রাত পোহালেই বিজিএমইএর ভোট। রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা পোশাক শিল্প রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর নির্বাচনে ৩৫টি পরিচালক পদের জন্য লড়ছেন দুই প্যানেলের ব্যবসায়ীরা। শুরুতে ৮১ জন মনোনয়ন জমা দিলেও মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর নির্বাচনে করছেন ৭০ জন।
শনিবার সকাল ১০টা থেকে উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে শুরু হবে ভোটগ্রহণ। একইসময়ে চট্টগ্রামেও চলবে ভোট। প্রত্যেক ভোটারকে মোট ৩৫টি ভোট দিতে হবে, অর্থাৎ ঢাকার ২৬ জন এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৯ জন প্রার্থীকে।
এবারের নির্বাচনে একদিকে সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি প্রার্থী বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি সেহা ডিজাইনের চেয়ারম্যান এস. এম মান্নান কচি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন তিনি। অন্যদিকে ফোরামের সভাপতি প্রার্থী সংগঠনটির সাবেক সহ-সভাপতি সুরমা গার্মেন্টেসর পরিচালক ফয়সাল সামাদ। তিনি ২৬ বছর ধরে বিজিএমইএ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
স্মার্ট শিল্পের অঙ্গীকার দুই প্যানেলেরই
দুই প্যানেলই ‘স্মার্ট’ শব্দটিকে মুখ্য করে তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। সম্মিলিত পরিষদের স্লোগান ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট শিল্পায়ন’ আর ফোরামের স্লোগান ‘সাসটেইনেবল স্মার্ট বিজিএমইএ’।
এসএমই শিল্পের টেকসই উন্নয়ন, এইচ এস কোড সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন ও ব্যবসা সহজীকরণ, রাজস্ব সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, শুল্ক/ আয়কর/ ভ্যাট/ নগদ সহায়তা, ব্যাংক ও আর্থিক সেবা খাত সংক্রান্ত উদ্যোগ, টেকসই শিল্পায়ন সমৃদ্ধ অর্থনীতি, বাজার ও পণ্য বহুমুখীকরণ, অংশীদারমূলক বিজিএমইএ গঠন, সবুজ বিপ্লবের সমৃদ্ধি, ভাবমূর্তি উন্নয়ন, মধ্যম শ্রেণির ব্যবস্থাপকদের কর্মদক্ষতা উন্নয়ন, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের জন্য প্রণোদনা, সার্কুলার ইকোনমি, ইউনিফায়েড কোড অব কন্ডাক্ট ও আরএসসি সংক্রান্ত জটিলতা সমাধানের অঙ্গীকার করছে সম্মিলিত পরিষদ।
অন্যদিকে, ফোরামের ইশতেহারে এলডিসি থেকে উত্তোরণের লক্ষমাত্রা ও পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি উন্নয়ন এবং জিএসপি প্লাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পোশাকশিল্পের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্মার্ট বিজিএমইএ প্রতিষ্ঠা, ক্রেতার জবাবদিহিতা ও পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, নতুন বাজারের উন্নয়ন এবং নিজস্ব বিপণনব্যবস্থা গড়ে তোলার কথাও বলা হয়েছে ইশতেহারে।
ভোটার তালিকা নিয়ে ‘বিতর্ক’
এবারের নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছে। গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ২ হাজার ৫৬৩ জনের প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ৪২৯ জনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল বোর্ডে আবেদন করেন ফোরামের প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ। তার অভিযোগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইট তল্লাশি করে দেখা গেছে, এই ভোটারদের আয়কর প্রদানের হালনাগাদ তথ্য নেই। তখন বিষয়টি নিয়ে আপিল বোর্ড শুনানি করে। পরে ৬৭ জন ভোটার বাদ পড়েন। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় এখন আছেন ঢাকার ২ হাজার ৩২ ও চট্টগ্রামের ৪৬৪ জন। বাকি নামগুলো নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এটা মেনে নিয়েই নির্বাচনে যাচ্ছে ফোরাম প্যানেল।
নির্বাচনের অম্ল-মধুর ইতিহাস
বিজিএমইএর নির্বাচন কখনোই সরলরৈখিক ছিল না। ২০১৩ সালে সাধারণ সদস্যদের সরাসরি ভোটে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত হয়েছিল। পরেরবার সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম দুই মেয়াদের জন্য নিজেদের ভিতরে সমঝোতা করে। সেই সমঝোতার প্রথম দফায় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে সম্মিলিত পরিষদের সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি হয়। সেই কমিটি নানা অজুহাত দেখিয়ে ৪৩ মাস দায়িত্ব পালন করে। পরের মেয়াদে সমঝোতার কমিটি করার উদ্যোগ নেয় দুই জোট। শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা পরিষদ নামে একটি খণ্ডিত প্যানেলে প্রার্থী দেওয়া হয়। সে কারণে ঢাকায় নিয়ম রক্ষার ভোট হয়েছিল। তখন সভাপতি হয়েছিলেন রুবানা হক।
সর্বশেষ নির্বাচনে বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান সমঝোতায় রাজি ছিলেন না। ফলে দুই প্যানেলের মধ্যে হয় ভোট। ২০২১ সালের নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদ ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫ পরিচালক পদের মধ্যে ২৪টিতে জয়ী হয়। আর এ বি এম সামছুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ফোরাম ১১ পরিচালক পদে বিজয়ী হয়। সভাপতি হন ফারুক হাসান। গত বছরের এপ্রিলে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফায় এক বছর সময় বাড়িয়ে নেয় বর্তমান কমিটি।