ঢাকার সূত্রাপুর থানায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলায় খালাস পেয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ নয়জন।
সোমবার ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৪ এর বিচারক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হকের আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাসের রায় দেয়।
খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশিদ হাবিব, ইসহাক সরকার, কাজী আবুল বাশার, নজরুল ইসলাম খান টিপু, এম এ সৈয়দ মন্টু, আ. সাত্তার ও মো. সালাউদ্দিন।
এ্যানির আইনজীবী মহি উদ্দিন চৌধুরী এতথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায় থেকে আসামিদের খালাস দিয়েছেন। মামলা চলার মতো কোনও উপাদান না থাকায় এ পর্যায়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর ১৮ দলের ডাকা হরতাল চলাকালে ঢাকার সূত্রাপুর থানা এলাকায় একটি লেগুনায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুষ্কৃতকারীরা। ওই সময়ে গাড়িতে থাকা পাঁচজন দগ্ধ হন। ঘটনার পরদিন ১১ নভেম্বর সূত্রাপুর থানার তৎকালীন এসআই নয়ন ফারকুন বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন।
মামলায় বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২১ মে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আনোয়ার আলম আজাদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে এ মামলায় শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ ৯ জনের বিচার শুরু হয়।
‘দেশে নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে’
মামলায় খালাসের রায় শোনার পর ঢাকার নিম্ন আদালতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির (সিআরইউ) কার্যালয়ে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, “অত্যাচার, মানসিক চাপ দিয়ে আমাদের মতো রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানী করা ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের পরিকল্পিত কাজ। যেন আমরা তাদের দুর্নীতি ও দু:শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, প্রতিবাদ করতে না পারি। আমরা পালিয়ে বেরিয়েছি, বাসা-বাড়িতে থাকতে পারিনি। তবে আমরা মামলা, হামলার কাছে নত শিকার করিনি। আন্দোলন বেগমান করেছি। তা করতে গিয়ে বারবার গ্রেপ্তার, নির্যাতিত হয়েছি। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছে।”
আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে একটি কমিশন গড়ার প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করেছিলাম এই কমিশনের মাধ্যমে সারাদেশের মিথ্যা, সাজানো মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। এখন পর্যন্ত আমার মামলাগুলি যেহেতু প্রত্যাহার হয়নি, অনেকের মামলাও প্রত্যাহার হয়নি। এটা একটা কষ্টের জায়গা।”
জুলাই অন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকে এখনও জেলে আছে তাদের দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে তিনি এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং আইন উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, “এখন স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা করা খুব জরুরি। আমার বিশ্বাস দেশে নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে। সামনে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ আমাদের তৈরি করতে হবে।”
তার বক্তব্যে উঠে আসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে হওয়া বৈঠকের কথাও। এ্যানি বলেন, “তারেক রহমান কি কারণে, কোন প্রেক্ষাপটে দেশের বাইরে এটা অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বুঝতে হবে। সুতরাং প্রধান উপদেষ্টা বিদেশে গিয়েছেন। সেই সুযোগে তারেক রহমানের সাথে একটা বৈঠক হয়েছে, এটাকে ভিন্নখাতে দেখার কোনও সুযোগ নেই। সবাই মিলে একটা বৈঠক আর আলাদা বৈঠক, একই উদ্দেশ্য। সুতরাং এখানে দ্বিমত করার সুযোগ আছে বলে আমি দেখি না।”