নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপিই আবার ক্ষমতায় আসছে বলে মনে করছেন ভারতের আলোচিত ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। পঞ্চম ধাপের ভোটের পরদিন মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি।
যুক্তি হিসেবে প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে ভারতীয়দের ব্যাপক আকারে ক্ষোভ বা অসন্তোষ নেই। এছাড়া ভোটের মাঠে বিজেপি নেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জ করার মতো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই।
২০১৯ সালে লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৩০৩টিতে জয় পেয়েও সমমনাদের নিয়ে সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। এবারও দলটি একই সংখ্যক বা এর কিছু বেশি আসনে জিতবে বলে মনে করছেন প্রশান্ত কিশোর।
ভারতের রাজনীতিতে, বিশেষ করে ভোটের রাজনীতিতে আলোচিত নাম প্রশান্ত কিশোর। দেশটির শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকদের হয়ে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর জয়ের নেপথ্যের কারিগর ছিলেন প্রশান্ত কিশোর। আবার মোদীর কট্টর সমালোচক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়েও কাজ করেছেন তিনি। ২০২১ সালে প্রশান্ত কিশোরের হাত ধরেই বিধানসভায় জয় পান মমতা ব্যানার্জি।
এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধীর শিবিরের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসে যোগ দেননি তিনি। তার কয়েকমাস আগে বিহারে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে নতুন দল ‘জন সুরাজ পার্টি’ গড়েন প্রশান্ত কিশোর। অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশ না নিলেও ধারাবাহিকভাবে সম্ভাব্য ফল নিয়ে, বিজেপির সম্ভাব্য জয় নিয়ে পূর্বাভাস দিয়ে চলেছেন তিনি।
এবার লোকসভা নির্বাচনের ভোট হচ্ছে ৭ দফায়। আগামী ১ জুন শেষ হবে ভোটগ্রহণ। এরপর ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সব ভোট আগামী ৪ জুন একদিনেই গণনা করা হবে।
এই জাতীয় নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) নামে ২৬ দলের একটি জোট ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন ৪১ দলের জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সকে (এনডিএ) পরাজিত করার জন্য লড়ছে।
গত ১৯ এপ্রিল, ২৬ এপ্রিল, ৭ মে ও ১৩ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রথম চার ধাপে যথাক্রমে ৬৬ দশমিক ১, ৬৬ দশমিক ৭, ৬১ শতাংশ ও ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। সোমবার ২০ মে হয়েছে পঞ্চম দফার ভোট।
২০১৯ সালের নির্বাচনে সবমিলিয়ে গড়ে ভোট পড়েছিল প্রায় ৬৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এবার হিন্দু ভোটারদের মধ্যে আগের মতো মোদী জোয়ার ওঠেনি।
নির্বাচনে বিজেপি জিতবে কি না, জিতলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পাবে কি না, এ নিয়ে যখন বিরোধী শিবিরে ব্যাপক উৎসাহে আলোচনা চলছে, ঠিক সেসময় এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাদের উৎসাহে জল ঢেলে দিলেন ভারতের আলোচিত এই ভোটকুশলী। বললেন, বিজেপিই আবার ভারত শাসন করবে।
৪ জুনের ফল কেমন হবে মনে করছেন- এনডিটিভির এডিটর-ইন-চিফ সঞ্জয় পুগালিয়ার এ প্রশ্নের জবাবে প্রশান্ত কিশোর বলেন, “আমি মনে করি, মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি আবার ভারতের ক্ষমতায় বসবে। আমাদের মৌলিক কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করা উচিত। ক্ষমতাসীন দল ও এর নেতাদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ যদি থাকতই, তাহলে তাদের ভোট না দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করার সম্ভাবনা ছিল। বিকল্প আছে কি নেই, তা নিয়ে মানুষ মাথা ঘামাত না।
“মোদীজির বিরুদ্ধে মানুষ প্রচণ্ড ক্ষোভে ফুঁসছে, এমন চিত্র এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। তাকে নিয়ে জনগণ হতাশ, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু তাকে উৎখাতে ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গও চোখে পড়ছে না।”
সব মিলে মোদীর শাসনকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নেই বলে মনে করছেন প্রশান্ত কিশোর।
তিনি বলেন, “রাহুল গান্ধী ক্ষমতায় এলে দেশের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, মানুষ তা মনে করছে না। তার সমর্থকরা এমনটা ভেবে থাকতে পারেন। তাই গতবারের ভোট আর এবারের ভোটের ফলে বড় ধরনের ফাঁরাক হবে, আমি তা মনে করছি না।”
লোকসভার ৩২৫টির মতো আসন উত্তর ও পশ্চিম ভারতে। এই দুই অঞ্চল ২০১৪ সাল থেকে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি।
প্রশান্ত কিশোর এনডিটিভিকে বলেন, “ভারতের পূর্ব ও দক্ষিণের ২২৫টি আসনে গত দশকে খুব বেশি জয় পায়নি বিজেপি। এই ২২৫টি আসনের মধ্যে ৫০টির কম আসন এখন বিজেপির দখলে।
“এবারের ভোটে বিজেপিকে হারাতে হলে উত্তর আর পশ্চিমে তাদের হারাতে হবে। কিন্তু অঞ্চল দুটিতে বিজেপি কি এবার কোনও বস্তুগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে? আমার মূল্যায়ন তা বলছে না। বরং পূর্বাঞ্চল আর দক্ষিণাঞ্চলে এবার তাদের আসন বাড়ার সম্ভাবনা আছে।”
লোকসভায় বিজেপির আসন এবার গতবারের চেয়ে কমবে বলেও মনে করছেন না প্রশান্ত কিশোর।
১৯ এপ্রিল ভোট শুরুর আগে বিজেপি দাবি করেছিল, এবারের নির্বাচনে তারা ৩৭০টি আসনে জয় পাবে।
এ বিষয়ে প্রশান্ত কিশোর বলেন, “বিজেপি ২৭৫টি আসনে জিতলে তাদের নেতারা বলতে যাবেন না, ‘যেহেতু আমরা ৩৭০টি আসনে জয়ের দাবি করেছি, সেটা না পাওয়ায় আমরা সরকার গঠন করব না।’ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য বিজেপি লোকসভায় ২৭২টি আসন পায় কি না, সেটাই এখন আমাদের দেখার বিষয়।”