Beta
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

বাইডেন-নেতানিয়াহু টানাপড়েন চরমে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি।
[publishpress_authors_box]

ফিলিস্তিনের গাজার মিশর সীমান্তবর্তী শহর রাফায় ইসরায়েলের আসন্ন স্থল অভিযানকে কেন্দ্র করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সম্পর্কের টানাপড়েন চরমে উঠেছে।

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে লাগাম পরাতে না পেরে ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছে বাইডেন প্রশাসন। এতে বাইডেন ও নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে বলেও ধারণা করছেন অনেক বিশ্লেষক।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে বাইডেন ও নেতানিয়াহু ১৯ বার ফোনে কথা বলেছেন। তবে সম্প্রতি তাদের মধ্যে অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা বাড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। রাফায় অভিযান নিয়ে তাদের সম্পর্কে উত্তাপ বাড়তে বাড়তে তা এখন ফুটন্ত অবস্থায় পৌঁছে গেছে।

রাফায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়ে বাইডেন গত রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) প্রথম নেতানিয়াহুকে সতর্ক করেন। কিন্তু এর পরদিনই ইসরায়েল রাফায় বিমান হামলা চালালে শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এরপরই তেল আবিব জানায়, রাফায় তাদের ব্যাপক স্থল অভিযান চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।

এরপর গত বৃহস্পতিবারও (১৫ ফেব্রুয়ারি) ফোনালাপের সময় বাইডেন নেতানিয়াহুকে ফের হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু নেতানিয়াহু বাইডেনের কথায় কান দিচ্ছেন না। এতে বাইডেন বিভিন্ন ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ করে একাধিকবার গালিও দিয়েছেন।

এনবিসি নিউজ বলছে, বাইডেন গত এক সপ্তাহে ওয়াশিংটনে বিভিন্ন ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় অন্তত তিনবার নেতানিয়াহুকে যুক্তরাষ্ট্রে বহুল প্রচলিত একটি গালি দিয়েছেন।

এর মধ্যেই ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ও রূপরেখার ঘোষণা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও তার আরব মিত্ররা।

রাফায় অভিযানে আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা

মিশর সীমান্তবর্তী গাজার দক্ষিণের ছোট শহর রাফা। গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর গোটা গাজার বাস্তুচ্যুতরা ভিড় করেছে শহরটিতে। ৬৪ বর্গ কিলোমিটারের শহরটিতে এখন প্রায় ১৪ লক্ষাধিক মানুষের বাস।

বাইডেন নেতানিয়াহুকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা ছাড়া গাজার রাফা শহরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চালানো ঠিক হবে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সেখানে হামলা চালানো হলে, ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক যুদ্ধও বেধে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। এতে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অস্থির হয়ে উঠতে পারে।

গাজা উপত্যকা ও মিশরের সীমান্তবর্তী শহর রাফাহ। ফিলিস্তিনের দিক থেকে এটি গাজার সর্বদক্ষিণের শহর। আর মিশরের দিক থেকে এটি উত্তর সিনাইয়ের প্রশাসনিক শহর।

ফিলিস্তিন অংশের রাফায় গত চার মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় বাড়িঘর হারানো ফিলিস্তিনিরা জড়ো হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবার তাদের ‘নিরাপদে আরও দক্ষিণে’ সরে যেতে বলছে।

রাফায় হামাসের চারটি ব্রিগেড রয়েছে- এমন অভিযোগ এনে সেখানে বিমান ও স্থল হামলা চালাতে চাইছে ইসরায়েল। ইসরায়েল রাফা শহরকে ফাঁকা করতে চাইছে কৌশলগত কারণে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল চাইছে রাফা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে মিশরের সিনাই উপত্যকায় ঠেলে দিতে।

এমনটা হলে মিশরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। রাফা সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি অভিযানে যে অনুপ্রবেশ হতে পারে তা ঠেকাতে মিশরও এরই মধ্যে ৪০টি ট্যাংক ও বহু সাঁজোয়া যান মোতায়েন করেছে।

দেশটি হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, রাফায় ইসরায়েল হামলা চালালে পরিণতি হবে ‘ভয়াবহ’। ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক তাদের ভূমিতে প্রবেশ করালে তা ৪০ বছর পুরনো ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির লঙ্ঘন হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে মিশর। যুক্তরাষ্ট্রও সেই চুক্তির একটি পক্ষ। ওই চুক্তির মাধ্যমেই প্রথম আরব রাষ্ট্র হিসেবে মিশর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়।

