ক্রিকেটে পুরুষ ও নারী জাতীয় দল, ওদিকে বয়সভিত্তিক দল ও প্রধান স্টেডিয়াম- একটি দেশের ক্রিকেট কাঠামোর সেরা দিক তো এগুলোই। অদ্ভূতভাবে বাংলাদেশের এই প্রধান জায়গাগুলো লঙ্কান বলয়ে আটকে! খেলাটা বাংলাদেশের হলেও কোচিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব পদ লঙ্কানদের দখলে।
সেটা কিভাবে একটু দেখে নেওয়া যাক। ছেলেদের জাতীয় দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ওদিকে নারী জাতীয় দলের কোচ হাসান তিলকরত্নে। মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রধান কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। আর যুব দলের কোচ নাভিদ নেওয়াজ। অদ্ভূত ব্যাপার হলো, তারা সবাই শ্রীলঙ্কান। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোনও দেশের ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ সব পর্যায়ের দায়িত্বে লঙ্কানদের এমন দাপট নেই।
কারণ খুঁজতে গোয়েন্দা হওয়ার প্রয়োজন নয়। ব্যাপারটা ‘ওপেন সিক্রেট’। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একজন প্রভাবশালী পরিচালকের কারসাজিতেই দেশের ক্রিকেটে লঙ্কানদের দাপট। শ্রীলঙ্কান কোচ-কিউরেটরদের আনতে মোটা অঙ্কের কমিশন পেয়ে থাকেন তিনি। তাই অন্য দেশ থেকে কোচরা এলেও বেশি দিন টিকতে পারেন না। যেকারণে এক বা একাধিক দলের কোচ হিসেবে লঙ্কানদের সবসময়ই দেখা যায় বাংলাদেশে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর বিসিবিতে এসেছে বড় পরিবর্তন। সভাপতির পদ ছেড়েছেন নাজমুল হাসান পাপন। তার জায়গায় নতুন সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন ফারুক আহমেদ। বোর্ডের সর্বোচ্চ পদে বদল আসার পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে কি লঙ্কান বলয় ভাঙবে?
বুধবার (২১ আগস্ট) মিরপুরে বিসিবি সভাপতি হিসেবে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ফারুক এই বলয় ভাঙার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শুরু করেছেন প্রধান কোচ হাথুরুসিংহের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গ টেনে, “হাথুরুসিংহের ব্যাপারে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে আমি যে অবস্থানে ছিলাম এখনও সেই অবস্থানে আছি। আমি এটাও বলেছি যে, আমার টাকা লস হোক কিন্তু ক্রিকেট লস যেন না হয়।”
বিসিবি সভাপতি হওয়ার আগে ফারুক জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে হাথুরুসিংহেকে রাখার পক্ষে নন তিনি। লঙ্কান কোচ বাংলাদেশের ক্রিকেটে ক্ষতি করেছেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
কোচের পর কিউরেটর গামিনির ব্যাপারেও কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি, “গামিনি… আমি তো জানি সে এখন দেশে নেই। আছে কি?” কথাটা শেষ করেই লঙ্কান বলয় তৈরির সিন্ডিকেট ভাঙার ঘোষণা ফারুকের, “সিন্ডিকেটের ব্যাপারে… এই ধরনের কাজ আমি যে ক’দিন আছি চেষ্টা করব সেগুলো যেন না হয়।”
বাংলাদেশের কোচ হিসেবে প্রথম মেয়াদে ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত কাজ করেছেন হাথুরুসিংহে। শেষ সময়ে বিসিবির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় তার। ফলশ্রুতিতে চাকরি ছেড়ে দেন নিজেই। সেই হাথুরুকেই গত বছর পুনরায় কোচ করে এনেছে বিসিবি।
হাথুরুসিংহের প্রথম মেয়াদে প্রধান নির্বাচকের দায়িত্বে ছিলেন ফারুক। সেবার তিনি পদত্যাগ করেছিলেন এই কোচের কারণেই। সেই হাথুরুকে চাকরিতে রাখবেন কিনা এমন প্রশ্নে নতুন সভাপতি বলেছেন, “হাথুরুসিংহের চুক্তি কতদিন আমি আসলে জানি না। তবে আমি আমার আগের অবস্থানেই আছি (হাথুরুকে বাদ দেওয়া)। এখন যেহেতু আমি (সভাপতির) দায়িত্ব পেয়েছি। এখন আমি বিকল্প খুঁজব, তার চাইতে ভালো কাউকে পাই কিনা, কাছাকাছি মানের কাউকে পাওয়া যায় কিনা- এসব দেখব।”
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে থাকা লঙ্কান হলেন গামিনি। এই কিউরেটর এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মিরপুরের উইকেট পরিচর্যা করছেন। অন্যদিকে ২০২২ সালে তিলকরত্নেকে নারী দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় বিসিবি। সামনের অক্টোবর পর্যন্ত তার মেয়াদ।
মাসখানেক আগে দ্বিতীয় মেয়াদে যুব দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নাভিদ নেওয়াজকে। এর আগে ২০১৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ ছিলেন তিনি। তার অধীনে যুব বিশ্বকাপ জিতেছে বাংলাদেশ।