Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

কিংসের ট্রেবলের সামনে সাদা-কালো দেয়াল

Preview_logo-03
[publishpress_authors_box]

উৎসবটা বসুন্ধরা কিংস রঙিন করেছিল ১৮ মে রাতে। প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে পেয়ে সেই রাতে কিংস অ্যারিনায় পুড়েছিল আতশবাজি। ট্রেবল জিতে আরও একবার আতশবাজির রঙিন আলোর রোশনাইয়ে উৎসব করতে চায় প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নরা।

৫ মৌসুম দেশের পেশাদার ফুটবলের শীর্ষ স্তরে খেলছে বসুন্ধরা কিংস। এ পর্যন্ত ঘরোয়া ফুটবলের সব শিরোপা নিজেদের শোকেসে তুললেও একই মৌসুমে ট্রেবল জিততে পারেনি। সেই সুযোগ প্রথম তৈরি হয়েছে এবার। এর আগে ২০১২-১৩ মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবলে যে কীর্তিটা একবারই গড়েছিল শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র।

ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে বুধবার ফেডারেশন কাপের ফাইনালে মোহামেডানের মুখোমিুখি হবে বসুন্ধরা কিংস। ম্যাচ শুরু বেলা ৩টায়। বসুন্ধরা কিংসের ট্রেবল জয়ের সামনে বাধার দেওয়াল তুলে দাঁড়িয়ে সাদা-কালো দলটি।      

মোহামেডানকে হারিয়ে ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন বসুন্ধরা কিংসের। ছবি: সংগৃহীত।

ঘরোয়া ফুটবলে এক রকম অজেয় দলই বলা যায় বসুন্ধরা কিংসকে। কিন্তু এই দলটাকেই কখনও কখনও মাটিতে নামিয়েছে মোহামেডানে।

গত মৌসুমের ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালেই বসুন্ধরা কিংস হেরেছিল মোহামেডানের কাছে।

আর এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে প্রথম পর্বে জিতেছে মোহামেডান। ফিরতি লেগে জয় বসুন্ধরা কিংসের।

প্রিমিয়ার লিগে এ পর্যন্ত দু দলের দেখা হয়েছে মোট ১১ বার। এর মধ্যে বসুন্ধরা জিতেছে ৭ বার। ড্র হয়েছে দুই ম্যাচ। আর আবাহনী যা কখনই পারেনি, বসুন্ধরাকে দুবারের হারের স্বাদ দিয়ে সেটা করে দেখিয়েছে মোহামেডান। ফেডারেশন কাপে ৩ বারের মধ্যে ২ বার জিতেছে মোহামেডান। ১ বার জয়ী বসুন্ধরা কিংস। স্বাধীনতা কাপে অবশ্য ২ বারের দেখায় জিতেছে বসুন্ধরা কিংসই।  

পরিসংখ্যান পেছনে ফেলে দুই দলই জয়ে চোখ রেখেছে। ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া ফেডারেশন কাপে ১২ বার চ্যাম্পিয়ন হয়ে  সবচেয়ে সফল দল আবাহনী লিমিটেড। গত মৌসুমে এই আবাহনীকেই হারিয়ে ১১ বারের মতো শিরোপা জিতেছিল মোহামেডান। এই ম্যাচ জিতলে আবাহনীর সঙ্গে কীর্তিটা ছুঁয়ে ফেলবে তারা।

ফেডারেশন কাপের ফাইনালে জিততে মরিয়া বসুন্ধরা কিংস। ছবি: সংগৃহীত।

চলতি মৌসুমে সবচেয়ে সফল দু’দলের লড়াই বলেই এই ফাইনাল নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই সমর্থকদের মধ্যে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যালারি মাতিয়ে রাখতে এই দুই দলের সমর্থকদের জুড়ি নেই। মোহামেডানের দেশজুড়ে আছে বিশাল সমর্থকগোষ্ঠী। গেলো মৌসুমে ফেডারেশন কাপে আবাহনীকে হারানোর দিনে কুমিল্লার গ্যালারিতে সাদা-কালোর আধিক্য আরেকবার ফুটবলের সোনালী সময়ের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়েছিল। ময়মনসিংহের গ্যালারির একাংশ আজও  থাকবে তাদের দখলে। ধারাবাহিক সফলতায় বসুন্ধরা কিংসেরও তৈরী হয়েছে ফ্যান-বেইজ। যেখানেই খেলছে দলটি, সেখানেই তাদের সরব উপস্থিতি। তাই তারাও দ্বাদশ খেলোয়াড়ের দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত।

ময়মনসিংহে আজ মোহামেডান চাইবে গত বছর ৩০ মে কুমিল্লার ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের স্মৃতি ফেরাতে। অবিস্মরণীয় ফাইনালে টাইব্রেকারে আবাহনীকে হারিয়ে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা ঘরে তোলে সাদা-কালোরা। মর্যাদার শিরোপা ঘরে রাখতে মোহামেডানের চেষ্টার কমতি থাকবে না।

মোহামেডান ফেডারেশন কাপের সর্বোচ্চ ১২টি শিরোপা জিততে চায়।

বসুন্ধরা চাইবে গত বছর ১৮ ডিসেম্বরের গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামের শেষ বিকেলের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে। সেদিন মোহামেডানকে হারিয়েই তারা চলতি মৌসুম শুরু করেছিল স্বাধীনতা কাপ শিরোপা জিতে।

