Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

ওয়ান ইলেভেনের ভূত এবারেও দেখছে বিএনপি

ss-bnp-fakhrul-28082024
[publishpress_authors_box]

বিএনপিকে নিয়ে সুপরিকল্পিত চক্রান্তের অভিযোগ তুলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এক এগারোর মতো এবারও বিএনপিকে লক্ষ্য করে ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে।  

বুধবার ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বিএনপির অবদানকে খাটো করার পরিকল্পিত ক্যাম্পেইন চলছে। এগুলো অন্যায় হচ্ছে, ঠিক নয়। সেজন্য বিএনপির নির্বাচনের দাবি নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করা হচ্ছে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলের (২০০১-২০০৬) শেষ দিকে একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দেয়। এ কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতময় অবস্থায় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়।

তখন সেনাসমর্থিত যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে, তা পরিচিত এক-এগারোর সরকার নামে। ওই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিনের মধ্যেই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়। অনেকেই গ্রেপ্তার হন, কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে যান। গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। সেদিনই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। ৮ আগস্ট গঠন করা হয় অন্তর্বতী সরকার। যার প্রধান হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন ও দখল নিয়ে বিএনপিকে লক্ষ্যবস্তু করে প্রচারণা চালানোর হচ্ছে। তিনি বলেন, এ কাজগুলো করা হচ্ছে আবার এক-এগারোর মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে, বিরাজনীতিকীকরণের চেষ্টা থেকে।

বর্তমান সরকারের মধ্যেও বিরাজনীতিকীকরণের কোনও লক্ষণ দেখছেন কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “না, আমি এমন লক্ষণ দেখছি না। আমি সতর্ক করছি। আমার একটা সতর্কের কথা আছে। কিছু চেহারা আছে তো? এ চেহারাগুলোকে দেখলে আমরা ভয় পাই।”

যাদের কোনও দিন দেখা যায়নি, তারা সামনে চলে আসছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “হঠাৎ করে তারা মিডিয়াতে ফ্রন্ট পেজে চলে আসছেন। তাদের বক্তব্য, থিওরি প্রচার করছেন। আমি কারও নাম বলতে চাই না। আমার মনে হয়, এটা সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ভালো বিষয় নয়।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “হ্যাঁ, অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে একটি আন্দোলন-বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। অবশ্যই এই সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে। তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করে যাচ্ছি, করব যত দিন আমরা মনে করি সরকার রাইট ট্রাকে থাকবে।”

এ সময় এক-এগারোর সরকারের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “আমরা তো ভুলে যাইনি এক-এগারোর সময় কারা চেষ্টা করেছিল বিরাজনীতিকীকরণের। এমনকি ওই সময়ে আমাদের দলকে পর্যন্ত পুরোপুরি বাতিল, নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাও হয়েছিল। এ কথাগুলো তো আমরা ভুলতে পারি না।

“এটা আমার গণতন্ত্রের জন্য, আমার রাজনীতির জন্য, আমার দেশের কল্যাণের জন্য এ কথাগুলো আমার মনে রাখতে হবে। আবার ওই চেহারাগুলোই যদি সামনে দেখি, তখন তো যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক হয়, প্রশ্ন এসে যায়।”

মির্জা ফখরুল মনে করেন, সে কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছেন, যারা সহায়তা করেছেন, তাদের যেভাবে জনগণ দেখতে চান না, একইভাবে যারা গণতন্ত্রকে ব্যাহত করার জন্য, ধ্বংস করার জন্য কাজ করেছেন তাদেরও দেশের মানুষ দেখতে চায় না।

তিনি বলেন, “মানুষ এখানে একটা ডেমোক্রেটিক সেটআপ চায়, গণতন্ত্র চায়। মানুষ নির্বাচন চায়। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।”

কারও নাম উল্লেখ না করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি যদি মনে করি, একজন ব্যক্তি একেবারে স্বর্গ বানিয়ে দিতে পারবে- আমার ওই চিন্তাটা সঠিক হবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কীভাবে চলবে। সংস্কারের দাবি তো আমরাই তুলেছি।

“আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। ৩১ দফা থেকে কমিয়ে ১০ দফা হয়েছে, ১০ দফা থেকে এক দফা হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি সারা বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছি। আমরা তো সংস্কার চাই। তবে সেই সংস্কারটা অবশ্যই হতে হবে জনগণের সমর্থন নিয়ে।”

জামায়াত ইসলাম প্রসঙ্গে যা বলেন ফখরুল

দুই দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান দলীয় এক কর্মসূচিতে বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবি ও ‘দখলদারির’ বিষয়ে কথা বলেন।

বিষয়টি তুলে ধরে এক সাংবাদিক এ ব্যাপারে বিএনপির বক্তব্য জানতে চান।

জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আমি আগেই বলেছি, এটা সুপরিকল্পিত একটা চক্রান্ত। কারণ, আমরা তো এক-এগারোর কথা ভুলে যাইনি। এক-এগারোতে যেটা হয়েছিল বিরাজনীতিকীকরণের প্রচেষ্টা। যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ মনে করে না যে এরা সরকার চালাতে পারবে, তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা করে।

“আমি কোনও দলের নাম বলছি না। সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, আমাদের লড়াইটা গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। সেটার জন্যই তো নির্বাচন। এটা তো আমাদের রাইট। আমরা তো নির্বাচনের জন্যই এত দিন লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি।”

জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে বাতিল করা হলো, তার জন্য ওই দলগুলো মিলেই তো আমরা আন্দোলন করেছি। ওই দলগুলোর অনেকের আন্দোলনে অনেক নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। এমনকি তাদের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ওই আন্দোলনকে ওই বিষয়কে বাদ দিয়ে আমি তো অন্য রাজনৈতিক চিন্তা এই মুহূর্তে করব না।”

এসময় জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়, এমন বক্তব্য না দিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান বিএনপির মহাসচিব।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ১৬ মে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী পাস হয়। এতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর করা হয়। ফলে সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

বিরোধীদের আপত্তির মুখে কে এম হাসান দায়িত্ব না নেওয়ার কথা জানালে বিকল্প অনুসন্ধান না করে নিজেই প্রধান উপদেষ্টা হন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা করার বিরোধী জোটের দাবি আমলে না নিয়েই ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হয়।

ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সেই নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতিও নেয়। তবে তাদের বেশ কয়েকজন নেতার মনোনয়নপত্র প্রশ্নবিদ্ধভাবে বাতিল হয়। এক পর্যায়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় তারা। দেশ এগোতে থাকে একতরফা নির্বাচনের দিকে।

তখন বিরোধী দলগুলোর লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে সৃষ্ট সংঘাতময় অবস্থায় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন ইয়াজউদ্দিন। পরদিন ১২ জানুয়ারি ফখরুদ্দীন আহমদ নতুন প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন এবং ‘সেনাসমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির অর্থ বন্যার্তদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত

বন্যার কারণে পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে ছয় দিনের ঘোষিত কর্মসূচি বাতিল করে সব অর্থ বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি জানান, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন পতাকা উত্তোলন, প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভারত বাঁধ খুলে দেওয়ার আগে সতর্ক করেনি, যার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত।”

কিছু কিছু জায়গায় ‘দুর্বৃত্তরা অপকর্ম করে’ বিএনপির উপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কোনও দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে বিএনপি জড়িত না। বিএনপি খুব কঠোর অবস্থানে রয়েছে।”

গত সরকারের সহযোগীদের বিরুদ্ধে ঢালাও মামলা চলছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই মামলা নেওয়ার আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাচাই করা উচিত। ঢালাও মামলা একেবারে বন্ধ হওয়া দরকার। এমন কোনও মামলা দেবেন না, যার সারবত্তা থাকবে না। যেখানে জড়িত সেভাবেই মামলা দিন।”

প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ‘বিপ্লবকে নস্যাৎ করার চক্রান্ত চলছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ক্রান্তিকাল পার করছি, স্থিতিশীল অবস্থাকে ব্যাহত করার চক্রান্ত চলছে। এটা করা যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।

“নেতাকর্মীদের অহেতুক মামলা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। সংস্কার করে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য নস্যাৎ করার চক্রান্ত চলছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত