রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংস্কারের জন্য সংলাপ করতে হবে।
রবিবার বিকালে সিলেট বিমানবন্দর এলাকার একটি অভিজাত হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতিবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব এসময় অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক সময়ের মধ্যে’ সংস্কার কাজ শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবিও জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, “যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে, যাতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।”
তিনি বলেন, “এই সরকারের উপর জনগণের সমর্থন আছে। আমরাও সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু অনির্দিষ্টকালের জন্য কোনও সরকার থাকতে পারে না। ওয়ান-ইলেভেনের সেই অভিজ্ঞতা তো আমাদের আছে।
“রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এজন্য সংলাপ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসন সংস্কার করে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত জুলাই মাসে, দমন-পীড়নের মুখে তা জনবিক্ষোভে পরিণত হলে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
শপথ নেওয়ার দিন দুপুরেই দেশে ফিরেছিলেন ৮৪ বছর বয়সী ইউনূস। বিমানবন্দরে নেমে তিনি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এই অর্জনকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, “তারা এদেশকে রক্ষা করেছে, পুনর্জন্ম দিয়েছে দেশকে। দ্বিতীয় বার স্বাধীনতা, এই স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে, এই স্বাধীনতা সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। এই বাংলাদেশ যেন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে পারে, সেটা আমরা রক্ষা করতে চাই।”
বর্তমান সরকারের সামনে সংস্কারের মাধ্যমে দেশের আইন বিচার ও প্রশাসনসহ সব ব্যবস্থায় সাম্য ফিরিয়ে আনার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা হাতছাড়া না করতে আহ্বান জানানো হয়েছে সম্প্রতি এক সেমিনারে।
‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক ওই সেমিনার আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
বিএনপি মহাসচিব সিলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ভারতের ত্রিপুরায় বাঁধ খুলে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যা হওয়ার অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “ত্রিপুরায় বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ভাটির দেশ হিসেবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ভারতের উচিত ছিল এ বিষয়ে বাংলাদেশকে আগে অবহিত করা। এই দুর্যোগে একাত্তর সালের মতো মানুষ দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “২০১২ সাল থেকে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে পতিত স্বৈরাচারী সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়।
“দীর্ঘ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিট সরকারের পতন হয়েছে। ফুটবল খেলার মতো ছাত্ররা এতে স্ট্রাইকারের ভূমিকা পালন করে গোল দিয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ‘দেশের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি’ আখ্যায়িত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যার ক্ষমতালিপ্সা, জেদ, দুর্নীতি ও ভিন্ন মতকে সহ্য করতে না পারার কারণেই এমন পরিণতি হয়েছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশকে গোছাতে, জঞ্জাল পরিষ্কার করতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। যোগ্য মানুষদের নিয়ে এই সরকার গঠিত হয়েছে। তাদেরকে সব ধরনের সহায়তা করব আমরা।”
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আকাশপথে সিলেট আসেন বিএনপি মহাসচিব। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এই প্রথম সিলেট সফরে এলেও এটি ব্যক্তিগত সফর বলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জানান বিএনপি মহাসচিব।
এসময় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।