বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার পেছনে ভারতের মদদ রয়েছে বলে বিএনপি নেতারা দাবি করে এলেও দেশটির নতুন সরকার সেই পথে হাঁটবে না বলে প্রত্যাশা করছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাংলাদেশের জনপ্রত্যাশাকে ভারতে নরেন্দ্র মোদীর নতুন সরকার মর্যাদা দেবে বলে তারা আশা করছেন।
বিএনপি নেতারা বরাবরই আওয়ামী লীগকে ভারতঘেঁষা বলে আক্রমণ করে আসছেন। ২০১৪ সালে ভারতে কংগ্রেস ক্ষমতা হারানোর পর নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার আসার পর বিএনপি যে পরিবর্তন আসা করেছিল, তা আসেনি।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনা যেমন টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার চালাচ্ছেন, তেমনি মোদীও টানা তৃতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন রবিবার। এই এক দশকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে বলে দুই তরফেই বলা হচ্ছে।
এরমধ্যেই মোদী নতুন সরকার গঠন নিয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইছিল সাংবাদিকরা; সোমবার এক আলোচনা সভায় সেই উত্তরই দেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “ভারতের নতুন সরকার নিয়ে সাংবাদিকরা আমাদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছেন। এই সম্পর্কে আমার বলার একটাই- ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ, নিঃসন্দেহে আমাদের প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ।
“আমরা ভারতের নতুন সরকারের কাছে একটাই আশা করব যে, তার দেশে যেভাবে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে এখনও, তাদের নির্বাচন কমিশন যেভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তাদের বিচার বিভাগ যেভাবে কাজ করতে পারে, আমরা এখানে গণতন্ত্রকে সেইভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”
“আমাদের যেটা প্রত্যাশা যে, ভারতের সরকার, জনগণের যে প্রত্যাশা বাংলাদেশের মানুষের সেই প্রত্যাশাকে তারা মর্যাদা দেবেন, সেভাবে তারা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন,” বলেন তিনি।
ভারতের মোদী সরকারের কাছে প্রত্যাশা রাখার পাশাপাশি দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনাও করেন বিএনপি মহাসচিব।
অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা আদায়, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়া এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়ার জন্য শেখ হাসিনা সরকারের ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করেন তিনি।
জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আলোচনা সভায় বক্তব্যে ভারতের নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে একটা ‘নতজানু ব্যর্থ রাষ্ট্রে’ পরিণত করতে চায়।
‘এটা আজিজ-বেনজীরের আওয়ামী লীগ’
প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদ এবং সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদের প্রসঙ্গ টানেন।
তিনি বলেন, “গতকাল একটা সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো… সে এখন রাজনীতি থেকে দূরে আছে। সে তখন ছাত্রলীগের নেতা ছিল, পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগও করেছে, এমপিও হয়েছে। এখন প্রায় ১০-১২ বছর ধরে আর রাজনীতির কাছাকাছি নাই।
“আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি রাজনীতি করছ না কেন? সে বলেছে, ‘কোন রাজনীতি করব?’ আমি বললাম, আওয়ামী লীগ করবা। সে বলল, ‘আওয়ামী লীগ কি আওয়ামী লীগ আছে… এটা তো এখন আজিজ আর বেনজীরের আওয়ামী লীগ’। এই যে দেখুন, একজন আওয়ামী লীগের নেতা তার উপলব্ধিটা এই হয়েছে।”
আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিলেও এখন বদলে গেছে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যখনই আসে, তখনই তাদের কেমিস্ট্রিতে পরিবর্তন শুরু হয়। সেই পরিবর্তনটা হচ্ছে, তা্রা সর্বগ্রাসী হয়ে যাওয়া শুরু করে। শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই বলেছিলেন ওই সময়ে যে সবাই পায় সোনার খনি, আমি পাই চোরের খনি।
“অনেকে বলবে, এত উন্নয়ন করছে, মেগা প্রজেক্ট করছে, এত ফ্লাইওভারস সব কিছু; কিন্তু এই ফ্লাইওভার, মেগা প্রজেক্ট থেকে তারা কত মেগা পাচার করেছে? চুরি করেছে?”
তিনি বলেন, “আজকে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা একেবারেই শেষ পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে।
“বিচার নাই, কোথাও কোনও ব্যবসা করতে গেলে তার কোনও সুযোগ পাবেন না। টাকা ছাড়া, ঘুষ ছাড়া কেউ কথা বলে না। সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছে। আজকে গোটা পরিবার, দল এবং ব্যক্তিকে নিয়ে সে একটা পুরোপুরি ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে।”
এই অবস্থার পরিবর্তনে আন্দোলনে জোর দিয়ে ফখরুল বলেন, “যেমন করে হোক এই দানবকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এর সেই পথ একটাই, জনগণকে সংগঠিত করে আমাদেরকে আন্দোলন আরও তীব্র করতে হবে এবং সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পরাজিত করতে হবে।”
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহসভাপতি নাসির হায়দার, মামুনুর রশীদ খান, এস এম ফয়সাল, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, আনম খলিলুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুর রহমান টিপু এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জামসেদ আলী রিপন বক্তব্য রাখেন।