গণহত্যার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা ঘিরে ‘বিচারিক প্রহসনের তামাশা’ মঞ্চস্থ হতে শুরু করেছে বলে মনে করে ছাত্রলীগ। এর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করে এই ‘প্রহসন’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতীম সংগঠনটি।
সোমবার ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত সংগঠনটির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
এরই মধ্যে হত্যা-গণহত্যার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে একের পর মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ওঠা গণহত্যার অভিযোগের মামলাগুলোর বিচার তারই গঠন করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনাল থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন।
আওয়াম লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন দলটির প্রথম সারির প্রায় সব নেতাই। এর মধ্যে গত আড়াই মাসে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন, অনেকে আবার দেশ ছেড়েছেন বলে খবর মিলছে।
সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে আছেন ছাত্রলীগের শীর্ষনেতারাও। এরই মধ্যে সোমবার নিজের ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠালেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, অবৈধ সরকার কর্তৃক সরাসরি পরিচালিত ও প্রযোজিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিচারিক প্রহসনের তামাশা মঞ্চস্থ হতে শুরু করেছে।
“জনগণের নির্ভরতা ও নিশ্চয়তার প্রিয় ঠিকানা শেখ হাসিনাকে ঘিরে কোনও ষড়যন্ত্রই বরদাশত করবে না বাংলাদেশের মানুষ। জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মাধ্যমেই সকল অপচেষ্টা রুখে দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।”
গত ১৪ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান-সংশ্লিষ্ট ঘটনায় কোনও মামলা হবে না বলে জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে সংঘটিত আন্দোলনে শান্তিপূর্ণ ও আইনি সমাধানের প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী-মৌলবাদী-দেশবিরোধী সংগঠনের ক্যাডারবাহিনী, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত এবং সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে পরিচালিত তাণ্ডবের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা বা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না মর্মে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ।
“আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের নবতর সংস্করণ চালু, কারাগার থেকে অপরাধীদের মুক্তি, বিচার বিভাগে নগ্ন হস্তক্ষেপের প্রকৃত উদ্দেশ্য গণতন্ত্রকামী ছাত্রসমাজের কাছে দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠেছে।”
শেখ হাসিনার সরকার বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিতকরণ এবং জাতিসংঘকে পূর্ণ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছিলেন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আইনানুগ প্রক্রিয়াকে বন্ধ করার মাধ্যমে অবৈধ, অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক সরকার ‘মেটিকুল্যাসলি প্ল্যানড’ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দায়মুক্তি নিশ্চিত করতে চায়। পঁচাত্তরের ইনডেমনিটি খুনিদের সুরক্ষাকবচ হতে পারেনি, চব্বিশের দায়মুক্তিও খুনিদের সুরক্ষা দিতে পারবে না।”