শুধু বুদ্ধিজীবী আর এনজিওকর্মী নয়, বিপ্লবীদের দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারকে শক্তিশালী করতে যারা সহযোগিতা করেছে, তাদের সরিয়ে দিন।
রবিবার জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
মেজর হাফিজ বলেন, “শেখ হাসিনা সরকারকে যারা শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করেছে, উপদেষ্টা পরিষদে থাকলে তাদের সরিয়ে দেন, প্রশাসনে থাকলে তাদের সরিয়ে দেন। প্রকৃত বিপ্লবীদের নিয়ে সরকার গঠিত হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের প্রথমে আন্দোলন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মাসের মাঝামাঝিতে সেই আন্দোলন গড়ায় সহিংসতায়। গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ আরও অনেকেই আশ্রয় প্রার্থনা করে সেনানিবাসে। ১৮ আগস্ট সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে জীবন বিপন্ন হওয়ায় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও পুলিশসহ ৬২৬ জনকে সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যাকারী দুর্বৃত্তদের সেনানিবাসে জায়গা দিয়ে সেনাবাহিনী ভুল করেছে বলে মন্তব্য করেন মেজর হাফিজ। তার মতে, “সেনানিবাসে যাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে অবিলম্বে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হোক।”
সেনাপ্রধানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “সেনাবাহিনীর আচরণ এমন হওয়া উচিত যেন মনে না হয় যে তারা জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন। অবিলম্বে যে ৪৮৭ জন সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করুন। ভয়ের কী আছে? বিপ্লব সফল করতে হলে এ দুর্বৃত্তদের দমন করতে হবে। আমরা এই বিপ্লবের একটা সফল পরিণতি দেখতে চাই।”
মেজর হাফিজ বলেন, আয়নাঘরের নামে যারা মানুষ হত্যা করেছে, গুম করেছে তারা বহাল তবিয়তে আছে, প্রত্যেকটি জেলায় পুলিশ কর্মকর্তারা আগের মতোই আছেন। তারাই আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাংবাদিকদের নিয়ে আয়নাঘর নামে ওই ঘৃণ্য স্থান দেখানো উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আয়নাঘরের স্রষ্টাদের কিছু হচ্ছে না, শুধু একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০ দিন অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু এখনও মনে হয় না বিপ্লবীদের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” দ্রুত আয়নাঘরের কারিগরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
২১ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে গঠিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারে প্রয়োজনে আরও ছাত্রদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, “ছাত্ররা এই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছেন। বুদ্ধিজীবী যারা দুঃসময়ে নিশ্চুপ থেকে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন, আর বিজয়ের পরে এসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান, তাদের প্রয়োজন নেই। প্রকৃত বিপ্লবীদের নিয়ে সরকার গঠিত হোক।”
প্রতি বিপ্লবের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজকে সতর্ক থাকতে বলে তিনি বলেন, পাশের দেশে বসে শেখ হাসিনা অনেক ষড়যন্ত্র করবে, সুতরাং আপনারা সজাগ থাকবেন, সতর্ক থাকবেন। আপনারা রাজপথে থাকুন, যেকোনও ধরনের প্রতি বিপ্লবের চেষ্টা হলে সবাই মিলে তা ব্যর্থ করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় করেছে। তবে বিপ্লব কিন্তু শেষ হয়নি, বিপ্লব থমকে আছে।