ভাষার মাসে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বসুন্ধরা কিংসের। প্রিমিয়ার লিগে বরাবর যে জার্সি পরে খেলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা, রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির বিপক্ষে শুক্রবার সেটা পরেনি। রবসন রবিনহো, বিশ্বনাথ ঘোষদের জার্সিতে নামগুলো ছিল বাংলায়। শুধু নামই নয়, জার্সির নম্বরও ছিল বাংলাতে। জার্সিতে আঁকা ছিল শহীদ মিনার। ছিল বাংলা বর্ণমালা।
এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগের দিনে দারুণ একটা জয় পেয়ে মাঠ ছেড়েছে অস্কার ব্রুজোনের দল। শুরুতে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফিরেছে বসুন্ধরা কিংস। ঘরের মাঠে রহমতগঞ্জকে হারিয়েছে ৪-১ গোলে। বসুন্ধরা কিংসের ১টি করে গোল করেছেন রাকিব হোসেন, মিগেল ফেরেইরা, দরিয়েলতন গোমেজ ও রবসন রবিনহো। রহমতগঞ্জের একমাত্র গোলটি আর্নেস্ট বোয়াটেংয়ের।
এই জয়ে ৮ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরেই রইল বসুন্ধরা কিংস। ৮ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে সাতে রহমতগঞ্জ।
বসুন্ধরা কিংস ৪: ১ রহমতগঞ্জ |
ফর্টিস এফসি ২: ১ বাংলাদেশ পুলিশ |
রহমতগঞ্জ এবারের মৌসুমে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে চলেছে। মাঝারি মানের দল গড়েও এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত লিগের একমাত্র দল হিসেবে ছিল অপরাজিত। টানা ৭ ম্যাচ ড্রয়ের পর অবশেষে শুক্রবার তাদের হারের স্বাদ দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস।
অথচ ম্যাচের শুরুর ১০ মিনিটে গোল করে অন্য কিছুর আভাসই দিচ্ছিল রহমতগঞ্জ। বসু্ন্ধরা কিংস থেকে রহমতগঞ্জে যাওয়া সুশান্ত ত্রিপুরা বক্সের বাইরে থেকে নেন ফ্রি কিক। আর্নেস্ট বোয়াটেংয়ের দারুণ হেডে বল ঢুকে যায় জালে। বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদি হাসান শ্রাবণ চেয়ে চেয়ে দেখেন।
কিন্তু গোল দিয়ে যেন মৌচাকেই ঢিল মারল রহমতগঞ্জ! এরপর একের পর এক আক্রমণ বসুন্ধরা কিংসের। রবসন, রাকিব, মিগেল, দরিয়েলতনের আক্রমণগুলো সামলাতে জেরবার হয়েছে রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডাররা।
২২ মিনিটে রাকিবের হেড অল্পের জন্য বাইরে যায়। ক্রসটা দারুণ ফেলেছিলেন রবসন। কিন্তু রাকিব ফাঁকা পোস্টে বলটা মাথায় রাখতে পারেননি। এরপর সেই রাকিবই ত্রাতা হয়ে প্রথম গোলটি করেন।
বক্সের বাইরে থেকে একের পর এক আক্রমণ। তেমনই একটা আক্রমণ থেকে মাসুক মিয়া জনির পায়ে যায় বল। তিনি বাড়িয়ে দেন রাকিবকে। দারুণ শটে রাকিব করেন ১-১। মাঠের বাঁ প্রান্ত দিয়ে রবসন বারবার ক্রস ফেলছিলেন, কিন্তু তাকে আটকানোর মতো কেউ ছিল না।
২৯ মিনিটে ২-১ হতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্য দরিয়েলতনের। বক্সে ঢোকা দরিয়েলতনকে আটকাতে এগিয়ে আসেন রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক নাঈম। বল তার মাথার ওপর দিয়ে জালে জড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু দৌড়ে এসে গোললাইন সেভ করেন সুশান্ত ত্রিপুরা। বিরতির আগে দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে তৈরি হয় তুমুল উত্তেজনা। সুশান্তকে ঘাড় টেনে ধরে ফেলে দেন মিগেল ফেরেইরা। খেলাও বন্ধ থাকে কয়েক মিনিট। কিন্তু রেফারি নাসির উদ্দিন কাউকেই কোনও কার্ড দিলেন না! পরের মিনিটেই আবার মিগেল বক্সে ঢোকেন বল নিয়ে। এবারও গোলরক্ষক নাঈম বেরিয়ে আসেন জায়গা ছেড়ে। এবার রহমতগঞ্জকে গোল লাইন সেভ করেন রাজন হাওলাদার।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও আক্রমণাত্মক খেলেছে বসুন্ধরা কিংস। ৫৫ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে অসাধারণ গোল করেন মিগেল। মানব দেওয়াল ফাঁকি দিয়ে রংধনু শটটি ঢোকে জালে (২-১) । ম্যাচের যোগ হওয়া সময়ে হয়েছে দুটি গোল।
৯৪ মিনিটে গোলের যোগানদাতা ছিলেন মিগেল। ৪ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে বল বাড়িয়ে দেন দরিয়েলতনকে। আলতো টোকায় দরিয়েলতন করেন ৩-১। লিগে এটি তার অষ্টম গোল। এরপর ম্যাচ শেষের খানিক আগে পেনাল্টি থেকে দলের চতুর্থ গোলটি করেন রবসন।
রাজশাহী স্টেডিয়ামে দিনের অন্য ম্যাচে ফর্টিস এফসি ২-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশকে। ফর্টিসের গোলদাতা পা ওমর ও ভ্যালেরি। পুলিশের গোলটি করেছেন অ্যাডওয়ার্ড।