বাইডেনের সুর বদল

গাজা যুদ্ধ নিয়ে বাইডেনেও সুর বদল করছেন। গত বৃহস্পতিবার বাইডেন ইসরায়েল গাজায় ‘বাড়াবাড়ি’ করছে বলেও মন্তব্য করেন। সম্প্রতি ইসরায়েলের সরকারের সঙ্গে নিজেদের দূরত্বের ইঙ্গিত দিতে বাইডেন প্রশাসন ফিলিস্তিনিদের পক্ষে একাধিক পদক্ষেপও নিয়েছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাইডেন পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত চরমপন্থি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা শুরু করেছেন। আমেরিকান সামরিক সাহায্য পাওয়া দেশগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রচেষ্টা বাড়ানোর লক্ষ্যে তিনি একটি স্মারকলিপিও জারি করেছেন।

তার প্রশাসন গাজায় আরও মানবিক সহায়তা ঢুকতে দেওয়ার জন্যও ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি বাইডেন প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা মিশিগানে আরব-আমেরিকান নেতাদের সঙ্গেও দেখা করতে যান। সেখানে তারা গাজা যুদ্ধের প্রথমদিকে ইসরায়েলের প্রতি বাইডেনের একতরফা সমর্থনের ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেন।

পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একজন শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, গাজার রাফাহ শহরে ইসরায়েলের স্থল অভিযানের পরিকল্পনাকে বাইডেন প্রশাসন এমন একটি বিপর্যয় হিসেবে দেখছে, যা এড়ানোই সবচেয়ে ভালো কাজ হবে। এই অভিযান মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্কে একটি বড় ক্ষত তৈরি করবে।

অনেক প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট নেতাও বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণে গভীরভাবে অসন্তুষ্ট। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ দলের সেই অংশের মধ্যে বাইডেনের অবস্থানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সাম্প্রতিক এপি-এনওআরসি জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ডেমোক্র্যাট ভোটার এখন গাজা যুদ্ধ নিয়ে বাইডেনের অবস্থানের বিরোধিতা করছেন, যার মধ্যে প্রায় তিন চতুর্থাংশ ভোটারের বয়স ১৮ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক পরামর্শকরাও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে

দ্য পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞরাও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন। গত মাসে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস এর সাবেক দীর্ঘকালীন প্রধান রিচার্ড হাস ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তনের জন্য একটি সাহসী পরিকল্পনা নিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস সহ বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক।

রিচার্ড হাস বলেন, জো বাইডেনকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু থেকে নিজেকে আলাদা করতে হবে, যার সামরিক অভিযানের কারণে বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং দেশে তার জনপ্রিয়তা কমছে।

দ্য পলিটিকোকে এক বিবৃতিতেও রিচার্ড হাস বলেছেন, “এটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে, এই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও অংশীদারত্ব নেই। এর জন্য আমাদের চড়া মূল্য শোধ করতে হচ্ছে— প্রেসিডেন্ট অভ্যন্তরীণভাবে রাজনৈতিক সমর্থণ হারিয়ে আর যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চল ও বিশ্বে সুনাম হারিয়ে মূল্য শোধ করছে।”

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আসছে

গত বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের আরব মিত্ররা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একটি বিস্তৃত শান্তি চুক্তির বিশদ পরিকল্পনা প্রস্তুত করছে। এর মধ্যে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব এবং তার জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হবে।

মার্কিন ও আরব কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি ঘোষণা আসতে পারে। যদিও সময়টি মূলত ইসরায়েল ও হামাস গাজায় যুদ্ধ থামিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হওয়ার উপর নির্ভর করছে।

প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় এমন সব পদক্ষেপ রয়েছে যা ইসরায়েল অতীতে প্রত্যাখ্যান করেছে। যেমন, পশ্চিম তীরের অনেক ইহুদী বসতি সরিয়ে নেওয়া, পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনের রাজধানী এবং পশ্চিম তীর ও গাজার জন্য একটি সম্মিলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সরকার।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার আরব অংশীদাররা আশা করছে, সৌদি আরবের মতো আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে ইসরায়েলও প্রস্তাবটি মেনে নেবে।

ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি, মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েল ও হামাস গাজায় মানবিক সহায়তা ঢোকার অনুমতি দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলে এবং হামাসের হাতে এখনও বন্দী ১৩৪ জিম্মি মুক্তি পেলে তারা পরিকল্পনাটি প্রকাশ করবেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির সময় ফিলিস্তিনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনসহ প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের দিকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তবে এই প্রতিবেদনের পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে নেবে না।

নেতানিয়াহু বলেন, “নিম্নলিখিত দুটি বাক্যে আমার অবস্থানের সারমর্ম রয়েছে। ইসরায়েল স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কোনও স্থায়ী বন্দোবস্ত সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদেশ প্রত্যাখ্যান করে। কোনও পূর্বশর্ত ছাড়া কেবল পক্ষগুলোর মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই এই ধরনের একটি ব্যবস্থা করা যেতে পারে।”

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “ইসরায়েল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি একতরফা স্বীকৃতির বিরোধিতা অব্যাহত রাখবে। ৭ অক্টোবরের গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরনের স্বীকৃতি হামাসের নজিরবিহীন সন্ত্রাসবাদের জন্যই একটি বিশাল পুরস্কার হবে এবং ভবিষ্যতে শান্তির পথে বাধা হবে।”

ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, মিশর, জর্ডান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রসহ এই পরিকল্পনার পেছনে যারা রয়েছে, তারা আশঙ্কা করছে, রাফায় ইসরায়েলের স্থল হামলা শান্তি প্রক্রিয়ার সম্ভাবনা নষ্ট করবে।

রাফায় অভিযানে অনড় নেতানিয়াহু, জাতিসংঘ ও ইইউর নিন্দা

টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, নেতানিয়াহু শুক্রবার ঘোষণা করেছেন, তিনি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে রাফার বেসামরিক মানুষদের সরিয়ে নেওয়া এবং হামাসের অবশিষ্ট ব্যাটালিয়নগুলোকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা সরকারের যুদ্ধ মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসরায়েলের দৃঢ় বিশ্বাস, রাফায় অভিযান না চালালে তারা হামাসকে কার্যকরভাবে দুর্বল করতে পারবে না। হামাসের হাতে আটক বাকি ১৩৪ জিম্মির মধ্যে অন্তত কিছু জিম্মিও এই শহরে আছে বলে মনে করা হয়। গত সোমবার বিমান হামলার পর ইসরায়েলের বিশেষ বাহিনী রাফাহ শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দুই ইসরায়েলি জিম্মিকে উদ্ধার করেছে।

আল জাজিরা জানিয়েছে, শনিবারও এক টেলিভিশন ভাষণে রাফায় অভিযান ছাড়া কোনও বিজয় আসবে না উল্লেখ করে নেতানিয়াহু বলেছেন, রাফা অভিযান অবশ্যই ঘটবে। আর রাফাহর ১৪ লাখ উদ্বাস্তুকে গাজার ভেতরেই রাখা হবে, মিশরে ঠেলে দেওয়া হবে না। তাদের দক্ষিণ-পূর্ব গাজার খান ইউনিসে সরিয়ে নেওয়া হবে।

অথচ এর আগে হামাসের সদর দপ্তর আছে— এই অভিযোগ তুলে খান ইউনিসকেও ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। সেখান থেকেও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গিয়ে রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন।

শনিবারও নেতানিয়াহু বলেন, “ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ চুক্তির বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক নির্দেশের কাছে মাথা নত করব না। এই ধরনের আপস কোনও পূর্বশর্ত ছাড়া সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিৎ।”

তিনি আরও বলেন, “৭ই অক্টোবরের গণহত্যার পর আমরা কীভাবে এমন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারি। এটা হবে সন্ত্রাসবাদের পুরস্কার।”

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের পাশাপাশি সৌদি আরব, জর্ডান ও মিশরও ইসরায়েলের রাফা অভিযানের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে নিন্দা জানিয়েছে। সব পক্ষই এ ব্যাপারে সতর্ক করছে, রাফায় হামলা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।

ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্যই স্বাধীন ফিলিস্তিন : ব্লিঙ্কেন

শুক্রবার জার্মানির মিউনিখে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে ইসরায়েলের মধ্যপ্রাচ্যে মিলেমিশে থাকার একটি ‘অসাধারণ সুযোগ’ রয়েছে। আরব দেশগুলোও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইচ্ছুক।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাও জরুরিভাবে প্রয়োজন।

ভবিষ্যত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের নেতৃত্ব কেমন হতে পারে তার ইঙ্গিত দিয়ে ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কারের জন্যও আরব দেশগুলো আন্তরিকভাবেই চেষ্টা করছে।

দুই-রাষ্ট্র সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার একমাত্র পথ : সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী

চলমান মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফয়সাল বিন ফারহানও বলেছেন, ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার একমাত্র পথ হল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এজন্য সৌদি আরব এখন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের চেয়ে গাজায় যুদ্ধ যুদ্ধবিরতির দিকে বেশি মনোনিবেশ করছে।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা একটি যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের দিকে মনোনিবেশ করছি। আমরা গাজার জনগণের জন্য মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকারের দিকেও মনোনিবেশ করছি।”

তিনি জানান যে, সৌদি আরব বারবার বলেছে, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা না হলে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক করবে না।

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে একটি প্যানেল আলোচনায় ভাষণ দেওয়ার সময় যুবরাজ ফয়সাল এসব কথা বলেন। এসময় তিনি দুই-রাষ্ট্র সমাধানের নিরাপদ পথ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর বারবার জোর দেন।

তিনি বলেন, “দুই-রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐকমত্য যত বেশি হবে তত আমরা ইসরায়েলের আরও কাছে যাব।”

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইইউ-র উচ্চতর প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর , মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরি, কাতারের প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানিও ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলেছেন।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য পলিটিকো, ওয়াশিংটন পোস্ট, টাইমস অব ইসরায়েল, এনবিসি নিউজ, বিজনেস ইনসাইডার

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত