Beta
রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪

হাসিনাকে ফেরত পাঠান, ভারতকে ফখরুল

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নতুন দুই সদস্যকে নিয়ে মঙ্গলবার শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মির্জা ফখরুল। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির নতুন দুই সদস্যকে নিয়ে মঙ্গলবার শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মির্জা ফখরুল। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের যে অঙ্গীকার দেশটি তা রক্ষা করছে না বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার ঢাকার শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। এসময় তিনি শেখ হাসিনাকে আইনানুগভাবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে কাছে তু্লে দেওয়ার আহ্বানও জানান।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, “ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট অত্যাচারী-নিপীড়নকারী-হত্যাকারী শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে তার জনগণকে ছেড়ে পালিয়েছেন। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আজকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। সেখান থেকে তিনি আবার বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার যে বিপ্লব সেটাকে নস্যাৎ করবার বিভিন্ন চক্রান্ত শুরু করেছেন।

“এই ব্যক্তিকে এভাবে আশ্রয় দিয়ে ভারত তার যে কমিটমেন্ট টু ডেমোক্রেসি- এটা তারা রক্ষা করেছে বলে আমার মনে হয় না। ভারতের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, আপনারা তাকে আইনানুগভাবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে কাছে তু্লে দেন এবং দেশের মানুষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত হচ্ছে তার বিচার করার সেই বিচারের সম্মুখীন তাকে হতে দেন।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “এদেশের মানুষ শেখ হাসিনার যে অপরাধ সেই অপরাধকে খাটো করে দেখে না। তারা মনে করে, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার এই ফ্যাসিবাদী শাসন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে দিয়েছে, জাতিকে আহত করেছে।

“আপনারা দেখেছেন, তার শাসনামল এই জাতিকে সে ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণে আবদ্ধ করে গেছে। পাচার হয়ে গেছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার।”

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শূন্যতা পূরণে গত ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ‍যুক্ত হয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন নিয়ে আমাদের বক্তব্য আমরা আগেও বলেছি। এখনও বলছি যে, গণঅভ্যুত্থানের পর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসেছে। তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া।”

তিনি বলেন, “তবে আমি যেটা মনে করি, যে জঞ্জাল আওয়ামী লীগ সরকার সৃষ্টি করে গেছে সেটাকে দূর করতে অবশ্যই কিছু সময় দরকার। একটি সঠিক সুন্দর নির্বাচন করার জন্য হলেও একটা সময়ের দরকার যে সময়ে নির্বাচনকালীন নতুন সরকার তারা সেই লক্ষ্যে কাজ করতে পারবে, সংস্কারগুলো করতে পারবে- সেই সময় অবশ্যই এদেশের মানুষ তাদেরকে দেবে।”

অন্তর্বর্তী সরকার গত ১১ দিনে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে- এসম তার ভূয়সী প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই নতুন সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনকে নিয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে যান মির্জা ফখরুল। এরপর জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিশেষ মোনাজাত করেন তারা।

এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়নসহ সহাস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

‘গণতন্ত্র রক্ষায় সকলকে সজাগ থাকা চাই’

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ৩২ বছর ধরে বিএনপির সদস্য। আমাদের নীতিনির্ধারণী ফোরামে স্থান দেওয়ার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

“আগামী দিনগুলোতে বিএনপি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে- এটাই আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করি।”

তিনি বলেন, “গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন ১৬ বছর আগে বিএনপি শুরু ‍করেছিল। শেষ পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে এই আন্দোলনকে বেগবান করে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে গিয়েছে। আজকে এই আন্দোলনে শুরু থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যতজন শহীদ হয়েছে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি।”

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “আগস্ট বিপ্লবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শেষ মুহূর্তে এসে জনগণের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে স্বৈরাচারকে বিতাড়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

“সেজন্য সেনাবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, আগামী দিনেও এসব বাহিনী- যারা জনগণের অর্থে প্রতিপালিত তারা সবসময়ে জনগণের সাথে থাকবে। কখনও স্বৈরাচারকে স্থান দেবে না।”

‘স্বাধীনতা কাকে বলে জেনেছে নতুন প্রজন্ম’

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক নতুন সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, “এবারের অভ্যুত্থানে নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতা কাকে বলে জেনেছে।

তিনি বলেন, “১৯৭৯ সালে আমি ছাত্রদলের মেম্বার ছিলাম। সেখান আজ অবধি আমি বিএনপিতে কাজ করছি একজন কর্মী হিসেবে।

“আমি মনে করি, গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধারের আন্দোলন বিএনপি যেটা শুরু করেছিল ২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকে অর্থাৎ এদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে যেয়ে যেসমস্ত গুম হয়েছে, যারা হারিয়ে গেছে, তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করব। যারা শহীদ হয়েছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।”

গত ১৬ আগস্ট বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম ও অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনকে পদোন্নতি দিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত