বিএনপি বরাবরই দাবি করে আসছিল, তাদের নেতা তারেক রহমানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় জড়িয়েছিল আওয়ামী লীগ। এখন হাই কোর্টের রায়ে খালাস পাওয়ার পর একে ‘ন্যায়বিচার’ বলেছেন দলটির আইনজীবী কায়সার কামাল।
আলোচিত এই মামলায় রবিবার হাই কোর্ট মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন এবং আসামিদের আপিলের রায়ের পর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রথমেই বলেন ‘শুকরিয়া’।
তারপর তিনি বলেন, “তারেক রহমান সাহেব আজকের এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আজকে প্রমাণিত হয়েছে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমান সাহেবকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছিল, সেই মামলায় আইগতভাবে মোকাবেলার মাধ্যমে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন।”
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। তাতে দলটির ২৪ জন নেতা, কর্মী, সমর্থক নিহত এবং বহু আহত হয়। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনায় বিএনপি আমলে প্রশ্নবিদ্ধ তদন্ত পেরিয়ে ২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২২ জনকে আসামি করে শুরু হয়েছিল বিচার। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর অধিকতর তদন্তে তারেকসহ ৩০ জনের নাম আসামির তালিকায় যোগ হয়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালেই ২০১৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ে ৪৯ আসামির সবাইকে সাজা দিয়েছিল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
সেই রায়ে বিএনপি আমলের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, বাকি ১১ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড।
রবিবার মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন এবং আসামিদের আপিলের রায় দেয় হাই কোর্ট। তাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে, বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দণ্ডিত ৪৯ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাটি গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাব বিস্তার করে আছে মন্তব্য করে কায়সার কামাল বলেন, “তারেক রহমান সম্পূর্ণভাবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রোপাগান্ডার শিকার হয়েছেন।
“আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আব্দুল কাহার আকন্দকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে তার চার্জশিটে তারেক রহমানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এ মামলায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।”
হাই কোর্টের রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, “আদালত বলেছেন, মুফতি মান্নানের (ফাঁসিতে ঝোলা জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান) দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে যে চার্জশিট দেওয়া হয়, সেই চার্জশিটটি আইন পরিপন্থি ছিল। ফৌজদারি কার্যবিধি এবং সাক্ষ্য আইনে এই চার্জশিটের আইনগত ভিত্তি নেই। এজন্য আসামিদের খালাস দিয়েছেন।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর পর এখনও সেখানেই রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দেশ দশকের শাসন অবসানের পর এখন তার দেশে ফেরার আলোচনা রয়েছে। তবে তিনি সব মামলা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরতে চান বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে রয়েছেন। সেখানে তার সঙ্গে তারেকের দেখা হওয়ার কথা।