Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

যেসব শর্তে মোদীকে সমর্থন নীতিশ-নাইড়ুর

বুধবার নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে চন্দ্রবাবু নাইডু, নীতীশ কুমার ও একনাথ শিন্ডে।
বুধবার নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে চন্দ্রবাবু নাইডু, নীতীশ কুমার ও একনাথ শিন্ডে।
[publishpress_authors_box]

ভারতের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি নরেন্দ্র মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। জোটসঙ্গীদের উপর নির্ভর করেই নতুন সরকার গঠন করতে হচ্ছে মোদীকে।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) নেতাদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেছিল বিজেপি নেতৃত্ব। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মোদী, অমিত শাহ, চন্দ্রবাবু নাইড়ু ও নীতিশ কুমারের মতো শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

ভারতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে বৈঠকে মোদীর ঠিক বাম পাশেই বসতে দেখা গেছে নাইড়ু ও নীতিশকে। অতীতে এমন বৈঠকে মোদীর বাম পাশে বসতেন অমিত শাহ। কিন্তু এবার তা হয়নি।

পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এনডিএ জোট থেকে অতীতের মতো নাইড়ু-নীতিশরা যাতে বের হয়ে না যায়, তাই এবার তাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে বিজেপি। কারণ মোদী এবার আর আগের মতো নিজেই কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। তাকে সিদ্ধান্তের জন্য জোটসঙ্গীদের উপর ভরসা করতে হবে।

বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার পর থেকেই ভারতীয় মিডিয়ায় শরিকদের সঙ্গে মোদীর আপোশ নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে বারবার একই কথা বলা হয়েছে যে, কী কী শর্তে মোদী নাইড়ু-নীতিশদের সঙ্গে রাখতে চাইছেন।

রাজনৈতিক সমীকরণ

লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রয়োজন ছিল ২৭২ আসন। কিন্তু বিজেপি পেয়েছে ২৪০। আর এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯৩। মূলত এই কারণেই বিজেপির দরকার জোটসঙ্গীদের।

এবারই প্রথম মোদীকে সরকার গঠনে তার জোটসঙ্গীদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মূল্য চুকাতে হবে মোদীকে।

এনডিএ জোটে আছে ৪১টি দল। এতে বিজেপি ছাড়া তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ১৬, জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি–ইউ) ১২, একনাথ সিন্ধের শিব সেনা ৭, লোক জনশক্তি পার্টি ৫, জনসেনা পার্টি ২, রাষ্ট্রীয় লোকদল ২, জনতা দল (সেক্যুলার) ২, আপনা দল ১, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি ১, অসম গণ পরিষদ ১, সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চা ১, ইউনাইটেড পিপলস পার্টি লিবারেল ১ ও হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (সেক্যুলার) ১টি আসন পেয়েছে।

দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইড়ুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি-ইউ)। দল দুটিই এবারের ‘কিংমেকার’। তাদের সমর্থনেই মোদী তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।

বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েও কিংমেকার নীতিশ ও নাইড়ু

দল দুটি প্রথম থেকেই বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের শরিক হলেও মাঝে তারা কংগ্রেসেরও মিত্র হয়েছিল। এবারের নির্বাচনের পর কংগ্রেসও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, কিন্তু সাঁড়া পায়নি।

দল দুটির নেতারা এখন এনডিএ জোটে থাকলেও তাদের দুজনের রাজনৈতিক কৌশল আর জোট বদলের রেকর্ড রয়েছে। এ দুই দলের নেতারই একাধিকবার এনডিএ জোট ত্যাগ ও ফিরে আসার ইতিহাস রয়েছে।

নীতিশ কুমার কয়েক বছর আগে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। এবারের বিজেপি-বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের অন্যতম কারিগরও ছিলেন তিনি। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবারও জোট বদল করে এনডিএ-তে যান তিনি।

