রমজান মাসের শুরু থেকে ৫৯৫ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছিলেন খলিলুর রহমান। ঢাকার শাহজাহানপুরের এই মাংস বিক্রেতা জানিয়েছিলেন, এই দামেই পুরো রমজান মাংস বিক্রি করবেন। তবে ১০ রোজা যেতে না যেতেই গরুর মাংসের কেজি ১০০ টাকা বাড়িয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ৬৯৫ টাকা কেজি দরে তার দোকানে বিক্রি হচ্ছে মাংস।
খলিলুর রহমান বলছেন, হাটে গরুর দাম বাড়ায় তিনিও মাংসের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। ভারতের গরু বাংলাদেশে এলে ৫০০ টাকা কেজিতেও গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব।
রোজা শুরুর পর গত ১৫ মার্চ গরুর মাংসসহ ২৯টি পণ্যের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।
বলা হয়েছে প্রতি কেজি গরুর মাংসের উৎপাদন খরচ ৫৮৭ দশমিক ৫০ টাকা। উৎপাদক পর্যায়ে তা বিক্রি করতে হবে ৬০৫ দশমিক ১৩ টাকায়, পাইকারিতে ৬৩১ দশমিত ৬৯ টাকা এবং খুচরা বাজারে বিক্রি করতে হবে ৬৬৪ দশমিক ৩৯ টাকায়।
সরকার নির্ধারিত এই দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তির মাঝেও ৫৯৫ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি করছিলেন খলিলুর রহমান। তাই তার দোকানে ভিড় লেগেই ছিল। গত শুক্রবার কোটি টাকার মাংস বিক্রি হয় খলিল গোস্ত বিতানে।
৫৯৫ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রির খবরে শাহীন ভূইয়া নামের একজন বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে গিয়েছিলেন শাহজাহানপুরের এই দোকানে। দেখেন মাংসের দাম বেড়ে গেছে ১০০ টাকা।
শাহীন ভূঁইয়া সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাবার মৃত্যুবার্ষিকী ধরে এতিমদের জন্য মাংস কিনতে এসেছিলাম। খবরে দেখেছি ৫৯৫ টাকায় এখানে মাংস বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এসে দেখি দাম বেড়ে গেছে।”
পরে মিরপুর ১১ নম্বরের এক দোকানে গিয়ে ৬৩০ টাকা দরে মাংস কিনেছেন বলে জানান শাহীন ভূঁইয়া।
মাংসের দাম বাড়ানোর পেছনে হাটে গরুর অতিরিক্ত দামকে দায়ী করে খলিল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি তো ৫৯৫ টাকায় মাংস বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হাটে গরুর দাম এত বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে আমার পক্ষে দাম ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি।”
তিনি বলেন, “একটি গরু তো শুধু কিনলেই হয় না। আমার কর্মচারী আছে ২০ জনের বেশি। তাদের মজুরিসহ সব কিছু মিলিয়ে আমার পক্ষে ৫৯৫ টাকা দাম ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।”
আলোচিত এই গরুর মাংস ব্যবসায়ী বলছেন, ঢাকায় যারা কম দামে মাংস বিক্রি করছেন, তারা সবাই ধীরে ধীরে দাম বৃদ্ধি করতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রথম রোজায় ৫৯৫ টাকা দরে বিক্রির শুরুর দিনই ব্যাপক সাড়া পান খলিল, সেদিনই বিক্রি হয় অর্ধকোটি টাকার মাংস। তবে সব রেকর্ড ভেঙেছে গত শুক্রবার। ছুটির দিনে তার বিক্রি ছাড়ায় কোটি টাকা। সে জন্য গরু জবাই করতে হয় ৫০টি।
দাম বাড়াতে বাধ্য হওয়ার জন্য ক্ষুব্ধ খলিল সকাল সন্ধ্যাকে আরও বলেন, “সরকারকে আমি বলেছিলাম ঈদ উপলক্ষ্যে ১০ দিনের জন্য বর্ডার খুলে দিতে। ভারতের গরু বাংলাদেশে এলে ৫০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব হতো। কিন্তু তারা তো আমাদের কথা শুনেন নাই।”
গত নভেম্বর মাসে গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা বা তারও বেশি ছিল বেশিরভাগ বাজারে। এই চড়া দামের মাঝে ১৯ নভেম্বর ‘খলিল গোস্ত বিতান’ ৫৯৫ টাকা করে মাংস বেচতে শুরু করে। এর প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে কমতে থাকে দাম।
৭ ডিসেম্বর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয় প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা। তবে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢালাওভাবে গরুর মাংস ৭০০ টাকায় বিক্রি শুরু হলেও খলিলের দোকানে ৫৯৫ টাকাই ছিল গরুর মাংসের দাম। এর কয়েকদিন পর বাধ্য হয়ে দাম বাড়িয়েছিলেন ৫৫ টাকা।
এই ৬৫০ টাকা দরেই রোজার আগ পর্যন্ত মাংস বিক্রি করছিলেন খলিল। রোজা উপলক্ষে আবারও ৫৯৫ টাকায় ফিরে গিয়েছিলেন খলিল গোস্ত বিতানের মালিক খলিলুর রহমান, যাকে মানুষ চেনে ‘খলিল কসাই’ নামে।
গত ২৬ জানুয়ারি সকাল সন্ধ্যাকে তিনি জানিয়েছিলেন, বাজার বুঝতে গত নভেম্বরে তিন দিনের জন্য গরুর মাংসের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেন। ৮০০ টাকা থেকে এক লাফে ৫৯৫ টাকা কেজি।
তার এই সিদ্ধান্ত রীতিমতো ঝড় তোলে। কম দামে মাংস কিনতে প্রতিদিন খলিলের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় জমতে থাকে। গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা ব্যাপক সাড়া ফেলে।
খলিলের দেখাদেখি অন্যান্য এলাকার মাংস বিক্রেতাদের মধ্যেও গরুর মাংসের দাম কমানোর প্রবণতা দেখা যায়। একই সঙ্গে সুপারশপগুলোতেও ছাড়কৃত মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়।
এরই মাঝে গত ১৮ জানুয়ারি খলিলুর রহমানকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে কম দামে মাংস বিক্রি না করতে বলে হুমকি দেওয়া হয়। তা না হলে দুই দিনের মধ্যে দুই ছেলেসহ তাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
খলিলুর রহমানের কাছে চাঁদা দাবি ও পরিবারের সদস্যসহ হত্যার হুমকি দেওয়া দুইজনকে গত ২৮ জানুয়ারি দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।