Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

‘বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মার্ট কার্ড’ বিতরণ শুরু

ss-smart card-23-5-24
[publishpress_authors_box]

আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মার্ট কার্ড বিতরণ। ২০২২ সালে প্রথম বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানাতে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মার্ট কার্ড’ চালুর উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশনের বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশন। তাতে বাধ সাধে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়।  

মন্ত্রণালয় ও ইসির দূরত্বের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাসংক্রান্ত জটিলতা এবং স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট বন্ধ থাকার বিষয়টিও এখানে কারণ হিসেবে কাজ করে। সব মিলে দুই বছরের জন্য আটকে যায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মার্ট কার্ড দেওয়ার উদ্যোগ।

অবশেষে মন্ত্রণালয় আর নির্বাচন কমিশনের মতভেদ আর ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটেছে। বিদায়ী কমিশনের রেখে যাওয়া সেই কাজকে পূর্ণতা দিতে যাচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাওঁয়ে নির্বাচন ভবনে ১০৪ জনের হাতে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত স্মার্ট কার্ড তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

এদিন ১১ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মঞ্চে ডেকে কার্ড দেয় কমিশন। ৮১ জনকে কার্ড পৌঁছে দেওয়া হয় হাতে হাতে। আর ১২ জনের স্মার্ট কার্ড  প্রিন্ট না হওয়ায় তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। গত ৭ মে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খচিত নতুন স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র হস্তান্তর করা হয়। কমিশনের এ উদ্যোগকে অনন্য হিসেবে অভিহিত করেছেন কার্ড পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঝান্ডা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সঞ্চারিত করতে হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের এই কার্ড না হারানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এই কার্ড হারাবেন না। এটা বীরত্বের একটি স্মারক। হয়তো আপনি থাকবেন না, কার্ডটা থেকে যাবে।”

স্মার্ট কার্ড পেয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সচিব শফিক আলম মেহেদী বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত স্মার্ট কার্ড দেওয়া নির্বাচন কমিশনের অনন্য উদ্যোগ।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউদ্দিন আহম্মদ বলেন, “১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিলাম। আমি গর্ব অনুভব করছি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মার্ট কার্ড দিয়েছে। এখানে আসার মতো যোগ্যতা আমার নাই। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেই এখানে আসতে পেরেছি।”

আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা সায়মা খান বলেন, “পরিবারের সবাই মিলে জীবন বাজি রেখে দেশ মুক্ত করতে গিয়েছিলাম। আমি গর্বিত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জীবিত অবস্থায় দেখে গেলাম।”

নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি এটা গৌরবের। আপনারা জাতির সূর্য সন্তান। আপনারা বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের অবস্থান করে দিয়েছেন।”

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের মতভেদের কথা স্বীকার করে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, “দেরি হলেও যে এই অনুষ্ঠানটা হয়েছে, সেজন্য আমি পরিতৃপ্ত।”

মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কমিশনের দূরত্বের কথা উঠে আসে আরেক নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের বক্তব্যেও। তিনি বলেন, “বিদায়ী কমিশন থেকে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তারা আপত্তি দিয়ে এটা বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে যদি মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় না দিতে পারি, তাহলে এটা অগৌরবের থাকবে।”

তিনি বলেন, “আপনাদের যে সম্মান দিতে পেরেছি তা আপনাদের সম্মানের তুলনায় অনেক কম।”

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, “যেভাবে ওনাদের সম্মান দেওয়ার কথা ছিল ৭৫ এর পর থেকে দীর্ঘ ২১ বছর এই গৌরবটাকে মুছে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তাদের চিকিৎসার ব্যয় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে করে থাকি।”

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, “২০০৭ সালের নবম নির্বাচনে নির্ভুল ভোটার তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা করার কাজ শুরু হয়। সাড়ে আট কোটি নাগরিককে কাগজে মুদ্রিত লেমিনেটেড কার্ড দেওয়া হয়। অপব্যবহার রোধে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজনীয়তা দেখা হয়। তিন স্তরে ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত স্মার্ট কার্ড দেওয়ায় তাতে নতুন একটি মাত্রা যুক্ত হলো।”

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিশেষ এই স্মার্ট কার্ডের চিপের নিচ দিয়ে লেখা থাকবে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’। স্মার্ট কার্ডে তিন স্তরের ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথম স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য খালি চোখে দেখা গেলেও, দ্বিতীয় স্তরে তা দেখার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ যন্ত্র। শেষ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করা যাবে ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক টেস্টের মাধ্যমে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত