সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বাগান বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জেলা প্রশাসন। এসময় বাড়িতে থাকা মালামালের তালিকা তৈরি করেন কর্মকর্তারা। এসবই আদালতে দাখিল করা হবে।
গত ৬ জুলাই এই বাড়িটি ক্রোক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং দুদক। কিন্তু বাড়িতে ডিজিটাল লক থাকায় সেদিন ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি কর্মকর্তারা। বুধবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তালা ভেঙে ভেতরে থাকা জিনিসপত্রের তালিকা তৈরি করা হয়।
রূপগঞ্জের পূর্বাচলের দক্ষিণবাগ এলাকায় ২৪ কাঠা জমির উপর সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে এ বাড়িটি নির্মাণ করেন বেনজীর আহমেদ। বর্তমানে প্রশাসনের টানানো ‘ক্রোক বিজ্ঞপ্তিতে’ রিসোর্টটির মালিক হিসেবে বেনজীরের কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নাম উল্লেখ করা আছে।
বুধবার দুপুর ১টা থেকে বাড়িতে তল্লাশি শুরু হয়, যা চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। অভিযান শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুর আলম জানান, এটি একটি আবাসিক ভবন। একটি পরিবারে যে রকম জিনিসপত্র দরকার তার সবই এ বাড়িতে পাওয়া গেছে।
সেসবের তালিকা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এসব আসবাবপত্র সাধারণ মানের। কোনও উচ্চভিলাসী জিনিসপত্র পাওয়া যায়নি। এই তালিকা আদালতে পেশ করা হবে।”
ঢাকার স্পেশাল জজ আদালতের নির্দেশে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের সম্পত্তিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসককে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা এ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি।”
দুদকের নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক মইনুল হাসান রওশনী বলেন, “এই বাড়িতে ডিজিটাল লক থাকায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তালা খোলা হয়। আদালতের নির্দেশনা পেলে নারায়ণগঞ্জে বেনজীর আহমেদের আর কোনও সম্পতি আছে কি না তাও অনুসন্ধান করা হবে।”
স্থানীয়রা জানায়, আট বছর আগে এলাকার দক্ষিণবাগ এলাকার একটি হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে এ জমিটি আনন্দ হাউজিং সোসাইটির নামে কেনা হয়েছিল। বছর চারেক আগে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। প্রায় সময় এ বাড়িতে আত্মীয়-বন্ধুদের নিয়ে আসতেন বেনজীর আহমেদ। তবে গত তিনমাস এখানে কেউ আসেন না বলে জানান বাড়িটির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা রতন মিয়া।
বেনজীর দুই বছর আইজিপির দায়িত্ব পালনের পর ২০২২ সালে অবসরে যান। আইজিপির দায়িত্ব পালনের আগে তিনি র্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তুলে গত ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিক ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেও উঠে আসতে থাকে তার দুর্নীতির নানা তথ্য।
এরপর দুদকও তৎপর হয়। তাদের আবেদনে গত ২৩ ও ২৬ মে পৃথক আদেশে বেনজীর, তার স্ত্রী জিশান মির্জা, তিন মেয়ে ফারহিন রিস্তা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর ও জাহরা জারিন বিনতে বেনজীরের নামে গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটসহ ২০২টা দলিল, ২৭টি ব্যাংক একাউন্ট, ৯টি বিও একাউন্ড ও ৫টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকানা শেয়ার ক্রোক ও জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত।