দরিয়েলতন গোমেজ হেডে দ্বিতীয় গোলটি করতেই যেন অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেল বসুন্ধরা কিংসের এই মৌসুমের প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা।
শনিবার ময়মনসিংহের শহীদ রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে অলিখিত ‘ফাইনালে’ মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। চ্যাম্পিয়ন দলের দুটি গোল করেছেন দরিয়েলতন গোমেজ। মোহামেডানের ১টি গোল করেন মিনহাজ রাকিব।
এই জয়ে ৩ ম্যাচ বাকি থাকতেই প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হলো বসুন্ধরা কিংস। শুধু তাই নয়, এটা বসুন্ধরা কিংসের টানা পঞ্চম লিগ শিরোপা। এর আগে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে এভাবে টানা পাঁচ বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়নি কোনও ক্লাব।
এই জয়ে ১৫ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট হলো বসুন্ধরা কিংসের। যে পয়েন্ট ছোঁয়ার কোনও সম্ভাবনা রইলো না দুয়ে থাকা মোহামেডানের। ১৫ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট সাদা-কালো দলটির।
জিতলেই শিরোপা, এমন সমীকরণকে সামনে রেখে একাদশে দু’টি বদল আনেন বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। আগের ম্যাচে কার্ডের কারণে খেলতে না পারা সেন্টারব্যাক তপু বর্মণকে জায়গা করে দিতে সরে যেতে হয়েছে দারুণ ফর্মে থাকা বিশ্বনাথ ঘোষকে। পরে অবশ্য ম্যাচের শেষ দিকে রাকিব হোসেনকে তুলে বিশ্বনাথকে মাঠে নামান কোচ।
মূলত রাইটব্যাক বিশ্বনাথকে বেঞ্চে রেখে তার পজিশনে আবাহনীর বিপক্ষে আগের ম্যাচে ভালো খেলা রিমন হোসেনে আস্থা রেখেছেন কোচ। আক্রমণের শক্তি বাড়াতে হোল্ডিং মিডফিল্ডার মাসুক মিয়া জনির জায়গায় একাদশে খেলেন শেখ মোরসালিন। তিন ব্রাজিলিয়ান দরিয়েলতন, রবসন রবিনহো ও মিগেল ফিগেইরার সঙ্গে আক্রমণে যোগ দেন ফর্মে থাকা রাকিব হোসেন ও শেখ মোরসালিন।
এমন আক্রমণের ধাক্কা সামলানো বেশ কষ্টই হয়েছে মোহামেডানের জন্য। যদিও বেশ ক’টি গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন দরিয়েলতন। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে ডান দিক থেকে রিমন হোসেনের ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি অফসাইড ফাঁদ ভেঙে জায়গা করে নেওয়া দরিয়েলতন।
১৩ মিনিটে রবিনহোর সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে বক্সে ঢুকে গড়বড় পাঁকিয়ে ফেলেন এই স্ট্রাইকার। তার ডান পায়ের শট পোস্টের অনেক বাইরে দিয়ে যায়। দুই মিনিট পর ফের হতাশ করেন দরিয়েলটন। বক্সের ভেতর মোরসালিনের আলতো পাসে ডরিয়েলটনের শট লক্ষ্যে থাকেনি।
তবে ১৮ মিনিটে ঠিকই কাজের কাজটি করেন তিনি। মোরসালিনের কাছ থেকে বল পেয়ে মিগেল নিঁখুত থ্রু ঠেলে দেন বক্সে থাকা দরিয়েলটনকে। বক্সের ডান দিক থেকে তার ডান পায়ের শট রোখার সাধ্য ছিলো না মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন হেসোনের।
প্রথমার্ধে তো বলার মতো কোনও আক্রমণই করতে পারেনি মোহামেডান। ২১ মিনিটে উজবেক প্লে-মেকার মোজাফফরভের ভয়ঙ্কর হতে থাকা একটি ফ্রি-কিক শেষ পর্যন্ত পোস্ট উঁচিয়ে বাইরে যায়। ৩৯ মিনিটে মোজাফফরভ বক্সের অনেক বাইরে থেকে ডান পায়ের বাঁকানো শটে পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলেন বসুন্ধরা গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবনকে। একটু অপ্রস্তুত থাকলেও শেষ পর্যন্ত শটটি পাঞ্চ করে রুখে দেন বসুন্ধরার তরুণ গোলকিপার।
পুরো ম্যাচে নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন মোহামেডানের বড় অস্ত্র সোলেমান দিয়াবাতে। তাকে সারাক্ষণ ৩ জন ডিফেন্ডার আটকে রেখেছেন।
দ্বিতীয়ার্ধে মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদ শাহরিয়ার ইমন ও আরিফকে বদলি হিসেবে নামান। এতে আক্রমণের ধার কিছুটা হলেও বাড়ে মোহামেডানের।
যদিও ৫২ মিনিটে কর্ণার থেকে মোরসালিনের উড়ে আসা বলে হেডে দরিয়েলতন নিজের ১৩তম গোল করে বসুন্ধরা কিংসকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে দিলেন।
গোল শোধে মরিয়া মোহামেডানকে ম্যাচে ফেরান রাকিব ৬৬ মিনিটে। দিয়াবাতের কাছ থেকে বল পেয়ে দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে করেন দারুণ একটি গোল। ৭০ মিনিটে সমতায় ফিরতে পারতো মোহামেডান। কিন্তু দিয়াবাতের বাড়িয়ে দেওয়া বলটি শাহরিয়ার ইমন ফিনিশিং করতে পারেননি। শ্রাবণ সে যাত্রায় বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এরপর যোগ হওয়া সময়ে ইম্যানুয়েল সানডের শট অল্পের জন্য পোস্ট ঘেষে চলে যায়।