কথায় আছে আকাশের যত তারা, আইনের তত ধারা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্রের ১৩.২-এর গ ধারায় আছে, ‘‘বিসিবির কোন পরিচালক এক এর অধিক অন্য কোন জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের কর্মকর্তা বা সদস্য হলে বিসিবিতে তার পদ শূন্য হবে।’’
কিন্তু বিসিবির কোনো পরিচালক সব ক্রীড়া ফেডারেশনের অভিভাবক সংস্থা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী হয়ে গেলে কী হবে ? এ ব্যাপারে কিছু লেখা নেই মানে মন্ত্রীর বিসিবির পরিচালক পদে থাকতে কোনো বাধা নেই ! এটাই হলো আইনের ফাঁক। ক্রিকেট বোর্ড এমন নানা আইনে মোড়ানো, যেসবের ফাঁক গলে কি এখনই বিসিবি সভাপতির চেয়ারে বসার সুযোগ আছে মাশরাফি বিন মর্তুজা কিংবা সাকিব আল হাসানের ?
বিসিবির গঠনতন্ত্র কি বলছে
শুক্রবার মাশরাফির প্রসঙ্গ উঠতেই খোদ নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, ‘‘এটা একটা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় আগে আসতে হবে তাকে (মাশরাফিকে)। প্রথমে তাকে কাউন্সিলরশিপ নিতে হবে। কাউন্সিলর হওয়ার পরে আসতে হবে নির্বাচিত হয়ে (পরিচালক হয়ে)। যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে, তারা ঠিক করবে কে সভাপতি হবে। প্রক্রিয়াটা খুব সিম্পল।’’
বিসিবির গঠনতন্ত্রেও তাই আছে। সভাপতি হতে হলে আগে কাউন্সিলর হতে হবে। সেই কাউন্সিলররা নির্বাচন করবেন পরিচালক। আর পরিচালকরা নির্বাচিত করবেন বোর্ড সভাপতি (১৩.২-‘ক’ ধারা)।
কোন পরিচালকের পদ শূন্য হলে ধারা-১৩.৪ অনুযায়ী সাধারণ পরিষদ, অন্য সদস্যদের মধ্য থেকেই বেছে নিবে সেই পদের পরিচালককে।
ক্রীড়া মন্ত্রী হওয়ার পর পাপন বিসিবি সভাপতির পদ ছাড়লেও বোর্ডের বাইরের কারও এই চেয়ারে বসার সুযোগ নেই।
বিসিবি নিয়ম ভাঙ্গায় এই সমস্যা
নতুন সভাপতি কে হবেন, এ নিয়ে গঠনতন্ত্র অনুসরণ করার কথাই বলছেন নাজমুল হাসান পাপন। অথচ বিসিবিই গঠনতন্ত্র মানেনি। মানেনি বলেই মাশরাফি ও সাকিবকে নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন হুল্লোড়।
গঠনতন্ত্রে দুজন সহ-সভাপতি থাকার কথা স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে নেই। ১৩.২-‘ঘ’ ধারা অনুযায়ী, ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পরিষদ পরিচালকদের মধ্য থেকে ২ জন সহ-সভাপতি নির্বাচিত করবে। তার উপধারায় বলা আছে, সভাপতির অনুপস্থিতে তার কর্তৃক মনোনীত যে কোনো এক সহ-সভাপতি দায়িত্ব পালন করবেন।
বিনা নির্বাচনেও পরিচালক হওয়া যায়
বিসিবি নির্বাচনের প্রথম ধাপ হলো বিভিন্ন জেলা, বিভাগ ও ক্লাব থেকে নানা ক্যাটাগরিতে কাউন্সিলর হওয়া। তাদের ভোটেই ২৩ জন পরিচালক নির্বাচিত হয়। বাকি দুই জন পরিচালক নির্বাচিত নয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত।
সর্বমোট ২৫ জনের ভোটে তাদের মধ্যে থেকে একজন সভাপতি নির্বাচিত হবেন। এই হলো বিসিবি নির্বাচনের প্রক্রিয়া।
২০১২ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনীত পরিচালক হয়েই নাজমুল হাসান পাপন বিসিবির সভাপতি পদে বসেন। এখন পরিষদ মনোনীত হিসেবে বিসিবির বর্তমান কমিটিতে আছেন দুই পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুস। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত পরিষদের কোটা খালি নেই। সুতরাং এখানে আটকে যাচ্ছেন মাশরাফি ও সাকিব।
খেলা ছাড়ার বাধ্যবাধকতাও নেই
গঠনতন্ত্র বলছে, ক্রীড়া পরিষদ চাইলে এখন খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন এমন কাউকেও পরিচালক হিসাবে মনোনয়ন দিতে পারে। ঢাকার ক্লাবগুলোও কাউন্সিলর মনোনয়ন করতে পারে বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে , সেক্ষেত্রে কাউন্সিলরকে ক্লাবের সাধারণ পরিষদের সদস্য দেখাতে হবে (ধারা ৯.২-‘ঙ’ )। সুতরাং মাশরাফি ও সাকিবের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। তবে আঞ্চলিক ও জেলা ক্রিকেট সংস্থার কাউন্সিলর হতে গেলে অবশ্য সাবেক ক্রিকেটার কিংবা সংগঠক হতে হবে (ধারা ৯.১ ‘ক’ ও ‘খ’)।
ইজিএম-ই একমাত্র পথ
এই পথটা কঠিন। একপ্রকার অকল্পনীয়। তবে অবাস্তব নয়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের যদি কেউ চায় তাহলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অসম্ভব নয় কিছুই। বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১২.৪ ধারা বলছে, দুটি বার্ষিক সাধারণ সভার মধ্যবর্তী সময়ে ১৫ দিনের নোটিশে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আয়োজনের কথা।
বার্ষিক বা বিশেষ সাধারণ সভায় সাধারণ সদস্যদের (কাউন্সিলর) ভোটে যে কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা যায়। নতুন প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগ করলে ওই সভায় যে কাউকে পরিচালক করে নেওয়া যায়। এভাবে মাশরাফি, সাকিব বা অন্য কারও বিসিবিতে ঢোকার পথ খুলে যায়। এমনকি সভাপতিও হতে পারেন।