জোটের ভরসায় সরকার চালাতে হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবার অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স) উল্লেখযোগ্য আসন পাওয়ায় সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন মোদী।
রবিবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় মোদী শপথ নেবেন। এসময় তার সঙ্গে নতুন মন্ত্রিসভার আরও ৩০ মন্ত্রী শপথ নেবেন, এমনটা জানিয়েছে ভারতীয় মিডিয়াগুলো।
ধারনা করা হচ্ছিল, মোদীকে হয়ত এবার তার মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো ছাড় দিতে হবে শরিকদের কাছে। কিন্তু গতকাল শরিকদের সঙ্গে টানা এগার ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকের পর দেখা যায়, মোদী তার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো ধরে রেখেছেন।
এনডিটিভি বলছে, বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ও রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে মন্ত্রী নীতিন গড়করি তাদের পদেই বহাল থাকবেন। নির্মলা সীতারমন ও এস জয়শঙ্করও তাদের পদে থাকবেন।
জোট শরিকদের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইড়ুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি-ইউ)।
দল দুটির হাতে আছে ২৮ আসন। এর মধ্যে টিডিপি অন্ধ্র প্রদেশের ২৫টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৬টি জিতেছে। সেখানে বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৩টি আসন। আর জেডি-ইউ বিহারের ৪০টি আসনের মধ্যে ১২টি আসন জিতেছে, যেখানে বিজেপিও ১২টি আসন পেয়েছে।
টিডিপি লোকসভার স্পিকার ও অর্থ প্রতিমন্ত্রীর পদসহ চার থেকে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের পদ দাবি করেছিল। জেডিইউও তিন থেকে চারটি মন্ত্রণালয়ে পদ দাবি করেছিল।
এনডিটিভি বলছে, দল দুটি মোদীর তৃতীয় মেয়াদের সরকারে একটি করে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদ পেতে পারে।
অন্য মিত্রদের মধ্যে বিহারের এলজেপির চিরাগ পাসওয়ান (রাম বিলাস) জেডিএসের এইচডি কুমারস্বামী, আপনা দলের অনুপ্রিয়া প্যাটেল (সোনেলাল), আরএলডির জয়ন্ত চৌধুরী ও হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চার জিতন রাম মাঁঝি মন্ত্রীর পদ পেতে পারেন।
একনাথ সিন্ধের শিবসেনা থেকে বুলধানার এমপি প্রতাপরাও যাদবকে মন্ত্রী করা হতে পারে।
বিজেপির বহুদিনের মিত্র রিপাবলিক পার্টি অফ ইন্ডিয়ার (এ) প্রধান ও রাজ্যসভার সদস্য রামদাস আঠাওয়ালেও মন্ত্রী হতে চলেছেন।
পশ্চিম দিল্লির বিধায়ক কমলজিৎ সেহরাওয়াত, হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর এবং মধ্যপ্রদেশের নেতা শিবরাজ সিং চৌহান ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াও মন্ত্রীর পদ পেতে পারেন।
উত্তর-পূর্ব থেকে বিজেপির নেতা সর্বানন্দ সোনোয়াল ও কিরেন রিজিজুও মন্ত্রী হিসেবে ফিরতে পারেন।
জেডিইউর সাবেক প্রধান ও রাজ্যসভার এমপি রাজিব রঞ্জন সিং এবং বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কার্পুরি ঠাকুরের ছেলে রাম নাথ ঠাকুরও মন্ত্রী পদ পেতে পারেন।
টিডিপি এমপি ড. চন্দ্র শেখর পেমাসানি ও রাম মোহন নাইডু কিঞ্জারাপু এবার মন্ত্রী পদ পাচ্ছেন বলে এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছেন দলটির নেতা জয় গাল্লা।
গত দুই মেয়াদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের পর এবার বিজেপি এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি।
ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রয়োজন ছিল ২৭২ আসন। কিন্তু বিজেপি এবার পেয়েছে ২৪০টি। ২০১৯ সালে দলটির আসন ছিল ৩০৩টি। আর ২০১৪ সালে পেয়েছিল ২৮৩টি।
অবশ্য একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও বিজেপি সরকার গঠন করতে পারবে। কারণ দলটির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ২৯৩টি আসনে জিতেছে।
বিজেপিসহ এনডিএ জোটে আছে মোট ৪১টি দল। বিজেপি ছাড়া বাকী দলগুলোর মধ্যে তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ১৬, জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি–ইউ) ১২, একনাথ সিন্ধের শিব সেনা ৭, লোক জনশক্তি পার্টি ৫, জনসেনা পার্টি ২, রাষ্ট্রীয় লোকদল ২, জনতা দল (সেক্যুলার) ২, আপনা দল ১, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি ১, অসম গণ পরিষদ ১, সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চা ১, ইউনাইটেড পিপলস পার্টি লিবারেল ১ ও হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (সেক্যুলার) ১টি আসন পেয়েছে।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি