গ্রামীণ নানা উপকরণের মাঝে সাজানো নানা বাদ্যযন্ত্র। বাংলার লোকগানের তালে যেসব বাদ্য বাজে যেন তারই মেলা বসেছে।
গেল সোমবার (২৫ নভেম্বর) থেকে ঢাকার আলিয়াঁস ফ্রঁসেজে চলছে ‘নিরাময়ের ঐকতান’ নামে এই আয়োজন যেখানে প্রদর্শিত হচ্ছে বাংলার নিজস্ব ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শতাধিক বাদ্যযন্ত্র। আয়োজক সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অবকল্প’।
বাদ্যযন্ত্রগুলো গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সংগঠন ‘অবকল্প’-এর সদস্যদের বানানো। তারা নিজেরা লোকগান পরিবেশন করেন। সেই সঙ্গে গানের সঙ্গে মিল রেখে বিচিত্র এই যন্ত্রগুলো তৈরি করে থাকেন।
গ্যালারিজুড়েই লোকজীবনের আবহ। এখানে আসার পর যে কারও মনে হতে পারে,এ যেন কোনো বাদ্যযন্ত্রের হাট!
একতারা এবং নানা ধরনের দোতারা, নানা রকম বাঁশি, ঢোলের পাশাপাশি বীণা, করন্ড, ডুগডুগি, ঘণ্টা, খড়তাল, জয়ঢাক, শঙ্খ, তাসা, খেমচা, পাখোয়াজ, মাদল, সানাই, মুহরি, খঞ্জনি, খমক, তবল, টুম্বার, দোতারা, মৃদঙ্গ, সানাই, সরাজ, ঢপ, তবলা, বাউলা বায়া, সেতারা, মন্দিরা, সিংগিং বল, নাকারা, কালিম্বা, ডমরু, জেম্বে, জিপসি, করকা, মানো, মাটির হাঁড়ি, নূপুর, স্বরমন্ডল, ঝাম প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রেরও সমাহার ঘটেছে এ প্রদর্শনীতে।
শুধু তাই নয়, বাদ্যযন্ত্র বানানোর নানা উপকরণ যেমন- হাতুড়ি, বাটাল, আঠা, রঙ-সুতো, কৌটা, পানির পাত্র ইত্যাদিও। যা দেখলে জানা যাবে কী করে বানানো হয় এসব বাদ্যযন্ত্র।
আরেক পাশে রয়েছে গাছের কাটা গুল। পাশে রয়েছে একটি গাছের চারা। জানতে চাইলে অবকল্পের অন্যতম কারিগর এবং শিল্পী আজাদুল ইসলাম রাজার বললেন, “আমরা কাঠ কেটে যন্ত্র বানাই। সেই সঙ্গে গাছও লাগাই।”
প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ১৮৪২ সালে সংকলিত বেহুলা লখিন্দারের কাহিনী নিয়ে রচিত হাতে লেখা ‘বিষহরির পুঁথি’। দুর্লভ এই পাণ্ডুলিপির সংগ্রাহক ইসমাইল হোসেন এবং আকবর আলী মন্ডল।
অবকল্পের প্রধান সংগীত গবেষক ও প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা জাকির হোসেন বলেন, “একতারা থেকেই ভালোবাসা শুরু। যে একতারের মধ্যেই এত গভীরতা… একদিন কবিতা লিখেছিলাম, একতারা করলো দেশান্তরী, দোতারায় আসিয়া না যেন কোন ফেরে পড়ি! এরকম একটা ব্যাপার। সে ফেরেই পড়ে আছি। তার বেড়েই যাচ্ছে।
“হয়তো সরোদের মতো অতো তার হচ্ছে না কিন্তু আমাদের দোতারা ও সরোজের মধ্যেই কম্বিনেশনটা করাই যায়। বাদ্যযন্ত্রগুলো প্রত্যেকটিই একেকটা কম্বিনেশান। তিন বছর ধরে বাংলার বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নিরীক্ষা করছি। এর অংশবিশেষ নিয়ে এ প্রদর্শনী। ভবিষ্যতে আরও বিশেষ কিছু উপস্থাপন করার ইচ্ছে রয়েছে।”
প্রদর্শনী ছাড়াও প্রতিদিনের আয়োজনে থাকছে সঙ্গীত পরিবেশন, কর্মশালা, সেমিনারসহ লোকসংস্কৃতি বিষয়ে নানা আয়োজন। বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত এ প্রদর্শনীটি শেষ হচ্ছে শুক্রবার।
প্রদর্শনীটির কিউরেটিং করেছেন লুসি তৃপ্তি গোমেজ।