১২-র হিসেবে মেলাতে মোহামেডানকে ৩ ফেব্রুয়ারির কিংস অ্যারেনার বিকেলটাও ফেরাতে হবে ময়মনসিংহে। এই মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসকে একমাত্র হারের তেতো স্বাদ দিয়েছিল তারা। নিয়েছিল স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে হারের প্রতিশোধ। একমাত্র হারের সেই জ্বালা বসুন্ধরা সাড়িয়েছে এই ময়মনসিংহেই। ১১ মে মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে নিশ্চিত করে টানা পঞ্চম লিগ শিরোপা।

এবার তাই মোহামেডানের ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। সাদা-কালোদের বদলে দেওয়া কোচ আলফাজ আহমেদ অবশ্য প্রতিপক্ষকে যোজন এগিয়ে রেখে পণ করেছেন শিরোপা স্বপ্ন সত্যি করার। ধারে-ভারে বসুন্ধরা যে তার দলের চেয়ে অনেক এগিয়ে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই।

তবে এ মৌসুমে হওয়া তিন ম্যাচেই বসুন্ধরাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে তার দল। লড়েছে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। তাতে দু’বার হারলেও, এক জয়ে বড় স্বপ্ন দেখার জ্বালানীটা ঠিকই কুড়িয়ে নিয়েছে মোহামেডান। আলফাজ তাই প্রত্যয়ী, ‘মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই মাঠে নামবে। এখানে আর অন্য কিছু বলার নেই। পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই আমরা নামবো। দুই দলের মধ্যে অবশ্যই বসুন্ধরা ফেভারিট।

তবে তাদের সঙ্গে লড়াই করার সামর্থ্য আমাদের আছে। এ জন্য ম্যাচটা যে কেউ জিততে পারে। আমি বলবো ফিফটি-ফিফটি চান্স। কিংসের বিদেশিদের নিয়ে কৌশল তো অবশ্যই থাকবে। ওদের আকটাতে পারলেই ম্যাচটা জিতবো।’

সাদাকালো দলের গোলরক্ষক কোচ সাঈদ হাসান কাননও বলছেন, “এই ম্যাচে দ্বিতীয় কোনও সুযোগ নেই। ভালো খেলতেই হবে। জিততেই হবে।”

বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে এভাবেই গোল উৎসব করতে চায় মোহামেডানের ফুটবলাররা।

আলফাজ যখন রবসন, রাকিব, মিগেল ফেরেইরা, দরিয়েলত গোমেজদের আটকানোর ছক কষছেন তখন বসুন্ধরা কোচ অস্কার ব্রুজোনের সবটুকু মনযোগ নিজেদের খেলোয়াড়দের দিকে। এই স্প্যানিশ জানেন, নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলেই ট্রেবল নিশ্চিত হবে।

ব্রুজোন বলেন, ‘এই পর্যায়ে পৌঁছাতে আমরা পুরো মৌসুম জুড়েই কঠোর পরিশ্রম এবং উপযুক্ত প্রস্তুতি নিয়েছি। নিজেদের সেরা প্রমাণের আরেকটি সুযোগ এটা। নিজেদের ওপর শতভাগ বিশ্বাস আছে। আরও বিশ্বাস আছে আমাদের প্রযুক্তিগত এবং কৌশলগত স্বয়ংক্রিয়তায়, যা আমাদের ফাইনালে সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করতে সহায়তা করবে। ছেলেদের বলেছি হৃদয় দিয়ে, শতভাগ মনযোগ দিয়ে ও সংকল্প নিয়ে খেলতে। ক্লাবের সত্যিকারের লক্ষ্য অর্জনে তাদেরকেই প্রধান ভূমিকাটা নিতে হবে।’

চেনা প্রতিপক্ষ বলেই মোহামেডান নিয়ে অতটা ভাবছেন না তিনি। তবে সতর্ক থাকতেই হবে তাকে।

স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে ২-১-এ জয়ের পর লিগের প্রথমপর্বে ১-০ হারের ধাক্কা সামলাতে হয়েছিল। লিগ শিরোপা নিশ্চিতের ম্যাচে ২-১-এ জিততেও ঘাম ঝরাতে হয়েছে বসুন্ধরাকে। তাই মোহামেডানকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই ব্রুজোনের, ‘প্রতিপক্ষ (মোহামেডান) নিজেদের কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পারফরম্যান্স করে আসছে।

তাদের আছে নিরেট রক্ষণভাগ, সংঘবদ্ধ হয়ে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে এবং দুই প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণে উঠতে চায়। সেট-পিছ থেকে সফলতার হারও তাদের সন্তোষজনক। সব মিলিয়ে আরেকটা কঠিণ ম্যাচ হতে যাচ্ছে।’

বসুন্ধরার ট্রেবল জয় আটকাতে পারলে মোহামেডান বসবে আবাহনীর পাশে। কাজটা কঠিন। তবে অসম্ভব নয়।

এই ম্যাচে নির্দিষ্ট ৫ জন রেফারি যেন বাঁশি না বাজায় তা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে রেখেছে মোহামেডান। তবে এসবের হয়তো দরকার হবে না, যদি এই ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জ্বলে ওঠেন সোলেমান দিয়াবাতে, মোজাফররভরা।   

ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতে পারেন রবসন রবিনহো।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত