পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দিয়েছেন।
সকাল সন্ধ্যাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, “বেনজীরের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।”
আদেশে বলা হয়েছে, “মানি লন্ডারিং আইন ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন, বিধিমালা-২০০৭ এর বিধি ১৮ অনুযায়ী স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা হলো।”
এর আগে গত ২৩ এপ্রিল বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে দুদকের অনুসন্ধান কমিটিকে এ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন ও মনোজ কুমার ভৌমিক। বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও মো. সাঈদ আহমেদ রাজা।
দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদ অর্জন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান।
গত ৩১ মার্চ কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয় বিশেষ প্রতিবেদন ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’। কয়েকটি প্রতিবেদনে বিভিন্ন স্থানে ‘অবৈধ সম্পদের’ বিবরণ তুলে ধরা হয়। গোপালগঞ্জে তার রিসোর্টের কথাও বলা হয়। গাজীপুরে বনভূমি দখলের অভিযোগও করা হয়। তার চাকরি জীবনের আয়ের সঙ্গে এই সম্পদের মালিক হওয়া অসঙ্গতিপূর্ণ বলেও দাবি করা হয়।
বসুন্ধরা গ্রুপের আরও দুটি সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ প্রতিদিন ও বাংলানিউজেও একই শিরোনামে প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত হয়।
রিটে স্ত্রীসহ বেনজীরের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের অনুসন্ধানের নির্দেশনা চাওয়া হয়। এতে দুদক চেয়ারম্যান, কমিশনার (তদন্ত), কমিশনার (অনুসন্ধান) ও সচিবকে বিবাদী করা হয়।
এর আগে গত ৪ এপ্রিল প্রথমে রিট আবেদনকারী আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান দুদকে চিঠি পাঠান। এরপর গত ১৮ এপ্রিল তিনি আইনি নোটিশ পাঠান। তারপরও দুদক কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে বলে জানান রিগ্যান।
একই বিষয়ে গত রবিবার ২১ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বেনজীরের সম্পদের অনুসন্ধানের জন্য দুদকের কাছে আবেদন করেন।
এর আগের দিন নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় ‘আমার কিছু কথা’ শিরোনামে এক ভিডিও বার্তা নিয়ে হাজির হন বেনজীর।
সেখানে বেনজীর তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জবাব দেন। তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করে। একইসঙ্গে বলেন, তার সম্পদ অবৈধ বলে কেউ প্রমাণ করতে পারলে তা দান করে দেবেন তিনি।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় র্যাবের যে সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার নাম আসে, তার মধ্যে বেনজীরও ছিলেন।
সম্প্রতি বেনজীরের নামটি আবার আলোচনায় উঠে আসে বসুন্ধরা গ্রুপের সংবাদপত্রগুলোতে একযোগে প্রতিবেদন প্রকাশের পর।
সোশাল মিডিয়ার আলোচিত মুখ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক। আওয়ামী লীগের এ সহযোগী সংগঠন থেকে ২০২১ সালে বহিষ্কার করা হয় তাকে। তবে নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী বলেই বলে আসছেন ব্যারিস্টার সুমন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ব্যারিস্টার সুমন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তখনকার বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে বড় ব্যবধানে হারান।
গোপালগঞ্জের সন্তান বেনজীর দুই বছর আইজিপির দায়িত্ব পালনের পর ২০২২ সালে অবসর নেন। আইজিপির দায়িত্ব পালনের আগে তিনি র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। তারও আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ছিলেন।
পুরো আদেশ এখানে