নীতিশ কুমারকে নিয়ে নানা হাস্য-রসাত্মক কথাবার্তা চালু আছে। একসময় তাকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ভাবা হতো। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম বিজেপিকে সমর্থন করেন। অটল বিহারি বাজপেয়ীর সময় তিনি এনডিএ জোটের বেশ প্রভাবশালী মিত্র ছিলেন। তখন তিনি কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিজেপির সঙ্গে নীতিশের তিক্ততা বাড়তে শুরু করে। নরেন্দ্র মোদির ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিতে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে, এমন কথা তুলে তিনি তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সামনে আনার তীব্র বিরোধিতা করেন। ২০১৩ সালে তিনি এনডিএ জোট ত্যাগ করেন।

২০১৫ সালে বিহারে বিধানসভার নির্বাচনে কংগ্রেস, আরজেডি, জেডি-ইউ ও বাম দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত মহাজোট বিজেপিকে ধসিয়ে দেওয়ার পর নীতিশের বিরোধীদলীয় প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার ধারণা আরও জোরালো হয়ে উঠে।

কিন্তু লালু প্রসাদ যাদবের দলের সঙ্গে কাজ করতে পারছেন না, এমন ছুতায় ২০১৭ সালে নীতিশ কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বেরিয়ে যান। পরে আবার ২০২২ সালে তিনি মহাজোটে ফেরেন। ফের এবছর নির্বাচনের কয়েকমাস আগে এনডিএ জোটে যোগ দেন।

এভাবে একের পর এক ডিগবাজির কারণে নীতিশ তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারালেও এবার বিহারে লোকসভার ১২ আসনে জয়ী হয়ে তিনি ‘কিংমেকার’ হয়ে উঠেছেন।

অন্যদিকে ১৯৯৮ সালে এনডিএ জোট গঠনের পরের বছরই চন্দ্রবাবু নাইড়ুর টিডিপি এতে সমর্থন দিয়েছিল। যদিও সরাসরি তাতে যোগ দেননি। তিনি তখন বেশ তরুণ নেতা ছিলেন। ১৯৯৫-২০০৪ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নাইড়ু তার রাজ্যে (তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ) অর্থনৈতিক সংস্কারক এবং তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত পেয়েছিলেন।

২০১৪ সালে নাইডু মোদী সরকারকে সমর্থন দিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী হন। একই বছরে তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ আলাদা রাজ্য হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে তিনি এনডিএ জোট ত্যাগ করেন। ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোটে যোগ দিয়েছিলেন নাইডু। এতে ২০১৯ সালের অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে তার দলের ভরাডুবি হয় এবং তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারান। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বিজেপি সরকার তাকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। অবশ্য দুমাস পরই তিনি জামিন পান।

এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আবার বিজেপি জোটে যোগ দেন। এবার বিজেপি নির্বাচনে বেশ ক্ষতির শিকার হয়। কিন্তু টিডিপি বিস্ময়কর এক জয় পেয়েছে। দলটি অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভার ১৭৫ আসনের মধ্যে ১৩৪ আসনে জয় পেয়েছে। একই সময়ে লোকসভার ১৬ আসনেও জয় পেয়েছে। ফলে দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো এবার ‘কিংমেকার’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন নাইড়ু।

ঝুঁকি নেননি মোদী

অতীতে তাদের ডিগবাজির নজির থাকায় তাদের ব্যাপারে মোদী এবার আর কোনও ঝুঁকি নেননি। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরদিনই তাদের কাছ থেকে মোদী লিখিত সমর্থন নিয়ে রেখেছেন।

এমনকি একেবারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বুধবারই তিনি এনডিএ জোটের সব শরিকদের সঙ্গেও বৈঠক সারেন।

কারণ একটাই, এবার বিজেপির হাতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন জোটসঙ্গীরা। এই জোটে বিরোধীরা কোনও ‘ভাঙন’ ধরানোর আগেই নরেন্দ্র মোদী নতুন সরকারও গঠন করে ফেলতে চান।

বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদায়ী মন্ত্রিসভার সঙ্গে শেষ বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে মোদিকে আবার সরকার গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারপর রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। রাত পৌনে আটটায় শরিকদের সঙ্গে নিয়ে মন্ত্রিসভা গড়ার দাবি জানিয়ে আসেন। নতুন সরকার গঠন পর্যন্ত নিয়ম অনুযায়ী তিনি কাজ চালিয়ে যাবেন। নতুন সরকার শপথ নেবে ৯ জুন রবিবার।

