পিএসসির প্রশ্ন ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা সম্পদ গড়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের ব্যাংক হিসাবের তত্ত্ব তালাশ শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) আবেদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবগুলোর তথ্য চেয়ে মঙ্গলবার সব ব্যাংককে চিঠি পাঠিয়েছে।
বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিএফআইইউর এমন চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে আর্থিক এই গোয়েন্দা সংস্থা এবিষয়ে কিছু জানায়নি।
একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, আবেদ আলীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইউএসএ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্সের সব আর্থিক লেনদেনের তথ্যও চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।
আবেদ আলী এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।
সরকারি কর্ম কমিশনের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে কোটি কোটি টাকা লেনদেন এবং তাতে আবেদ আলীর জড়িত থাকার খবর একটি টেলিভিশনে প্রচার হওয়ার পর অভিযানে নামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
সোমবার আবেদ আলীসহ মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়। তার মধ্যে ছয়জনই পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারী।
তার আগের দিন রবিবার ‘বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর প্রতিবেদনটি প্রচার করে।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, আবেদ আলী পিএসসি গাড়িচালকের চাকরিতে ছিলেন। তিনি পিএসসি চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হিসাবেই বেশিরভাগ সময় দায়িত্ব পালন করেন।
পিএসসির অধীন বিসিএসের ক্যাডার এবং নন ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে আবেদ আলী কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। তার নেতৃত্বাধীন চক্রটি প্রায় ৯ বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিল বলে সিআইডি কর্মকর্তাদের দাবি।
মাদারীপুরের ডাসার থানার বাসিন্দা আবেদ আলী কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক বলে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
তাতে বলা হয়, আবেদ আলী ড্রাইভারের কাজ ছেড়ে এখন নিজেকে শিল্পপতি পরিচয় দেন। কয়েকটি কনস্ট্রাকশন ফার্মের প্রধান তিনি। রাজধানীতে তার রয়েছে দুটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আছে আরেকটি বাড়ি। কুয়াকাটায় তিনি থ্রি-স্টার হোটেলও খুলেছেন।
এরপর আবেদ আলীকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়। তার বিপুল সম্পদের পাশাপাশি তার ছেলের বিষয়েও নানা তথ্য আসে।
ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, তিনি পড়েছেন বিদেশে। বর্তমানে সিয়াম দামি গাড়ি ব্যবহারের পাশাপাশি নিজ এলাকায় প্রচুর দান-খয়রাত করেন বলেও জানা যায়।
এলাকাবাসী জানান, আবেদ আলী ডাসারের পশ্চিম বেতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে আবেদ মেজ। আবেদের বড় ভাই জবেদ আলী এখনও কৃষিকাজ করেন। ছোট ভাই সাবেদ আলী অটোরিকশা চালান।
তাদের মধ্যে শুধু আবেদ আলীই বিপুল বিত্তের মালিক হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য তিনি প্রচারও চালিয়েছিলেন।
সোশাল মিডিয়ায় আবেদ আলীর বেশ কিছু ছবিও ভাইরাল হয়েছে। তাকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালী অনেকের সঙ্গেই দেখা যাচ্ছে ছবিগুলোতে। তবে সেই ছবিগুলোর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।