২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী পোশাকের মোট বিক্রির ১৮ শতাংশ হয়েছিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে। আগামী ২০২৫ সালে সংখ্যাটা ২৩ শতাংশে পৌঁছাবে বলে ধারণা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “চার দশক ধরে বাংলাদেশের পোশাক সফলভাবে কাজ করলেও নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এটির পরিবর্তন করতে চাই। নিজেদের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হতে পারে আমাদের জন্য একটি কৌশলগত এন্ট্রি পয়েন্ট।”
তিনি বলেন, “২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আফ্রিকার ভার্চুয়াল বাজারে বাড়তি প্রায় ৫০ কোটি ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। তবে সুযোগটি কাজে লাগাতে হলে একটি আন্তর্জাতিক মানের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে।”
পোশাক খাতের জন্য ভার্চুয়াল মার্কেটপ্লেস প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ নিয়েছিল বিজিএমইএ। বৃহস্পতিবার সেই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয় সাংবাদিকদের সামনে।
বিজিএমইএর পক্ষে গবেষণাটি করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনারস। এতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) পার্টনারশিপ ফর ক্লিনার টেক্সটাইল (প্যাক্ট টু) প্রোগ্রাম।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভার্চুয়াল পোশাকের বাজারের মাত্র দশমিক ২০ শতাংশ, ইইউর দশমিক ১০ শতাংশ এবং আফ্রিকার দশমিক ৭৫ শতাংশ হিস্যা নিতে পারলেই ৪৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার মূল্যের অতিরিক্ত তৈরি পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব। যা ডলারের বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ৫ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকার মতো।
ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন লাইটক্যাসল পার্টনারসের কর্মকর্তা দিপা সুলতানা। তিনি বলেন, “২০২৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আফ্রিকায় তৈরি পোশাকের ভার্চুয়াল বাজার বেড়ে ৩০ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। আর ২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর বাজারের পোশাক বিক্রির এক-তৃতীয়াংশই অনলাইনে স্থানান্তরিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ আছে এক্ষেত্রে। দেশীয় বাজারের জন্য জাতীয় ডিজিটাল নীতি হলেও আন্তর্জাতিক ই-কমার্সে প্রবেশ করার জন্য কোনও সুস্পষ্ট নীতিকাঠামো হয়নি। অন্যদিকে কার্যকর ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা বৈশ্বিক পেমেন্ট গেটওয়ের অনুপস্থিতি, চলতি মূলধন অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ, ছোট ছোট ক্রয়াদেশ প্রক্রিয়াজাত করার জটিল প্রক্রিয়া ইত্যাদি রয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারীর সময় যখন পোশাক রপ্তানির আদেশ বাতিল হচ্ছিল আর বাজারগুলোতে ভার্চুয়াল ব্যবসা বাড়ছিল, তখন এই মার্কেটে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখার সিদ্ধান্ত নিই আমরা। আমরা দেখতে পাই, প্রথাগত ব্যাংকিং ও কাস্টমস নিয়মনীতি ভার্চুয়াল বাজারের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
তিনি আরও বলেন, “অর্থাৎ বেশ কিছু বিধিবিধান বিশেষ করে, ব্যাংকিং ও কাস্টমস নিয়মনীতি সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। তা ছাড়া ভার্চুয়াল বাজার যেহেতু একটি নতুন বিষয়, তাই শিল্পের ভেতরে কিছু প্রস্তুতি ও সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করা ও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পুরো বিষয়টি স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে করার জন্য গবেষণাটি করা হয়।”
ফারুক হাসান আরও বলেন, “শেষ বছরে আমাদের পোশাক রপ্তানি ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এর আগের বছর বৈশ্বিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমাদের হিস্যা ছিল ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আশা করছি, ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের এই হিস্যা ১২ শতাংশে নিয়ে যেতে পারব। এর জন্য নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করা প্রয়োজন এবং তা কাজে লাগাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব, নাভিদুল হক ও ইমরানুর রহমান; স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম এবং লাইটক্যাসল পার্টনারসের সহপ্রতিষ্ঠাতা জাহেদুল আমিন।