বুধবার বিকেল চারটায় মোদীর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে শুরু হয় এনডিএ জোটের বৈঠক। তাতে যোগ দিতে দিল্লি চলে আসেন বিহার থেকে নীতীশ কুমার, চিরাগ পাসওয়ান, হায়দরাবাদ থেকে চন্দ্রবাবু নাইড়ু, লক্ষ্ণৌ থেকে জয়ন্ত চৌধুরী, মুম্বাই থেকে একনাথ সিন্ধের মতো ২১ জন নেতা।

তারা সবাই বিজেপি সরকারকে সমর্থনের জন্য লিখিত চিঠি নিয়ে হাজির হন। সেখানেই সবাই সর্বসম্মতিক্রমে নেতা হিসেবে মোদীকে মেনে নেন।

তুমুল দরকষাকষি

নীতিশ ও নাইড়ু উভয়েই ঝানু রাজনীতিবিদ। জোট সরকারে থাকার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের।  দর কষাকষির কলাকৌশল ভালোই জানেন তারা। আর এটাও বোঝেন, এই মুহূর্তে তাদের সমর্থন কতটা গুরুত্বপূর্ণ বিজেপির কাছে।

নীতিশ-নাইডুর হাতে আছে ২৮ আসন। এর মধ্যে টিডিপি অন্ধ্র প্রদেশের ২৫টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৬টি জিতেছে। বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৩টি আসন। আর জেডি-ইউ বিহারের ৪০টি আসনের মধ্যে ১২টি আসন জিতেছে, যেখানে বিজেপিও ১২টি আসন পেয়েছে।

বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তারা যা দিতো তা নিয়েই জোটসঙ্গীদের খুশি থাকতে হত। কিন্তু এবার ভোটে বিজেপির অপ্রত্যাশিত ফলের কারণে প্রবীণ রাজনীতিকরা দরকষাকষিতে তাদের নানা দাবি আদায় করে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না।

অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদীকে এই প্রথম জোট সরকার চালাতে হবে। তার এই অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি। মন্ত্রিসভায় কে কোন দপ্তর পাবেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। জোট সরকারে সাধারণত দেখা গেছে, প্রধান শরিক চারটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় যেমন অর্থ, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজের কাছে রাখে।

এ ছাড়াও বিজেপি অবকাঠামো উন্নয়ন, জনকল্যাণ, যুব বিষয়ক ও কৃষি মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রাখতে চাইবে। কারণ এগুলো চারটি উল্লেখযোগ্য ভোটার গোষ্ঠী- দরিদ্র, নারী, যুবক ও কৃষকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হলো আইন, রেল, গ্রাম ও নগর উন্নয়ন, তথ্য ও সম্প্রচার এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

বুধবার মোদীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিজেদের দাবি-দাওয়া পেশ করেছেন জোটের নেতারা। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও বিবৃতি এখনও পাওয়া যায়নি। তবে তুমুল দরকষাকষি চলছে বলে জানা গেছে।

জেডিইউ ও টিডিপিসহ অন্য শরিকেরা কোন দপ্তর পেয়ে সন্তুষ্ট থাকেন, দু-এক দিনের মধ্যেই তা স্পষ্ট হবে।

কী চাইলেন নীতিশ কুমার

নীতিশ কুমার বিজেপিকে সরকার গঠনের সমর্থনের বিনিময়ে অন্তত তিন থেকে চারটি মন্ত্রণালয়, রাজ্যের আগাম বিধানসভা নির্বাচন, রাজ্যটির জন্য কেন্দ্রের বড় তহবিল ও বিহারের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদার মতো বিষয় নিয়ে দর-কষাকষি করছেন বলে জানা গেছে।

বিষয়টি নিয়ে অবগতরা বলছেন, বিজেপির নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারে নীতিশ অন্তত তিন থেকে চারটি মন্ত্রণালয় চায়। নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে জেডি-ইউকে অন্তত তিনটি মন্ত্রণালয় ও একটি প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেডি-ইউর একজন নেতা বলেছেন, তারা রেল, গ্রাম উন্নয়ন ও জলসম্পদের মতো মন্ত্রণালয় চান, যাতে রাজ্যের উন্নতি করা যায়। কারণ তারা বিহারে অবকাঠামো উন্নয়ন এগিয়ে নিতে চান। এই নেতার মতে, তারা এমন সব মন্ত্রণালয় চান, যেগুলো তাদের হাতে থাকলে বিহারের দ্রুত উন্নতি হবে।

নীতিশ কুমার নিজেও একসময় রেলমন্ত্রী ছিলেন। তারই রাজ্যের নেতা লালু প্রসাদ ও প্রয়াত রামবিলাস পাসওয়ারও রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বিহারের সঙ্গে রেল মন্ত্রণালয়ের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

২০১৯ সালেও নীতিশ চারটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব চেয়েছিলেন। তবে বিজেপি তার সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাই এবার জেডি-ইউ বিহারে তার শক্তি পুনরুদ্ধার করার এবং এনডিএ জোটে থাকার বিনিময়ে কঠোর দর কষাকষির এই সুযোগটি হাতছাড়া করবে না। সামনে বিহারের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন, তাই এবার তাদের দরকষাকষির জন্য শক্তিশালী অস্ত্রও হাতে রয়েছে।

এছাড়া নীতিশ কুমার বিহারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বড় ধরনের তহবিলও চাইবেন। গত ফেব্রুয়ারিতে নীতিশের দল বিহারে ৯৪ লাখ দরিদ্র পরিবারকে দুই লাখ রুপি করে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। পাঁচ বছর-মেয়াদি এই প্রকল্পেই জন্য বিহারের মন্ত্রিসভা ইতিমধ্যে আড়াই লাখ কোটি রুপি বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের আরও বেশি তহবিল পেতে বিহারের বিশেষ শ্রেণি মর্যাদা (এসসিএস) ঘোষণার জন্যও একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে নীতিশের রাজ্য সরকার। তাদের মতে, বিশেষ মর্যাদা না পেলে বিহারের বেকারত্ব দূর হবে না।

জেডি-ইউ নেতা কেসি তেয়াগি দ্য প্রিন্টকে বলেছেন, “২০০০ সালে রাজ্য বিভাজনের পরে ঝাড়খণ্ড খনিজ সম্পদ পেলেও বিহার পায়নি। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝাড়খণ্ডে চলে গেছে। চরম দারিদ্র্যে বিহার মরুভূমির মতো শুকিয়ে গিয়েছিল।

“তাই, আমরা দাবি করেছি, বিহারকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একটি বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া উচিৎ। এবার আমরা আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি- বিহারের বৃদ্ধির জন্য, একটি বিশেষ প্যাকেজ সময়ের প্রয়োজন। জেডি-ইউ এর জন্য চাপ দেবে।”

বিহারের বিধানসভার আগাম নির্বাচন নীতিশ কুমারের আরেকটি চাওয়া। বিহারে লোকসভার ৪০ আসনের মধ্যে ৩০টি পেয়েছে জেডি-ইউ ও এনডিএর জোট শরিকেরা। এই পরিবেশ থাকতে থাকতেই তিনি বিহারের পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন চান। নীতিশ কুমার ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষায় না থেকে রাজ্য বিধানসভার ভোট দ্রুত করিয়ে নিতে আগ্রহী।

তবে রাজ্যের বিজেপি নেতারা জেডি-ইউর আগাম নির্বাচনের দাবির বিরোধী। নিয়ম অনুযায়ী ২০২৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে সেখানে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

নাইড়ুর দাবি পাঁচ মন্ত্রী পদ

অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) লোকসভার স্পিকারের পদসহ চার থেকে পাঁচটি মন্ত্রী পদ দাবি করেছে। এর মধ্যে একটি অর্থ প্রতিমন্ত্রীর পদ। জানা গেছে, সড়ক, পঞ্চায়েতি রাজ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ওপরও নজর রয়েছে দলটির।

