ্বাস্য এই কাজটা করে দেখিয়েছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
আরও স্পষ্ট করে বললে এই অসাধ্য সাধন করেছেন মোহামেডানের মিডফিল্ডার মিনহাজুর আবেদীন রাকিব দুর্দান্ত এক গোল করে। চ্যাম্পিয়নদের আঙিনায় এক সাধারণ তরুণের অমন গোল বিস্ফোরণ সাধারণের স্মৃতিতে বেঁচে থাকবে অনেকদিন।
নিজেদের আঙিনায় টানা ৩১ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড অবশেষে ভেঙে গেল বসুন্ধরা কিংসের। শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসকে ১-০ গোলে হারিয়েছে মোহামেডান। সুবাদে সদ্য স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে হারের প্রতিশোধটাও নিয়ে নিল সাদাকালোর। একই সঙ্গে তারা চ্যাম্পিয়নদের হারের বিষাদে ডুবিয়ে জমিয়ে তুলেছে শিরোপার লড়াইটা।
৫ জয় ও ১ হারে ১৫ পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেই বসুন্ধরা। ঠিক তাদের পরেই মোহামেডান, ৪ জয় ২ ড্রয়ে তাদের সংগ্রহ ১৪ পয়েন্ট। মাত্র এক পয়েন্টের ব্যবধানে লড়াইটা দারুন জমেছে বৈকি।
আজকের খেলার ফল
বসুন্ধরা কিংস – : ১ মোহামেডান |
ফর্টিস এফসি ২: ২ ব্রাদার্স |
চট্টগ্রাম আবাহনী ২: ০ শেখ জামাল ধানমন্ডি |
প্রিমিয়ার লিগে এবারের মৌসুমে এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ম্যাচ হয়েছে ৬টি। এর মধ্যে আগের ৫টিতেই জিতেছে বসুন্ধরা কিংস। আগের মৌসুমেও লিগের শেষ ৫ ম্যাচে ছিল অপরাজিত।
মোহামেডান রক্ষণ চীনের দেওয়াল
আকাশে উড়তে থাকা বসুন্ধরা কিংসকে মাটিতে নামাতে কতটা মরিয়া ছিল আলফাজ আহমেদের মোহামেডান, সেটা মাঠে তাদের শরীরি ভাষাতেই বোঝা গেছে।
ম্যাচে মোহামেডানের রক্ষণ যেন চীনের দেওয়াল। শনিবার যেটা ভাঙা সত্যিই দুরুহ ছিল রবসন রবিনহো, মিগেল ফেরেইরা, দোরিয়েলতন গোমেজদের জন্য। মাঝমাঠে সারাক্ষণ একাই খেললেন মোজাফররভ। এই মোহামেডানকে চলতি মৌসুমে যে একাই টেনে নিয়ে চলেছেন উজবেক মিডফিল্ডার। পাশাপাশি মানিক মোল্লা, ইম্যানুয়েল সানডেও মাঝ মাঠে অসাধারণ ফুটবল খেলেছেন।
মোহামেডানের আক্রমণভাগের বড় অস্ত্র সোলেমান দিয়াবাতেকে যদিও বেশিরভাগ সময় বোতলবন্দী করে রাখে বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডাররা।
ম্যাচের নায়ক মিনহাজ
মালির স্ট্রাইকারকে চোখে চোখে রেখেও কিংস শেষমেষ হেরে গেছে মিনহাজের কাছে। ম্যাচ শুরুর আগে অস্কার ব্রুজোন হয়তো কল্পনাতেও আনেননি প্রিমিয়ার লিগের এই আন্ডারটেডেড মিডফিল্ডার এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন।
ম্যাচের প্রথমার্ধে বসুন্ধরা কিংসের চেয়ে বেশি আক্রমণে উঠেছে মোহামেডানই। ২২ মিনিটে বিশ্বনাথের ভুল পাস ধরে দিয়াবাতে শট নিয়েছিলেন গোলপোস্টে। কিন্তু অল্পের জন্য সেটি বাইরে চলে যায়।
এরপর বসুন্ধরা কিংস গ্যালারি স্তব্ধ করে দিয়ে ম্যাচের ৩৯ মিনিটে কাঙ্খিত গোলটি করেন মিনহাজ।
দেখার মতো এক গোল ! মাঝ মাঠ থেকে বল ধরে অনেকটা দৌড়ে সামনে এগোন। এরপর বক্সের প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে নেন বাঁ পায়ের নিখুঁত শট। তিন ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে নেওয়া ওই শটটি বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর মাথার ওপর দিয়ে পৌছেঁ যায় জালে। অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে থাকেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরার পুরস্কার জেতা গোলরক্ষক। গোলটি এতটাই অসাধারণ এবং চোখে লেগে থাকার মতো ছিল যে, নিশ্চিতভাবেই থাকবে মৌসুমের সেরা গোলের তালিকায়। স্বাভাবিকভাবে এই গোলের নায়কই জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
গোল শোধে মরিয়া বসুন্ধরা কিংস দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসে। ৫২ মিনিটে সাদের ডান পায়ের দুর্দান্ত ক্রসটি গ্রিুপ করেন গোলরক্ষক সুজন হোসাইন। ৬২ মিনিটেও গোল শোধের সুযোগ মিলেছিল বসুন্ধরা কিংসের। মিগেল ফেরেইরার ক্রসে হেডটা নিয়েছিলেন দরিয়েলতন। কিন্তু ফাঁকা পোস্টে ছেড়ে মারলেন বাইরে!
৭০ মিনিটে দোরিয়েলতনের সঙ্গে মাথা ঠুকে আহত হন সুজন। যদিও এরপর আরও ১৮ মিনিট মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে খেলেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেননি মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে। বদলি গোলরক্ষক সাকিব আল হাসান বাকি সময়টুকু ভালোভাবে সামলে নিয়েছেন।
শেষের ত্রাতা সাকিব
রেফারি ম্যাচের যোগ করা সময় দেন ১৩ মিনিট। বাড়তি সময়ে মোহামেডানকে মরণকামড় দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। কিন্তু কখনও রবসনের শট ফিস্ট করে, কখনও মিগেল ফেরেইরার শট ঠেকিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন সাকিব। ম্যাচের শেষ ভাগে তো টানা তিনটি শট সেভ করেন এই গোলরক্ষক। এরপর বাজে শেষ বাঁশি। আলো ঝলমলে কিংস অ্যারেনা এই প্রথম অচেনা নীরবতায় মুষড়ে পড়ল। ওদিকে তখন সাদা কালো পতাকা নিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে মোহামেডান।
দিনের অন্য ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনী ২-০ গোলে হারিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে। আর ব্রাদার্স ইউনিয়নের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে ফর্টিস এফসি।