Beta
শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪

বেনজীর-মতিউর পরিবারের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক

বেনজীর আহমেদ ও মতিউর রহমান।
বেনজীর আহমেদ ও মতিউর রহমান।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

[publishpress_authors_box]

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে নোটিস দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো পৃথক চিঠিতে তাদের সম্পদের হিসাব চেয়ে এ নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন।

২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে তাদের। নির্ধারিত সময়ে সম্পদ বিবরণী না দিলে বা সম্পদের মিথ্যা বিবরণী দিলে দুদক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুদক আইনে নির্ধারিত সময়ে সম্পদের হিসাব জমা না দিলে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। আর সম্পদের মিথ্যা তথ্য দিলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ জরিমানার বিধান রয়েছে।

জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তাদের বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও মেজো মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরকে এই নোটিস পাঠানো হয়েছে।

একই নোটিস পাঠানো হয়েছে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান, তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, প্রথম পক্ষের ছেলে আহাম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব, মেয়ে ফারজানা রহমান (ইপসিতা) ও দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারকে।

গোপালগঞ্জের সন্তান বেনজীর দুই বছর পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) দায়িত্ব পালনের পর ২০২২ সালে অবসরে যান। আইজিপির দায়িত্ব পালনের আগে তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্র বেনজীরের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়।

স্ত্রী জীশান মির্জার সঙ্গে বেনজীর আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত
স্ত্রী জীশান মীর্জার সঙ্গে বেনজীর আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে বেনজীরের ‘অবৈধ সম্পদের’ তথ্য প্রকাশ এবং তা অনুসন্ধানে হাইকোর্টে আবেদনের পর তার সম্পদ অনুসন্ধানে নামে দুদক। তার পরিপ্রেক্ষিতে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের দুদক তলব করেছিল। তবে তিনি উপস্থিত না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে নিজের লিখিত বক্তব্য পাঠান।

তলবের আগে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এর আগে জানিয়েছিলেন, বেনজীরের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

দুদকের অনুসন্ধানের মধ্যে বেনজীর দেশ ছেড়েছেন বলে খবর আসে। তবে তিনি বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। অনেকের ধারণা, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখন তুরস্ক বা স্পেনে থাকতে পারেন তিনি।

বেনজীরের ছোট মেয়ের নাম জাহরা জারিন বিনতে বেনজীর। দুদকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ ও ২৬ মে বেনজীর, তার স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটসহ ২০২টা দলিল, ২৭টি ব্যাংক একাউন্ট, ৯টি বিও একাউন্ড ও ৫টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকানা শেয়ার ক্রোক ও জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত।

এনবিআরের সদস্য মতিউর ছিলেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট।

গত কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারে ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসেন।

ছেলের বিলাসী জীবনযাপনের সূত্র ধরে মতিউরের বিপুল সম্পদ অর্জনের বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনার মধ্যে দুদকের পক্ষ থেকে মতিউরের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের কথা জানানো হয়। অপর দিকে মতিউরকে এনবিআর থেকে সরিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে বদলি করা হয়।

মতিউর অসুস্থতার কথা বলে লোক মারফত চিঠি দিয়ে ওই পদে যোগদান করলেও এখনও স্বশরীরে অফিস করেননি। তিনি কোথায় আছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মতিউর সপরিবারে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

দুদকের নোটিসে বলা হয়েছে, “প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দুদকের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, আপনারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।

“নিজ ও আপনাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে-বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী কমিশনে দাখিল করবেন।”

এ আদেশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে বা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবেও বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্পদ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত ২৫ জুন মতিউর রহমানের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন আটকে দেওয়া হয়। দুদকের এক আবেদনে এর আগের দিন ২৪ জুন তাদের বিদেশ যাত্রার নিষেধাজ্ঞা দেয় ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত।

গত ৩০ জুন একই আদালতে হাজির হয়ে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন মতিউরের প্রথম স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকি। এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২৭ জুলাই দিন ঠিক করে দিয়েছে আদালত।

লায়লা কানিজ ছিলেন সরকারি কলেজের শিক্ষক। ২০২১ সালে ঢাকার তিতুমীর কলেজের সহযোগী অধ্যাপকের পদ থেকে সেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি।

ছাগলকাণ্ড নিয়ে আলোচনার মধ্যে মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ বেশ কয়েক দিন উপজেলা পরিষদের কোনও কাজে অংশ নেননি। গত ২৭ জুন জনসমক্ষে আসেন লায়লা কানিজ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত