শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর বর্তমান শূন্যতায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
মঙ্গলবার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের স্থায়ী কমিটির জরুরি এক বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।
লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে সোমবার দেশ ছাড়ার পর দেশে সরকার পরিচালনায় শূন্যতা চলছে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে, বিলুপ্ত হবে সংসদ।
ভাষণের আগে রাষ্ট্রপতি যে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তাদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব ফখরুলও ছিলেন।
ফখরুল মঙ্গলবার বৈঠকের পর বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্দলীয় সরকার গঠনের কাজ সমাধান করতে হবে। আমি রাষ্ট্রপতির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, কাল বিলম্ব না করে আপনি আজকের মধ্যে…. ২৪ ঘণ্টা প্রায় হয়ে যাচ্ছে… ২টার মধ্যে দয়া করে অবিলম্বে এই সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করুন।
“অন্যথায় দেশে আবার রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিতে পারে।”
তার এই আহ্বানের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে রাষ্ট্রপতি সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। তবে সরকারের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রধান করার প্রস্তাব জানিয়েছে। তাতে বিএনপির সমর্থন আছে কি না- জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “এখানে আমাদের সমর্থন করার ব্যাপার না। যখনই প্রেসিডেন্ট আমাদের কাছে প্রস্তাব দেবেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নামের জন্য আমরা সেই সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম দেব।
“এখানে এখন কনস্টিটিউশনাল হেড অব স্টেট প্রেসিডেন্ট … উনি হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রধান। তারই একমাত্র এখতিয়ার আছে এই ধরনের ব্যবস্থাগুলো নেওয়ার। সুতরাং যখন রাষ্ট্রপতি আমাদের ডাকবেন, তখনই আমাদের যেটা নামের প্রস্তাব আমরা দেব।”
তবে তিনি জানিয়ে রাখেন, “একটা কথা বলে দেই, ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে… তাদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মবোধ করেছি, তাদের সাথে একাত্মবোধ করছি। এখানে বলব, সর্বদলীয় ব্যাপারটা গুরুত্ব দেয়া উচিৎ যে জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে কোনও নাম ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, “রাষ্ট্রপতি অঙ্গীকার করেছেন যে, যেহেতু শেখ হাসিনার পদত্য্যাগ করে পালিয়ে গেছে সেহেতু শেখ হাসিনার কেবিনেট পুরোপুরিভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই সংসদ বিনাভোটের সংসদ। এর কোনও কার্যকারিতা নেই। সেজন্য এটাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে দিতে হবে।”
“এরপর অন্তর্বর্তীকালীন বলেন, নিরপেক্ষ সরকার বলেন, তা গঠন করা হবে। তারা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে।”
তারেক রহমান কবে ফিরবেন?
তারেক রহমানের ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “উনি (তারেক রহমান) যখনই মনে করবেন হি ক্যান কাম ব্যাক। আমরা আমাদের অলরেডি অনুরোধ জানিয়েছি যে, দ্রুত চলে আসেন। সেই ব্যবস্থা হবে ইনশাল্লাহ।”
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দোতলায় একটি কক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে লন্ডন েথকে তারেকও যুক্ত হয়েছিলেন। মহাসচিবসহ পাঁচজন ছিলেন বৈঠকে। বিদেশে অবস্থান করা আবদুল মঈন খান, সালাউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
খালেদা জিয়া কবে নাগাদ জনসমক্ষে আসবেন- প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা জানেন, ম্য্যাডাম খুব অসুস্থ। আমি গতকাল রাতে দেখা করেছি … সুতরাং যখনই তিনি ফিট মনে করবেন, সুস্থ বোধ করবেন, তখন তিনি জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন।”
বঙ্গভবন থেকে আসা এক বিজ্ঞপ্তিতে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে যে খালেদা জিয়া এখন মুক্ত।
চলমান অরাজক অবস্থায় খালেদা জিয়া সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বলে ফখরুল জানান। সংবাদমাধ্যমে হামলা বন্ধের দাবিও জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, “এখনও যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিশোধমূলকভাবে অগ্নিসংযোগ করছেন, লুটপাট করছেন, বাড়ি-ঘরে হামলা করছেন…. দয়া করে এটা এই মুহূর্ত থেকে বন্ধ করুন।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।