বিধানসভা নির্বাচনের সময় রাজ্যের পুনর্গঠন এবং রাজধানীর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাইড়ু অন্ধ্র প্রদেশের ক্ষমতায় ফিরেছেন। তাকে এখন সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। আর তাই এবার রাজ্যের জন্য টেকসই অর্থনৈতিক সুবিধা এবং তার প্রদেশের রাজধানীতে স্বপ্নের আইটি পার্ক বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা পেতে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পদ চাইছেন।

নাইডু একই সঙ্গে স্পিকার ও এনডিএ জোটের আহ্বায়কের পদও চেয়েছেন। এই দুটি পদ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে দলটির বেশ টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, কারণ বিজেপিও এই দুটি পদ নিজের কাছেই রাখতে চায়।

এছাড়া টিডিপি অন্ধ্র প্রদেশের জন্যও বিশেষ শ্রেণি মর্যাদা এবং অমরাবতীতে রাজধানীর উন্নয়ন পুনরায় শুরুর জন্য অতিরিক্ত তহবিল চাইতে পারে।

২০১৮ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি অন্ধ্র প্রদেশের জন্য বিশেষ বিভাগের মর্যাদা প্রত্যাখ্যান করার কারণেই নাইড়ু মোদী সরকার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

১৯৬৯ সালে ভারতের পঞ্চম অর্থ কমিশন এই স্পেশাল ক্যাটেগরি স্ট্যাটাস (এসসিএস) চালু করে। অর্থনৈতিক পিছিয়ে থাকা বা ভৌগোলিকভাবে দুর্গম ও অসুবিধাজনক অবস্থানে থাকা রাজ্যগুলোকে উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য এই মর্যাদা চালু করা হয়।

বর্তমানে ভারতের ১০টি রাজ্য তথা আসাম, নাগাল্যান্ড, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, মণিপুর, মেঘালয়, সিকিম, ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশ এবং মিজোরাম বিশেষ শ্রেণি মর্যাদাপ্রাপ্ত।

ছোট দলগুলোও সুযোগ হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না

ছোট দলগুলোর মধ্যে বিহারের চিরাগ পাসওয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি পেয়েছে ৫টি আসন। তাদের দাবি, একটি পূর্ণ ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ। ওই রাজ্যেই একটি আসন পেয়েছে জিতনরাম মাঁঝির হাম। তাদেরও দাবি, একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ।

মহারাষ্ট্রে ৭টি আসন পেয়েছে মুখমন্ত্রী একনাথ সিন্ধের শিবসেনা। তারাও একজন পূর্ণ ও একজন প্রতিমন্ত্রীর দাবি জানিয়েছে।

মন্ত্রিত্ব পেতে মুখিয়ে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের আরএলডি দলের জয়ন্ত চৌধুরী, আপনা দলের অনুপ্রিয়া প্যাটেল, জেডিএসের এইচ ডি দেবগৌড়া কুমারস্বামীরাও।

২টি আসনে জয় পাওয়া এইচডি দেবগৌড়া কুমারস্বামীর জনতা দল (সেক্যুলার) বা জেডিএস নিজেকে কৃষকদের দল হিসেবে তুলে ধরেছে এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে বিজেপির যখন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, এই সব ছোট দলকে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়নি মোদীকে। পরিস্থিতির ফেরে এখন ছোট দলের দাবি মানা ছাড়া মোদীর সামনে আর কোনও রাস্তা নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আর নয়তো এনডিএ সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ভয় রয়েছে।

তবে বিজেপির এক নেতার কথায়, “যদি নীতিশ বা নাইড়ুর একজন বেরিয়ে যান, তাহলে সরকার পড়ার সম্ভাবনা নেই। দুজন যদি একসঙ্গে এনডিএকে ত্যাগ করেন, তাহলে অবশ্য সমস্যা তৈরি হবে।”

কিন্তু এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে, একনায়কের ধাঁচে প্রথমে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ও পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দশ বছর দেশ চালানোর পরে এই সুযোগ সন্ধানী জোট শরিকদের কতটা সামলাতে পারবেন নরেন্দ্র মোদী?

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত