মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আবারও সংকোচনমূখী মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ অর্থবছরের বাকি সময়েও বাজারে মুদ্রার সরবরাহ কিছুটা কম থাকবে। তবে মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে নতুন পদ্ধতিও হাতে নিয়েছে ব্যাংক খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতির ভঙ্গিগুলি তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান। এ সময় সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে নীতি সুদহার বাড়ানোসহ প্রধান প্রধান কয়েকটি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ সময় গভর্নর বলেন, নীতি সুদহার (রেপো) ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে শুন্য দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। ফলে এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে রেপোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নগদ টাকা ধার করতে ১০০ টাকায় বার্ষিক ৮ শতাংশ করে সুদ গুণতে হবে। এতে ব্যাংকের তহবিল খরচ বাড়লে ঋণের সুদহারও বাড়বে। ফলে বাজারে টাকার সরবরাহ কমে এসে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করবে।
সরকারের বাজেটের লক্ষ্য অনুযায়ী এই মুদ্রানীতি নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে রউফ তালুকদার বলেন, আগামী জুনের মধ্যে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি সরকার ঘোষিত ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে বাজারের মুদ্রা সরবরাহ কমানো হচ্ছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে না নামা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করে যাবে।
গভর্নর বলেন, ‘‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছু ইকোনোমিক ও নন-ইকোনোমিক ফ্যাক্টর রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখছে। অন্য বিষয়গুলো দেখার বিষয়ে নতুন অর্থমন্ত্রীকে অবগত করা হয়েছে। আগামী রবিবার এ বিষয়ে তিনি একটি বৈঠক করবেন বলেও জানিয়েছেন।’’
ঘোষিত মুদ্রানীতি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আগের থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আগে এ খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ শতাংশ।
নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী জুনে সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ। আগের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ শতাংশ।
গত ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২ শতাংশ এবং সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৮ শতাংশ।
নতুন মুদ্রানীতিতে বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান। তবে এ পদ্ধতিতে ডলারের বিনিময় হার কত হবে, তা বলা হয়নি। পরে তা জানানো হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এতে মুদ্রা বিনিময় হার অনেকটা বাজারভিত্তিক হবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর রউফ।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরে অনেকগুলি উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানানো হয় ওই অনুষ্ঠানে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সংস্থাটি।
ঋণ নিতে আইএমএফের শর্তানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহারের করিডর প্রথা চালু, সুদহার বাজারভিত্তিক করা, ডলারের একক দাম নির্ধারণ, রিজার্ভের মোট হিসাবের পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাবায়নসহ নানা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।