যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের কাছ থেকে নেওয়ার কিছু নেই, কিন্তু দেওয়ার আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের (ইউএসআইটিসি) তদন্ত নিয়ে চিন্তিত নন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ফারুক হাসান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র নিজেই তো অনেক নিয়মে স্বাক্ষর করেনি। তারা কোন মুখে আমাদের শ্রম আইন নিয়ে কথা বলবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে কীভাবে বাংলাদেশসহ শীর্ষ পাঁচ দেশ প্রতিযোগিতা করছে তা জানতে চায় দেশটি। পাশাপাশি এসব দেশের শ্রমিকদের কর্মপরিবেশসহ সামগ্রিক বিষয় মূল্যায়ন করতে তদন্ত শুরু করছে দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (ইউএসআইটিসি)।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান সকাল সন্ধ্যাকে এসব কথা বলেন।
এই তদন্তের শুনানি শুরু হয় ৭ মার্চ। বাংলাদেশের জন্য শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে ১১ই মার্চ সকালে। কিন্তু ৯ই মার্চ বিজিএমইএর নির্বাচন থাকায় ফারুক হাসান অংশ নিতে যাচ্ছেন না। শুনানিতে তিনি অংশ নিবেন ভার্চুয়ালি।
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আরও আগেই একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। সেই কমিটি আমরা কিভাবে তাদের দেশে ব্যবসায় জায়গা করে নিলাম এবং আমাদের দেশের কারখানা পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করেছে। এরই মধ্যে আমরা আমাদের রেসপন্স তাদের জানিয়ে দিয়েছি।”
২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৭৩৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই রপ্তানি হয়েছে ৭২৯ কোটি ডলারের। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। গত বছর ইউরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলার।
আমাদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু চাওয়ার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি বরং ওদের বলব ওদের ক্রেতাদের চাপ দিতে যেন তারা পণ্যের দাম বাড়ায়। তারা তো এখনও পণ্যের এত কম মূল্য দেয়, তা নিয়ে তাদেরকে ব্যস্ত হতে বলব।”
গত ডিসেম্বরে আমাদের এখানে মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে ফারুক হাসান বলেন, “তারা কথা দিয়েছিল এরপর দাম বাড়াবে কিন্তু এখনও বাড়ায়নি। ফলে, আমরা লসে আছি। তারা এ বিষয়ে কি করবে সেই প্রশ্ন আমি শুনানিতে তুলব।”
বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে কথা বলার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের শ্রম আইন নিয়ে ওরা কিভাবে কথা বলে। আমরা আইএলও কনভেনশনের সব জায়গায় স্বাক্ষর করেছি। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই তো অনেক নিয়মে স্বাক্ষর করেনি। তারা কোন মুখে আমাদের শ্রম আইন নিয়ে কথা বলবে।”
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ কোনও সুবিধা পায় না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তাদের কাছ থেকে ডিউটি ফ্রি একসেস পাই না। এমনকি রিডিউসড ডিউটিও পাই না। তারা কিভাবে আমাদের বিষয় নিয়ে কথা বলে।
“আফ্রিকার অনেক দেশকে তারা ডিউটি ফ্রি সুবিধা দেয়। আমরা তো জানি আফ্রিকার সেইসব দেশের শ্রম আইন বা কারখানা পরিস্থিতি কেমন! তারা তাদের সুযোগ দিতে পারে কিন্তু আমাদের দেয় না।”
এ তদন্তের পিছনে রাজনৈতিক কারণ আছে কিনা প্রশ্ন করতেই ফারুক হাসান বলেন, “রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। কিন্তু নিশ্চয়ই তারা রাজনীতি আর বাণিজ্যকে এক করবে না। আর এসব তদন্ত করে ওরা কোনও ফলাফলও পাবে না।”
পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে পাঁচ দেশের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ইউএসআইটিসি। ৭ মার্চ থেকে শুরু হয় এ শুনানি। বাংলাদেশের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ মার্চ। শুনানিতে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিজিএমইএ তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে। এক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিকভাবে বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ রয়েছে। শুনানির পর আগামী ২২ মার্চ পর্যন্ত লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ থাকবে। এরপর ৩০ আগস্ট কমিশন তাদের তদন্ত প্রতিবেদন বাণিজ্য প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করবে। বাংলাদেশ ছাড়াও তদন্ত চলছে ভারত, পাকিস্তানের বিষয়েও। এছাড়া, কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়া রয়েছে এর আওতায়।