বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা ভোটে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে দলটি।
তবে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে সিলেট বিভাগের ১১ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা। এদের বেশিরভাগই কোনও কমিটিতে না থাকলেও স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
আবার বিএনপির বিভিন্ন কমিটির যে কয়েকজন নেতা এবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা বলছেন, এ পর্যায়ে এসে আর পেছনে হাঁটার উপায় নেই। কারণ, ভোটাররাই চান তারা যেন নির্বাচনে থাকেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ধাপের ভোটে সিলেট বিভাগের ১১ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ৬১ জন। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত কোনও রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী না থাকায় এরা সবাই স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে যাচ্ছেন। প্রতিটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হয়েছেন। আছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারাও।
যদিও জামায়াতের একজন নেতা জানিয়েছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা এখন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন।
দিরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাপ মিয়া।
দলীয় সিদ্ধান্তের ফলে ভোট থেকে সরে দাঁড়াবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, স্থানীয় জনগণের চাপের কারণেই তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাই জনগণের স্বার্থেই শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকতে চান তিনি।
একই প্রশ্নের জবাবে শাল্লা উপজেলা বিএনপির সভাপতি গণেন্দ্র চন্দ্র সরকারও বললেন, ভোটে থাকার কথা।
নির্বাচনের প্রচারসহ অন্যান্য খাতে এরই মধ্যে তার যথেষ্ট ব্যয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের জাগরণ তৈরি হয়েছে। এখন সরে যাবার সুযোগ নেই।”
নিজেকে দলের পরীক্ষীত কর্মী হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই দল তার পরিস্থিতি বিবেচনা করবে। কারণ এখন আর সরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
শেষ মুহূর্তে দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘোষণা তাদের জন্য বিব্রতকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা পরিষদে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হচ্ছেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রাহেনা বেগম।
অন্য কোনও প্রার্থী না থাকায় মনোনয়নপত্র বাছাই শেষে তাকেই ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রাহেনা বর্তমানেও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন।
দল ভোটে নেই, তাহলে তিনি কেন প্রার্থী হলেন- প্রশ্নে রাহেনা বলেছেন, দলমত নির্বিশেষে সাধারণ ভোটারদের চাপে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের বেশ কয়েকটি উপজেলায় প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্থানীয় জামায়াতের নেতারা। এদের মধ্যে কয়েকজন বিভিন্ন কমিটিরও সদস্য।
তবে জুড়ী উপজেলা ভোটের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন।
দলটির আরেক নেতাও নিশ্চিত করেছেন যে, জামায়াত ইসলামীর নেতারা মনোনয়নপত্র জমা দিলেও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তা প্রত্যাহার করে নেবেন।
সিলেটের চার উপজেলায় ২৮ প্রার্থী
সিলেট সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সাত জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো. সুজাত আলী রফিক, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. এজাজুল হক, স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত মো. আহাদ মিয়া, মো. সামসুল ইসলাম, মিল্লাত আহমদ চৌধুরী, স্থানীয় জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচিত মো. ইসলাম উদ্দিন, ডা. মো.খলিলুর রহমান।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার প্রার্থীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদরুল ইসলাম, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মঈনুল ইসলাম, মোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম সাইস্তা, যুক্তরাজ্য শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহমদ, জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সভাপতি সোলাইমান হোসেন, নাট্য অভিনেতা সাহেদ মোশারফ কটাই মিয়া।
বিশ্বনাথ উপজেলায় চেয়ারম্যান মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আকদ্দুছ আলী, আইন সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমদ, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসেন, যুক্তরাজ্য যুবলীগের সহ-সভাপতি শমসাদুর রহমান রাহিন, পৌর আওয়ামী লীগ সদস্য এ আর চেরাগ আলী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী এনাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সোহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেবুল মিয়া, স্থানীয় বিএনপির নেতা হিসেবে পরিচিত সফিক উদ্দিন ও উপজেলা জামায়াতের আমির নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী।
গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুর কাদির শাফি, আওয়ামী লীগ নেতা শাহিদুর রহমান চৌধুরী ও যুবলীগ নেতা আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল।
হবিগঞ্জের দুই উপজেলায় ৯ প্রার্থী
আজমিরিগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত আমীর হুসেন মাস্টার, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হুসেন খান।
বানিয়াচং উপজেলার প্রার্থীরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মুর্তজা হাসান, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আলী আমজাদ তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আকবর হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. লোকমান মিয়া ও আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত ডা. মো. রেজাউল করিম।
মৌলভীবাজারের ৩ উপজেলায় প্রার্থী ১৫ জন
জুড়ী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সাত জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরা হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিংকু রঞ্জন দাশ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কিশোর রায় চৌধুরী মনি, পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. আলী হোসেন, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ও মো. কবির উদ্দিন।
বড়লেখা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়েব আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর, আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন ও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত মাসুম আহমদ হাসান।
কুলাউড়ায় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু, সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম, সহসভাপতি কামাল হাসান এবং বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান সাহেদ।
সুনামগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ৯ প্রার্থী
দিরাই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে যারা প্রার্থী হতে চান তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায়, বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিপা সিনহা, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাপ মিয়া ও জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আজাদুল ইসলাম রতন।
শাল্লা উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি গণেন্দ্র চন্দ্র সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অবনী মোহন দাস, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দিপু রঞ্জন দাস ও এস এম শামীম।
সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হালিম খান জানিয়েছেন, প্রথম ধাপে চার জেলার ১১ উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৮ মে। এবার অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি বলেও জানান তিনি।