Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

‘বয়কট ভারত’ স্লোগান কি বিএনপি তুলবে

গত ২৬ শে মার্চ বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের মূল মঞ্চের ব্যানারে বড় করে ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহবান জানানো হয়েছিল।
গত ২৬ শে মার্চ বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের মূল মঞ্চের ব্যানারে বড় করে ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহবান জানানো হয়েছিল।
Picture of মেরিনা মিতু

মেরিনা মিতু

“ছোট-বড় যে কোনও কিছু কেনার আগে কোন দেশে তৈরি হয়েছে, সেটা প্যাকেটের গায়ে পড়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।”

গত ৩০ মার্চ ফেইসবুকে এমন পোস্ট দেন ইশরাক হোসেন। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।

ইশরাক এই পোস্ট দেওয়ার ১০ দিন আগে গত ২০ মার্চ ঢাকার নয়া পল্টনে এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নিজের গা থেকে ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দেশটির পণ্য বয়কটের প্রচারে সংহতি জানিয়েছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সেদিনই এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বানে সংহতি জানান রিজভী।

এতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব চাঙা হয়ে উঠলেও দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়, রিজভীর ওই অবস্থান ব্যক্তিগত।

তারপরও ইশরাকসহ অন্য অনেক নেতা দমেননি, বরং ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা উঠেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু বলা হয়নি যে তারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কর্মসূচিতে আছেন, না কি নেই।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের এই পণ্য বর্জনের আন্দোলন এখন মূলত সোশাল মিডিয়াভিত্তিক। আর তার শুরুটা হয় গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে।

বিএনপির বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করেছে। বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন, ভারতের সমর্থন পেয়েই এতটা শক্তি পাচ্ছে তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত বরাবরই গুরুত্ব নিয়ে থাকে আলোচনায়। আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করতে বহু দিন আগে দলটিতে ‘ভারতের তাঁবেদার’ বলত বিএনপি নেতারা। তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার চেষ্টাও বিএনপিকে করতে দেখা গেছে সমান তালে।

২০১২ সালে ভারতের কংগ্রেস সরকারের আমলে শেষবারের মতো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা হিসাবে সে দেশে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। তখন সফরে গেলে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ দিল্লিতে তার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকও করেছিলেন।

কিন্তু এর মাস চারেকের মধ্যেই ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যখন ঢাকা সফরে আসেন, তখন তার সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকে না গিয়ে খালেদা জিয়া নয়া দিল্লির চক্ষুশূল হন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে।

সেবার জোটসঙ্গী দল জামায়াতে ইসলামীর হরতালকে কারণ দেখিয়ে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা করতে যাননি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা।

এরপর ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিয়ে যখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধ তুঙ্গে, তখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিেলন খালেদা জিয়া।

নির্দলীয় সরকার না হলে ভোটে না যাওয়ার অবস্থানে বিএনপি অনড় ছিল তখন। তবে তাদের বাদ রেখেই আওয়ামী লীগ ভোট করে ফেলেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি গেলেও অভিযোগ তোলে, কারচুপি করে তাদের হারানো হয়েছে।

তবে ওই নির্বাচনের আগে ভারত সফরে গিয়েছিলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপির তিন নেতা। এমনও কথা আছে, ওই ভোটের আগে জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক জোট ভেঙে দেওয়ার কারণ ছিল ভারতকে খুশি রাখা।

তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে হারলেও ভারতকে নিয়ে বিএনপির কঠোর অবস্থান দেখা যায়নি। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তবে তারপরও নয়া দিল্লির ভূমিকায় হতাশ হয়েছে বিএনপি নেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের একজন নেতা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যখন শক্ত অবস্থানে, তখন ভারত তলে তলে আওয়ামী লীগের পক্ষেই অবস্থান নেয়।”

সেই কারণেই বিএনপি নেতারা এখন ‘বয়কট ভারত’ প্রচার শক্তিশালী করতে চাইছেন বলে জানান তিনি। তার দাবি, ভারতের কারণেই বাংলাদেশে এখন ‘গণতন্ত্রহীনতা’। তাই ভারতবিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার করতে হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রায়ই ভারতবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন বিভিন্ন সভায়। ভারতীয় পণ্য শুধু বর্জনই নয়, এখন জনগণকে ভারতে না যাওয়ার আহ্বানও জানাচ্ছেন তিনি।

গত ২৬ শে মার্চ বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের মূল মঞ্চের ব্যানারে বড় করে ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়েছিল। সেই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

একই দিনে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপির আলোচনা সভায়ও ভারতবিরোধী কথা ছিল। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

রুহুল কবির রিজভী চাদর ছুড়ে ফেলে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বানে সংহতি জানান সম্প্রতি।

বিএনপির অবস্থান আসলে কী- জানতে চাইলে রিজভী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ভারতের অবস্থান আমাদের কাছে পানির মতো পরিষ্কার। আমাদের অবস্থানও পানির মতো পরিষ্কার।”

“এখানে কোনও কনফিউশান তো দেখি না। তবে সব দলেরই কিছু স্ট্রাটেজি থাকে। সেটা তো ফলো করতে হবেই,” অস্পষ্টতা নিয়ে বলেন তিনি।

ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বানে দল হিসেবে বিএনপি যুক্ত হচ্ছে কি না- প্রশ্নে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও অস্পষ্টতা রেখেই উত্তর দিয়েছেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। দল হিসেবে তার করণীয় নির্ধারণ হবে। এখন সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।”

গত ২৬ মার্চ বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভারত বিরোধিতা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে ভারতীয় পণ্য বর্জন কর্মসূচিতে রুহুল কবির রিজভীর সংহতি নিয়ে বৈঠকে তিনজন নেতা প্রশ্ন তুলেছিলেন।

বৈঠকে থাকা এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বৈঠকে ভারতবিরোধী অবস্থানে সবাই পরে একাত্মতা পোষণ করেন, হাইকমান্ডের সেখানে ‘হ্যাঁ’ ছিল। ঈদের পরেই ভারতীয় পণ্য বয়কটে বিএনপির অবস্থান আরও জোরালো ভাবে প্রকাশ হবে। শক্ত অবস্থানে যাওয়ার ইঙ্গিতও রয়েছে।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, তারা এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

“আমরা পর্যবেক্ষণে আছি। দলীয় কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি।”

দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়াই কি তবে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়েছিল- প্রশ্নে তিনি সরাসরি জবাব এড়িয়ে বলেন, “সব জানতে পারবেন। ধৈর্য ধরুন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত