রাষ্ট্রপতি পরিবর্তনের দাবি উঠলেও বিএনপি এখনও যে এর পক্ষে নয়, তা বুঝিয়ে দিল। দলটি বলছে, দেশে নতুন কোনও সাংবিধানিক সংকট চায় না তারা।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে আসার পর বিএনপি প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে রাষ্ট্রপতির বিষয়ে কী বলেছেন- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, দেশে নতুন কোনও সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায়, সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবেলা করব।”
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে বিএনপি যখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছিল বিএনপি, তখন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে কয়েকটি সংগঠন বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ছিল।
একদিন আগে থেকে বঙ্গভবনের সামনে এই বিক্ষোভ চলছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও একই দাবি তুলেছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে সাংবিধানিক সংকটের শুরু। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে শপথ পড়িয়েছেন।
এখন রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে কিংবা তাকে অপসারণ করার উদ্যোগ নিলে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট দেখা দেবে। কারণ রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালনের জন্য স্পিকার নেই, আবার নতুন রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত করার জন্য সংসদও নেই।
এই অবস্থার মধ্যে বঙ্গভবনের সামনে একদলের অবস্থানের মধ্যে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই সপ্তাহের মধ্যে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করার দাবি তুলেছে।
সরকার পতনের আড়াই মাস পর রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে সাংবাদিক মতিউর রহমানের একটি প্রতিবেদন ধরেই এখন মো. সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে নেই।
তারপর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুললেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয় যে রাষ্ট্রপতি পরিবর্তনের কোনও উদ্যোগ নেই।
ঘোলাটে এই পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির একটি বিএনপির নেতারা।
নজরুলে সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছিলেন। বৈঠকে ড. ইউনূসের সঙ্গে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।
আসার কারণ ব্যাখ্যা করে বিএনপি নেতা নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান সংলাপের অংশ হিসাবেই বৈঠকটি হয়েছে।
“দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য যে সংস্কার চলছে, সে কাজ জোরদার করার জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচনের মাধ্যমে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আলোচনা আমরা করছি।”
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসররা নানা কৌশলে নানাভাবে দেশে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন নজরুল।
“আমরা মনে করি, দীর্ঘদিন লড়াই করে বহু রক্তের বিনিময়ে আমরা যে পরিবর্তন অর্জন করেছি, এই পরিবর্তন সুরক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য আরও সুদৃঢ় করা দরকার।”
সব রাজনৈতিক দল শ্রেণি-পেশার সংগঠন ছাত্র-যুব সংগঠন সবার মাঝে দৃঢ়তর ঐক্য গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “কেউ যাতে কোনোভাবে দেশে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট কিংবা রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে হুঁশিয়ার থাকতে হবে।”
নজরুল বলেন, “এই আন্দোলনের মূল আকাঙ্ক্ষা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যদি কোনও সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সংকট করার চেষ্টা করে তাহলে গণতন্ত্রকামী ও আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করব।”
বিএনপির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে সরকার এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে বৈঠকের পর বিকালে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সালাহউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “রাষ্ট্রপতির পদটা একটা সাংবিধানিক পদ বা একটা প্রতিষ্ঠান, সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ। এই পদে হঠাৎ করে পদত্যাগের মাধ্যমেই হোক শূন্যতা সৃষ্টি হলে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে, রাষ্ট্রীয় সংকটের সৃষ্টি হবে।”
বিএনপি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ বা অপসারণ চায় কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতির পদে শূন্যতা এই মুহূর্তে রাষ্ট্রীয় সংকট সৃষ্টি করবে, সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করবে, যেটা জাতির কাম্য নয়।”