বিসিবির নবম বোর্ড সভা নিয়ে আলাচনা ছিল তুঙ্গে। কারণ আলোচ্য সূচীতে ছিল বড় বড় সব বিষয়। সেগুলো নিয়ে সোমবার সভায় বিস্তর আলোচনার পর সিদ্ধান্তও হয়েছে। অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচকের ব্যাপারে দুটো বড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত এসেছে। হয়নি নতুন কোচ চূড়ান্তকরণের কাজটি। সেটিও শীঘ্রই হয়ে যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। তবে যা হয়েছে, তাকে দেশের ক্রিকেটে পরিবর্তনে হাওয়া বলেই ধরে নেওয়া যায়। ফাগুন শুরুর আগেই ক্রিকেটে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া।
নির্বাচক বদল
বোর্ড সভায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল প্রধান নির্বাচক ইস্যু। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়া প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এই দায়িত্ব থেকে। একই সঙ্গে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধান নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু আর সুমনের জায়গায় নেওয়া হয়েছে হান্নান সরকারকে।
২০১৬ সালে প্রধান নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব শুরু করেন নান্নু। এর আগে ২০১১ সাল থেকেই তিনি নির্বাচক পদে ছিলেন। ২০১৬ সাল থেকে নির্বাচকমন্ডলীতে দুই সাবেক অধিনায়ক নান্নু-সুমনের পথচলা। ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত দল ভাল করেছে, সুবাদে পথটাও মোটামুটি মসৃণ ছিল। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর তাদের দুঃসময় শুরু।
ওই আসরে মূল পর্বে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এর আগে তো প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নেয়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে নান্নুর নির্বাচক প্যানেল বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশের ২০২৩ এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ ব্যর্থতায়। দুটো টুর্নামেন্টে কয়েকটি পজিশনে ক্রিকেটার নির্বাচনে সমালোচিত হয়েছিলেন দুজন। দল পারফরম করলে হয়তো পার পেয়ে যেতেন। তা হয়নি বলেই সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তুলোধুনার শিকার তারা। তাই এই দুই জনের পদ হারানো এক রকম অনুমিতই ছিল।
নতুন প্রধান নির্বাচক কে হবেন, তা নিয়ে বিসিবির ভেতরে আলোচনায় ছিল কয়েকজনের নাম। ছিলেন বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা ও কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিমও। তবে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে জানিয়েছেন, “যে কয়েকটা নাম এসেছে, তাদের মধ্যে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নামটা দেখার পর আমাদের মধ্যে তেমন দ্বিধা কাজ করেনি। তিনি আসতে রাজি হবেন কিনা, সেটিই ছিল প্রশ্ন। তিনি রাজি হয়েছেন এবং আমি মনে করি এই মুহুর্তে এই কাজের জন্য তিনিই সেরা।”
নতুন অধিনায়ক
প্রধান নির্বাচকের মতো দলের অধিনায়ক ঠিক করাটও খুব জরুরি ছিল। ২০২৩ বিশ্বকাপের বছরে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব নিয়ে হয়েছিল অনেক নাটক। বছরের শেষ দিকে অন্তর্বর্তীকালীন অধিনায়ক দিয়েই খেলানো হয় দুটি সিরিজ। নাজমুল হোসেন শান্ত ছিলেন নিউজিল্যান্ড সিরিজের অন্তর্বর্তীকালীন অধিনায়ক। শেষমেষ এই ব্যাটারকেই করা হয়েছে তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক।
নতুন অধিনায়ক হিসাবে শান্তর নাম ঘোষণার সময় বিসিবি সভাপতি সাকিব আল হাসানের প্রসঙ্গও টেনেছেন “সাকিব অবশ্যই আমাদের প্রথম পছন্দ ছিল অধিনায়ক হিসাবে, এখনও আছে। কিন্তু তার চোখের সমস্যা এখনও যায়নি। দুর্ভাগ্যবশত তাকে নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করিনি। বিশ্বকাপেরও খুব বেশি দেরি নেই, এই সময়ে যেন দলটা ভালভাবে চলতে পারে; সেজন্য অধিনায়কের নামটা আমরা ঘোষণা করে দিয়েছি। নাজমুল হোসেন শান্ত এক বছরের জন্য আমাদের তিন ফরম্যোটের অধিনায়ক।’’
বোর্ড সভার পর সিদ্ধান্তগুলো জানাচ্ছেন বিসিবি প্রধান। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বিশ্বকাপ ব্যর্থতার তদন্ত জমা
সোমবারের সভায় বিশ্বকাপ ব্যর্থতার তদন্তের বিস্তারিত জানানোর কথা ছিল। সভা দীর্ঘ হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে সেভাবে আলাপ হয়নি। আশার কথা, তদন্ত কমিটি বোর্ড প্রধানের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এই রিপোর্টে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতের জন্য পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। তবে বিস্তারিত জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
ঝুলে আছে সাকিব-তামিম ইস্যু
বিশ্বকাপ তদন্ত রিপোর্টের মতোই ঝুলে আছে সাকিব-তামিম বিবাদ এবং তামিমের জাতীয় দলে খেলা-না খেলার বিষয়টি। দুই তারকার মধ্যে তামিম ইকবালের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন নাজমুল হাসান। তবে সাকিবের সঙ্গে এই ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে পারেননি। বোর্ড প্রধান না পারলেও বিশ্বকাপ তদন্ত কমিটি দুই ক্রিকেটারের সঙ্গেই কথা বলেছেন। এই আলোচনার ভিত্তিতে দুজনের বিবাদের কারণ ও বিবাদ মেটাতে করনীয় রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিপিএল চলাকালীন তামিমের সঙ্গে আরও একবার বসতে চান বিসিবি প্রধান। যেটা খবর, সাকিবের নেতৃত্বে টেস্ট বা ওয়ানডে খেলতে চান না তামিম। এখন সাকিব নেই, তবে কি তামিম ফিরবেন ? বিসিবি প্রধান এই আলোচনাই করবেন দেশের অন্যতম সেরা ওপেনারের সঙ্গে। এই প্রসঙ্গে নাজমুল হাসান বলেছেন, ‘‘প্রথমে জালাল ভাই ও অন্যরা বসবেন তামিমের সঙ্গে। সে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বিপিএল খেলতে আসার পর তারা কথা বলবেন। এরপর আমিও বসব। আশা করি, এই বিপিএল চলাকালীনই সব সিদ্ধান্তগুলো জানাতে পারব।”
অন্যসব সিদ্ধান্ত
গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তগুলো ছাড়াও সোমবারের সভায় ক্রিকেটারদের নতুন চুক্তি অনুমোদিত হয়েছে। গতবারের মতো এবারও চুক্তিতে আছেন ২১ জন ক্রিকেটার। টেস্টের চুক্তি থেকে বাদ পড়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজে নেই তিনি। টি-টোয়েন্টির চুক্তিতে মাহমুদউল্লাহর থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারকে রাখা হয়েছে ওয়ানডেতে।
এছাড়া নতুন কোচ নিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা ও অগ্রগতি হয়েছে। ব্যাটিং ও বোলিং কোচ হিসেবে দুজন বিদেশিকে পছন্দের তালিকায় রেখেছে বিসিবি। তাদের সঙ্গে আর্থিক বিষয়গুলো চূড়ান্ত হলে নাম ঘোষণা করবে বিসিবি।