আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন আরেক দেশে বসে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি আশ্রয় করে বাঁচতে চান বলে মনে করেন বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
রবিবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়া পরিষদ আয়োজিত ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর : শহীদ রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই থেকে ছন্নছাড়া অবস্থায় থাকা দলটি রবিবার নূর হোসেন দিবসে কর্মসূচি ঘোষণা করে।
তবে আওয়ামী লীগকে এই ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হবে না বলে জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের ছবিসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
সভায় শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন বলেন, “হাসিনা কত নিষ্ঠুর, কত ছাত্র হত্যা করেছে। রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য কত নির্মম এরা ছিল। আল্লাহর গজব এদের উপর পড়েছে। এখন আরেক দেশে বসে ট্রাম্পের ছবি আশ্রয় করে উনি বাঁচতে চান।
“আসেন না বাংলাদেশে, এত বড় বড় কথা বলেন, বাংলাদেশে আসেন। এখন জিয়াউর রহমান নাই, তার দল বিএনপি এখনও আছে। তার বাংলাদেশের জাতীয়বাদ আছে। আমরা সবাই মিলে এই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব।”
ডিএমপির ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপে তার দলের নেতা-কর্মীদের দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ছবি ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ব্যবহার করে অবৈধ মিছিল সমাবেশের মাধ্যমে সেই ছবি ও প্ল্যাকার্ডসমূহ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সেগুলো ভাংচুর ও অবমাননার ফুটেজ সংগ্রহের নির্দেশনা দেন।”
তবে আওয়ামী লীগের ফেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে সরকারের বিরুদ্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা কল রেকর্ড দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ তোলা হয়।
সভায় বিএনপি নেতা হাফিজ বলেন, “বিগত ১৬ বছর আমাদের জন্য কঠিন সময় গিয়েছে। বাংলাদেশে আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করেছি। কিন্তু এরা যে কত নিষ্ঠুর, নির্মম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাদের আসল রূপটি প্রকাশ পেয়েছে। তবে বিগত ১৭ বছর ধরে বিএনপি এবং তার অংগসংগঠনগুলো যে কঠিন আন্দোলনে লিপ্ত ছিল। অনেকে শহীদ হয়েছে, শাহাদাৎ বরণ করেছে।”
আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে উপযুক্ত মর্যাদা দেয়নি মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “শহীদ রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের এক বিরল ব্যক্তিত্ব, কিংবদন্তির নাম। বাঙ্গালিদের সংকটের সময় ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। আর স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেন অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান।
“কিন্তু এই দুঃসময়ে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলেছেন যিনি, সৈনিকদের আহ্বান জানিয়েছেন, ছাত্রদের আহ্বান জানিয়েছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা করেছেন- সেই মহান নেতা জিয়াউর রহমানকে উপযুক্ত মর্যাদা কখনোই আওয়ামী লীগ দেয় নাই। তারা সেই আগের বর্ণিত স্বাধিকার আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকেই স্বাধীনতার আন্দোলন বলে চালিয়ে দিলেন।”
তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের নেতা বলে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু তিনি মনে প্রাণে ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক। তিনি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ছিলেন এই দেশের।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, “জিয়াউর রহমান তার জীবন দিয়ে, জীবন আচরণ দিয়ে প্রমাণ করেছেন একজন মুক্তিযোদ্ধার চরিত্র কেমন হওয়া উচিত। তিনি এমনই মুক্তিযোদ্ধা, যিনি ছয় বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করার পর দেখা গেল তার এক ইঞ্চি জমি নাই, ব্যাংকে কোনও টাকা নাই। এই ধরনের সৎ, নির্লোভ রাষ্ট্রনায়ক আর কোথায় পাবে বাংলাদেশ। এশিয়া মহাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে এমন ব্যক্তিত্ব পাওয়া বিরল।”
জিয়া পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক শিকদার, পরিষদের মহাসচিব ডক্টর ইন্তাজ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।