Beta
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

বেনজীরের সাভানা পার্কের নিয়ন্ত্রণ জেলা প্রশাসনের হাতে

গোপালগঞ্জের সাভানা ইকো রিসোর্ট। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
গোপালগঞ্জের সাভানা ইকো রিসোর্ট। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন গোপালগঞ্জের সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কে আদালতের নির্দেশে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পার্কটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকে পার্কের সব ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি দল পার্কে যায়। সেসময় আনুষ্ঠানিকভাবে সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের দায়িত্ব বুঝে নেন দলটির সদস্যরা।

পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পার্কের প্রধান ফটকের পাশে মাইকিং করে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

দুদক গোপালগঞ্জের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান ও মাদারীপুরের দুদকের উপ পরিচালক আতিক রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অভিযানে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসনের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাবলী শবনম, দুদকের সহকারী পরিচালক সোহরাব হোসেন সোহেল, দুদক মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক মো.সাইদুর রহমান ও গোপালগঞ্জ জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো. জিল্লুর রহমান রিগানসহ জেলা প্রশাসন ও দুদক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৫ থেকে ২০২০ সালে র‌্যাবের মহাপরিচালক এবং ২০২০ সাল থেকে থেকে ২০২২ পর্যন্ত আইজিপি থাকাকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৈরাগীটোল গ্রামে ও পাশের জেলা মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়ন মিলিয়ে ৬২১ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলেন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক।

এ পার্কের জমির প্রায় সবই হিন্দু সম্প্রদায়কে ভয় দেখিয়ে, জোর করে এবং নানা কৌশলে কেনা হয়েছে এবং কিছু জমি দখল করে নেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ ওঠে।

বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সোমবার সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পার্কের ফটকে নোটিশ টানিয়ে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত সাভানা পার্ক বন্ধ থাকবে।

এরপর বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত বেনজীর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা জব্দকৃত সম্পত্তিগুলোয় রিসিভার বা তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের নির্দেশ দেয়।

সে নির্দেশ অনুযায়ীই পার্কের নিয়ন্ত্রণ নিল জেলা প্রশাসন।

বেনজীরের দখল করা ফেরত দেওয়ার দাবি

গোপালগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যেসব জমি জোর করে বা হুমকি দিয়ে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দখল করে নিয়েছিলেন তা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

শুক্রাবার সন্ধ্যায় সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক এলাকা পরিদর্শন করেন এই আইনজীবী। সেই সঙ্গে কথা বলেন ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে। পরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

রানা দাশগুপ্ত  বলেন, “আজকে আমি পরিস্কারভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি আবদেন করতে চাই, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার সীমান্তবর্তী এই এলাকা শতভাগ হিন্দু প্রধান এলাকা। যাদের শত শত বিঘা জমি জোর করে, হুমকি দিয়ে, নানা চক্রান্তমূলভাবে বেনজীর দখল করে নিয়েছেন। শুধু দখলই করেনি, আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকারি রাস্তা বন্ধ করে গেট ও কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে এমনভাবে চারদিকে বেষ্টনি করা হয়েছে, যাতে অন্য কেউ ওই জায়গায় প্রবেশ করতে না পারে।

“পার্কের ভেতরে সংখ্যালঘুদের জায়গা জমি আছে, ওগুলো তারা আর দেখাশোনা করতে পারছেন না। অথচ, এখানকার লোকজনের প্রধান জীবিকার উৎস হলো কৃষি। আজকে এই জীবিকার উৎস থেকে তারা বঞ্চিত হওয়ার ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি বিশাল অর্থনৈতিক সংকট নেমে এসেছে।”

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এলাকাটি আপনারই। আপনি একবার এলাকায় আসুন, আপনি দেখে যান, কীভাবে এখানকার সংখ্যালঘুদের জায়গা জমি জবর দখল করেছেন বেনজীর আহমেদ। আমরা দাবি জানাই এবং আবেদনও জানাই, যাদের সম্পত্তিগুলো দখল করা হয়েছে, তাদের সম্পত্তিগুলো তাদের ফেরত দেওয়া হোক।”

র‍্যাবের মহাপরিচালক ও পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে ড. বেনজীর যে ভূমিকা পালন করছেন, তা শুধু সরকারের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ করেনি, বরং গোটা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বলেও মত দেন তিনি।

এ সময় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল ও মণীন্দ্র কুমার নাথ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার সাহাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত