Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

চিনিকাণ্ড : বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল

মামলা হওয়ার পর অভিযান চালিয়ে ৮০ বস্তা চিনি উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
মামলা হওয়ার পর অভিযান চালিয়ে ৮০ বস্তা চিনি উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of আঞ্চলিক প্রতিবেদক, সিলেট

আঞ্চলিক প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ট্রাকচালককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এক ট্রাক চিনি লুটের ঘটনা ঘটে গত শনিবার। এ ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত– এমন গুঞ্জনের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের নেতাদের চিনি সংক্রান্ত কথাবার্তার একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

শুক্রবার সংগঠনের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে, সংগঠনের শৃঙ্খলা ও মর্যাদা পরিপন্থী এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগ বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখা, বিয়ানীবাজার পৌর শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।

চিনির মালিক বদরুল ইসলাম জানান, বিয়ানীবাজারের চারখাই বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিছুদিন আগে তিনি সরকারের বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন স্থান থেকে ১ হাজার ৪৭৭ বস্তা চিনি নিলামের মাধ্যমে কেনেন। ওই চিনি থেকে ৪শ’ বস্তা চিনি তিনি জনৈক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। বিক্রি করা চিনি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় গত শনিবার অস্ত্রের মুখ লুট করা হয়।

তিনি জানান, ১৫-১৬ জনের ছিনতাইকারী চক্র একটি প্রাইভেট কার, চারটি মোটর সাইকেল ও একটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে চিনিবোঝাই ট্রাক থামিয়ে চিনি লুট করে নিয়ে যায়। লুট হওয়া চিনির বাজার মূল্য প্রায় ২৪ লাখ টাকা।

এ ঘটনায় বিয়ানীবাজার থানায় মামলা করেছেন জানিয়ে বদরুল ইসলাম বলেন, ভিডিও ফুটেজ ও কথোপকথনের রেকর্ড থাকার পরও পুলিশ প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না।

অডিও রেকর্ডে যাদের নাম এসেছে, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান তিনি।

বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবদুলাল ধর সকাল সন্ধ্যাকে জানান, বদরুল ইসলাম ভারতীয় চিনি নিলামে কিনেছিলেন। পরে তার কাছ থেকে বিয়ানীবাজারের শাহগলী এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম চিনি কেনেন। গত শনিবার দুপুরে বিয়ানীবাজার থেকে ট্রাকে করে এসব চিনি পাবনায় নেওয়া হচ্ছিল।

চিনি লুটের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে দুজন। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

তিনি জানান, ট্রাকটি বিয়ানীবাজারের চারখাই এলাকায় পৌঁছালে প্রাইভেট কার, পিকআপ ও মোটরসাইকেলে করে আসা ১৫-১৬ জন যুবক গতিরোধ করেন। পরে ট্রাকচালককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রাকটি বিয়ানীবাজারের শ্রীধরা ও খাসাড়িপাড়া গ্রামে নিয়ে চিনির বস্তাগুলো ট্রাক থেকে নামিয়ে পিকআপ ও অন্য যানবাহনে করে নিয়ে যান আসামিরা।

এ ঘটনায় গত ১১ জুন মামলা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, মামলা দায়েরের পর অভিযান চালিয়ে ৮০ বস্তা চিনি, একটি পিকআপ (ঢাকা মেট্রো-ঠ ১১০৭০৯) উদ্ধার ও এজাহারনামীয় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন– কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থানার হোসাইনপুর গ্রামের (বর্তমানে পৌরশহরের দাসগ্রাম লিচুটিলা ছাত্তার মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া) মো. খলিল মিয়ার ছেলে মো. লিটন মিয়া (২৬) ও মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা শাহবাজপুর এলাকার বোবারতল গ্রামের (বর্তমানে সুপাতলা) মোস্তফা উদ্দিনের ছেলে হাসান (২১)।

মামলার এজাহারে ১১ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি আরও সাতজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে জানিয় ওসি বলেন, চিনি লুটের ঘটনায় বিভিন্ন মাধ্যমে যাদের নাম আসছে, সকলকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে, কোনও ব্যক্তির অপরাধের দায় সংগঠন নেবে না জানিয়ে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কয়কজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অপরাধ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এই দুই ইউনিটের কমিটি বাতিল করেছে। আমরাও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা কাউকে প্রশ্রয় দেব না।”

এর আগে গত ৬ জুন সিলেটে অবৈধভাবে আসা ভারতীয় চিনিবোঝাই ১৪ ট্রাক জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় গত বুধবার একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর একদিন পর বৃহস্পতিবার সিলেটে চোরাইপথে আনা সাত বস্তা চিনি ছিনতাইয়ের সময় পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ, যাদের মধ্যে তিনজন ছাত্রলীগের ও দুইজন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়াও চি‌নি চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত আরও দুজনকে ওইদিন আটক করা হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত