পুঁজিবাজারে কারসাজি রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর পদক্ষেপে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বড় বিনিয়োগকারীরা। আবার অনেকে উৎকণ্ঠায় শেয়ার বিক্রি বাড়িয়েছে, যা বাজারের সূচক পতন তরান্বিত করছে।
টানা দরপতনের মধ্যে সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবস বুধবার দেশের দুই পুঁজিবাজারেই বড় পতন হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এদিন এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করেছেন।
বুধবার প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩২ পয়েন্টে বেশি কমেছে। কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। লেনদেন কমে ৪০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে।
আর এতে হতাশ ও ক্ষুব্দ বিনিয়োগকারীরা অনেক দিন পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সামনে বিক্ষোভ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বিএসইসির চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
দরপতনের প্রতিবাদে দুপুর ১২টার দিকে একদল বিনিয়োগকারী মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক দরপতনের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ভুল নীতিকে দায়ী করে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
পাশাপাশি তারা বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই বিক্ষোভ হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর কিছুদিন শেয়ারবাজারে সূচকের উল্লম্ফন হলেও একপর্যায়ে শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। এর মধ্যে বিএসইসিতে নতুন প্রশাসন কাজ শুরু করেছে, কিন্তু পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়নি।
বুধবার ঢাকার পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের পতন হয়েছে ১৩২ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএসের পতন হয়েছে ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ; ডিএস ৩০ সূচকের পতন হয়েছে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ।
লেনদেন হয়েছে মোট ৪৪০ কোটি টাকার শেয়ার। বুধবার মাত্র ২৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে; দাম কমেছে ৩৪৭টি কোম্পানির। অপরিবর্তিত ছিল ২২টির দর।
আগের দিন মঙ্গলবার ডিএসইতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছিল ৩৮ পয়েন্টের বেশি। লেনদেন হয়েছিল আরও ৩৮৯ কোটি টাকা।
পুঁজিবাজারের এই টানা পতনে ফেইসবুককেন্দ্রিক বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন গ্রুপে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি ঘেরাওয়ের জন্য আহ্বান করা হচ্ছে।
পুঁজিবাজারে সংস্কার নিয়ে রোডম্যাপ তৈরির জন্য সোমবার থেকে অংশীজনদের সঙ্গে বিএসইসির আলোচনার তিন দিনে সূচক কমল ২০৪ পয়েন্ট, বাজার মূলধন কমল ১৩ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮টি কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে নিয়ে যাওয়ার পর ৬ কর্মদিবসেই বাজার মূলধন কমল ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি, সূচক কমল ২৮২ পয়েন্ট।
বুধবার ১৩২ পয়েন্ট দরপতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স নেমে এসেছে ৫ হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে, যা গত ৭ অগাস্টের পর সর্বনিম্ন।
বড় দরপতনের এই দিনে বাজারে লেনদেন হয়েছে ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ ১২ হাজার টাকা। গত ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন লেনদেন। আগেরদিন হাতবদল হয় ৩৮৯ কোটি ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকার শেয়ার।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন সূচক এর চেয়ে কিছুটা কম থাকলেও বিনিয়োগকারীর লোকসান ছিল এখনকার তুলনায় কম।
৪ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ কর্মদিবসে ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্ট। সরকার পতনের পর চার কর্মদিবসে সূচক বাড়ে প্রায় আটশ পয়েন্ট।
সে সময় এক দিনে লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছুঁয়ে ফেলে। সে সময় যারা বিনিয়োগ করেছেন, তাদের সেই সিদ্ধান্ত এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে।
প্রাথমিক সেই উচ্ছ্বাস থেমে যাওয়ার পর ১২ অগাস্ট থেকে সূচক কমেছে ৫৬১ পয়েন্ট, বাজার মূলধন কমেছে ৩৭ হাজার ৭২০ কোটি টাকা।
তবে দুই মাসেরও কম সময়ে ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণ ফোন ও বিএটি বাংলাদেশের মত অল্প কিছু কোম্পানির শেয়ারদরেই কেবল উত্থান হয়েছে, যে কারণে সূচক বেড়েছে। এই তিনটি কোম্পানির বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কেবল তিনটি কোম্পানিতে এই উত্থান না হলে বাজার মূলধন আরও কমত।
বিনিয়োগকারীরা এমনিতেই আস্থার অভাবে ভুগছেন, এমন সময়ে এক দিনে ২৮টি কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে নিয়ে যাওয়া হয় গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে। যেটি দরপতনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা।