গত ৫-৭ বছরে যশোরের শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির খুব খ্যাতি ছড়িয়েছে ঢাকায়। তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারদের সুবাদেই একাডেমির এত সুনাম। এবার এটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানই জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে বাফুফেতে আসতে চান দেশের ফুটবলে সুরভী ছড়াতে।
তিনি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। আগামী ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচনে লড়ছেন সহ-সভাপতি পদে। চার সহ-সভাপতি পদের জন্য ৬ প্রার্থী হলেও সবচেয়ে ফেভারিট ধরা হচ্ছে তাকে। সেটার কারণও ওই শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি- জেলা পর্যায়ের এমন সফল সংগঠকের প্রতি ভোটারদের এক ধরনের পক্ষপাত আছে।
“শামস-উল-হুদা হলেন আমার শ্বশুর। তিনি ক্রীড়া অন্তপ্রাণ মানুষ ছিলেন। যশোরের ক্রীড়া উন্নয়নে তার ভূমিকা অনেক। সেরা সংগঠক হিসেবে তাকে পুরস্কৃত করেছে বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতিও। তার নামে গড়া একাডেমিটা একটা সিস্টেমের মধ্যে চলে, বাচ্চারা খেলাধুলা করে। ছেলেপুলেদের খেলার সুযোগ করে দিয়ে আমি তাদের উৎসাহ দিয়ে গেছি শুধু। তাদের চাহিদা খুব বেশি নয়, তারা খেলার আনন্দটুকু চায় আর সেটা নিশ্চিত করা তো আমাদের সবার কর্তব্য”- বলেছেন বাফুফে নির্বাচনের সহ-সভাপতি প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।
তিনি গত এক দশক ধরে যশোর-ঝিনাইদহে এই কর্তব্য পালন করে আসছেন খুব ভালভাবে। ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। প্রতিভাবানদের সামনে এগিয়ে দিয়েছেন। রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান হিসেবে তার সঙ্গতিও আছে। নাসের শাহরিয়ারের কাছে অবশ্য ব্যাপারটা সঙ্গতির নয়, খেলাধুলা একটা সুন্দর সমাজ গঠনের অনুঘটক, “আমার ওই পদক জিততে হবে, ওই দলকে হারাতে হবে- এসবের চেয়ে আমি বড় করে দেখি ক্রীড়ার সামাজিক ভূমিকাকে। সুন্দর মন ও সুস্থ থাকার জন্য এর বিকল্প কিছু হতে পারে না। দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে খেলাধুলার সুযোগ করে দিলে রাষ্ট্রের অনেক কিছুই আপনা-আপনি শুদ্ধ হয়ে যাবে।”
শুদ্ধতার জায়গাগুলো নষ্টদের অধিকারে চলে যাওয়ায় হয়েছে যত বিপত্তি। জেলায় খেলাধুলার ভার যাদের হাতে, তাদের নেই ন্যূনতম ক্রীড়ানুরাগ। খেলার আয়োজন না করে, মাঠের ব্যবস্থা না করে তারা করেছে ক্রীড়া-রাজনীতি। জেলা থেকে জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতেও হয়েছে একই চর্চা। ফলে ক্রীড়াঙ্গন হয়েছে এক অন্তঃসারশূন্য ফাঁপা জায়গা। ফুটবলেও কাজী সালাউদ্দিনের ১৬ বছর শেষে ওই ফাঁপা গোলকটি ছাড়া আর কিছুই নেই।
নাসের শাহরিয়ারও বুঝতে পারেন দেশের ফুটবল ভাল নেই, “ঢাকায় দু-একটা লিগ ছাড়া তো দেশের ফুটবলে কিছু দেখি না। ফেডারেশনের ভেতরকার বিষয়গুলো আমার জানা নেই, তবে মফস্বলে ফেডারেশনের কোনও ভূমিকা দেখিনি।” জেলা ফুটবলের দায় জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের হলেও বাফুফে কখনও তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়নি। চার বছর পর পর শুধু জেলার ভোট পাওয়ার ফন্দি-ফিকির করেছে।
ফুটবলের এমন এক ছন্নছাড়া বাতাবরণের মধ্যে ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্বপূর্ণ পদে বসার সাহস দেখানোর পেছনে আছে নাসের শাহরিয়ারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা, “কাছের কিছু লোকজনের অনুরোধে ফেডারেশনে নির্বাচন করছি। আমার মনে হচ্ছে, ঢাকার বাইরের ফুটবল জাগাতে পারলে অবস্থার উন্নতি হবে। এজন্য পরিকল্পনা লাগবে। ফেডারেশন উদ্যোগী হলে সরকার ও কর্পোরেট হাউজগুলোকে পাশে পাওয়া যাবে। মোট কথা হলো, ফেডারেশন ইতিবাচক হলে কোনও কিছুই আটকাবে না।”
দীর্ঘ ১৬ বছর পর অনেকখানি নতুন চরিত্রের ফুটবল ফেডারেশন হতে যাচ্ছে। পুরনো অনেকেই নেই। তাই বলি, ‘সালাউদ্দিন-সোহাগের’ ভূত ভর না করলে বাফুফে’র ফাঁপা ফুটবলে নতুন হাওয়া লাগারই কথা।